ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
ইনকিলাব প্রতিবেদনে পুনঃঅনুসন্ধান বহু দুর্নীতির সরকারি অর্থের অপচয় ষ বিরোধী দমনে চলে স্বপ্রণোদিত অনুসন্ধান

ধাক্কায় নড়ে দুদক

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা

২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:২০ পিএম

ধাক্কায় নড়ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তফসিলভুক্ত অপরাধের অনুসন্ধান-তদন্তসহ মামুলি বিষয়গুলোও যেন ধাক্কা ছাড়া চলছে না। এই ‘ধাক্কা’ দিতে হচ্ছে উচ্চ আদালতকে। কখনওবা সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় ধাক্কায় কাজে নামছে প্রতিষ্ঠানটি। স্বীয় পূর্ণ স্বাধীনতা, আইনগত শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজন হচ্ছে এই ‘ধাক্কা’র। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ কমিশনের সদিচ্ছার ব্যাপার। যে কাজের উদ্দেশ্যে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেই কাজের জন্য আলাদা তাগিদ দিতে হবে কেন? আদালতকে কেন হস্তক্ষেপ করতে হবে? তাছাড়া আদালতের নির্দেশেই যদি সব কার্যক্রম চালাতে হবে তাহলে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিত হয়ে অনুসন্ধান-তদন্ত চলছে কেমন করে? এটি আইনের সুষম প্রয়োগ নয়। এটি অনেকটা আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজে দায় এড়ানোর চাতুর্য মাত্র। এই প্রবণতার অবসান হওয়া দরকার।

প্রতিবেদনের পর পুনঃঅনুসন্ধান : সরকার ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য-সহিষ্ণুতা’ নীতির অঙ্গীকার থেকে ইনকিলাব বিভিন্ন সেক্টরের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। প্রকাশিত এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দফতর স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত করেছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত বহু প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছে। চূড়ান্ত শুনানি শেষে মাইলফলক রায়ও দিয়েছেন কোনো কোনোটির। প্রকাশিত অনেক প্রতিবেদন ধরে দুদক অনুসন্ধানে নেমেছে। মামলা দায়ের করেছে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েও ইনিকলাব প্রতিবেদন প্রকাশেও পিছপা হয়নি। এমন প্রয়াসের কয়েকটি শিরোনাম ছিল, ‘২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি! দুর্নীতি দমনে দুদক স্টাইল’ (২ মার্চ-২০২১), দুদকে ‘অনুসন্ধান-বাণিজ্য’ : বহু রাঘব বোয়ালকে ছেড়ে দেন ইকবাল মাহমুদ’ (১৪ মার্চ-২০২১), দুদকের দায়মুক্তি ব্যাংক কর্মকর্তাসহ তিনজনকে : শত শত কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি’ (৪ আগস্ট-২০২২)। প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের পর প্রথমোক্ত ২টি প্রতিবেদন আমলে নিয়ে দুদক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ প্রেক্ষিতে দুদক আশরাফুল আলমের অনুসন্ধানে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। পুনরায় অনুসন্ধান শুরু করে। সর্বশেষ তথ্য মতে, উপ-পরিচালক মো: আনোয়ারুল হক এই পুনঃঅনুসন্ধান করছেন। একই আদালত পৃথক আদেশে সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের দায়িত্বকালীন শেষ ৫ মাসে নথিভুক্ত ৪০৮টি অনুসন্ধানের রেকর্ড তলব করলে দুদক পরপরই তা থেকে অন্তত ২শ’ নথি পুনঃঅনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোও পুনঃঅনুসন্ধানে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

শেষোক্ত ‘দুদকের দায়মুক্তি ব্যাংক কর্মকর্তাসহ তিনজনকে : শত শত কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি‘ শীর্ষক প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে সংক্ষুব্ধ জনৈক আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে রিট করেন। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ রেকর্ডপত্র তলব করেন। পুনঃঅনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। পরে প্রতিবেদনে উল্লেখিত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, শিল্প প্রতিষ্ঠান জজ ভুইয়া গ্রুপ এবং নোমান গ্রুপের বিরুদ্ধে পুনঃঅনুসন্ধানে নামে দুদক। এ প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে গত ৪ এপ্রিল ডলি কনস্ট্রাকশন লি:-এর মালিক, রূপালী ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ঋণের নামে সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলাটি তদন্ত করছেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক জাফর সাদেক শিবলী। এছাড়া জজ ভুইয়া গ্রুপের পুনঃঅনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ চলছে। নোমান গ্রুপের বিরুদ্ধে পুনঃঅনুসন্ধানেও চলছে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ। এটি অনুসন্ধান করছেন সহকারী পরিচালক মো: সহিদুর রহমান।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ‘সার্ভার না কিনেই শত কোটি টাকা খরচ! ডাক বিভাগে দুর্নীতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করে। তদন্তে প্রমাণিত হয়। বিভাগীয় মামলা হয়। মামলায় প্রকল্প পরিচালক ও ডাক অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র (এস এস ভদ্র)-এর কাছ রাজস্ব ক্ষতি বাবদ সরকারের ৯২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আদায়ের রায় হয়। এ অর্থ আদায়ে এখন পিডিআর অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ডাক বিভাগ। এছাড়া ইনকিলাবের আরেকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এস এস ভদ্র এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। উপ-পরিচালক ফারুক আহমেদ এটি অনুসন্ধান করছেন।

হাইকোর্টের নির্দেশে অর্ধশত অনুসন্ধান
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সত্ত্বেও অনুসন্ধানযোগ্য মনে করেনি দুদক। সংস্থার অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক) হয়তো অনুসন্ধান-অযোগ্য বিবেচনায় ফেলে দিয়েছে ওয়েস্টপেপার বাস্কেটে। এমন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা পেতে দুদক এখন তাকিয়ে থাকছে উচ্চ আদালতের দিকে।

গাজীপুরের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মেয়র থাকাকালে ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ দুর্নীতির সুর্দিষ্ট অভিযোগ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধানের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ প্রেক্ষিতে গাজীপুর সিটির পশ্চিম ভিরুলিয়ার ওসমান গনি সরকারের পুত্র মো. আব্দুর রহিম সরকার বাদী হয়ে চলতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ৬ মাসের মধ্যে অনুসন্ধান সম্পন্নের নির্দেশ দেন। সরকারদলীয় সাবেক এ মেয়রের বিরুদ্ধে বিশ্ব ইজতেমার খরচের ভাউচারে অনিয়ম, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে এস্টিমেট অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন না হওয়া, অনেক সড়কে এস্টিমেটের অতিরিক্ত সড়ক প্রশস্তকরণের নামে বাড়ি-ঘর ভাঙা, ভাঙা বাড়ি-ঘরের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে কি না ইত্যাদি বিষয় অনুসন্ধান করে দেখতে বলা হয়েছে। অনুসন্ধানে নেমে গাজীপুরের সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে ৭ হাজার ৪শ’ কোটি টাকার অনিয়মের তথ্য মিলেছে বলে জানায় দুদক। সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক টিমের সদস্য হিসেবে অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন।

সরকারদলীয় এমপি সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে সরকারি বাড়ি দখলের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক হাইকোটের নির্দেশনায়। এর আগে সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এর ভিত্তিতে অনুসন্ধান করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা চান এক আইনজীবী। এ বিষয়ে শুনানি করতে গেলে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ ওই আইনজীবীকে দুদকে লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে বলেন। বাড়ি নং-১০, গুলশান-২, ঢাকাস্থ সরকারি বাড়ি দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণকাজ শুরুর তথ্য উদ্ধৃত করে গত বছর ১১ আগস্ট তিনি অভিযোগ দাখিল করেন দুদকে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নিলে তিনি জনস্বার্থে রিট করতে বাধ্য হন। প্রাথমিক শুনানি শেষে গত বছর ১ নভেম্বর হাইকোর্ট রাজউক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদফতরের কাছ থেকে রেকর্ডপত্র তলব করেন। একই সঙ্গে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে নাÑ এই মর্মে রুল জারি করেন। পরে বিষয়টি অনুসন্ধানে ২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছেÑ মর্মে হাইকোর্টকে জানান দুদকের আইনজীবী।

সরকারদলীয় আরেক এমপি ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৯ বাড়ি ক্রয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদেশে বিপুল অবৈধ অর্থসম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানও দুদক শুরু করে হাইকোর্টের নির্দেশে। একই আইনজীবীর রিটের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ গত ২৭ ফেব্রুযারি এ নির্দেশ দেন। অনুসন্ধান শেষে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে দুদককে।

গত নভেম্বর মাসে ইসলামী ব্যাংক থেকে একটি গ্রুপ অব কোম্পানির ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ নেয়। হাইকোর্টের রিটের প্রেক্ষিতে এ ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক গ্রাহকের ১০৪ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ পেয়েছে দুদক হাইকোর্টের কাছ থেকে। ১৩ গ্রাহকের করা রিটের প্রেক্ষিতে গত ২৯ মার্চ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। এর আগে গ্রাহকরা অর্থ আত্মসাতের প্রমণাদি তুলে ধরে অনুসন্ধানের জন্য দুদকে আবেদন দিয়েছিলেন। দুদক সেটি আমলে নেয়নি। পরে তারা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। দুদকও বাধ্য হয় অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে। আগামী ৪ জুন রিটের পরবর্তী শুনানি।

সরকারি অর্থের অপচয়
হাইকোর্টের নির্দেশনায় দুদক অনুসন্ধানে বাধ্য হয়েছেÑ এমন ঘটনা বর্তমান কমিশনের জন্য যেন ডাল-ভাত। ব্যক্তিপর্যায়ের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিতেও কমিশন এখন কুণ্ঠিত। গাজীপুরের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ওয়াসার এমপি তাকসিম এ খানের দুর্নীতি, অর্থপাচার, দুবাইয়ে ৪৪৯ জন ব্যক্তির অর্থপাচার অভিযোগ, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সিকদার গ্রুপের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান, সরকারদলীয় সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটনের সার কেলেঙ্কারি, রাজউকে ৩০ হাজার নথি গায়েব, ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, বাফুফের সহ-সভাপতি ও সালাম মুর্শেদী এমপির সরকারি সম্পত্তি দখল, কক্সবাজার ভ্যাট অফিসারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক কোম্পানির দুর্নীতি, নার্স নিয়োগ-বদলি দুর্নীতির অনুসন্ধান, হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাত, বিমানের ১৭ সিবিএ নেতার দুর্নীতিসহ এমন অন্তত অর্ধশত দৃষ্টান্ত তুলে ধরা সম্ভব। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিগণ বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট অবধি না গেলে যেন দুদক অভিযোগগুলো আমলেই নিত না।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত অনুসন্ধান-তদন্ত
হাইকোর্টের নির্দেশ ব্যতীত দুদক স্বাভাবিক অনুসন্ধান-তদন্ত করে না। এটি হচ্ছে একটি বাস্তবতা। আবার এমনও দেখা যায়, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে হাইকোর্টের কোনো নির্দেশনার অপেক্ষা করেন না দুদক। দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদক ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান করছে দুদক। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে পাঠানো একটি প্রতিবেদন হচ্ছে এই অনুসন্ধানের ভিত্তি। বিষয়টির ওপর অনুসন্ধানে আদালত কোনো নির্দেশনা দেননি। দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে অনুসন্ধানটি চালাচ্ছে।

এর আগে গত বছর জুন মাসে ১১৬ জন দেশবরেণ্য আলেমের বিরুদ্ধেও দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছিল হাইকোর্টের কোনো ধরনের নির্দেশনা ছাড়াই। যদিও তীব্র প্রতিবাদের মুখে দুদক পরে এ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে। এছাড়া সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত অনেক ব্যক্তি এবং তাদের মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান, পুনঃঅনুসন্ধান এবং একই অনুসন্ধান ৩২ বছর ধরে পরিচালনার অভিযোগ রযেছে দুদকের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক হাইকোর্টের নির্দেশনা ছাড়া, স্বপ্রণোদিত হয়েই।

দুদকের কাজ কি?
বর্তমান কমিশনের এই প্রবণতা দুর্নীতিবাজদের সহায়ক বলে মন্তব্য করেছেন দুদকের সাবেক আইনজীবী ব্যারিস্টার আকবর আমীন বাবুল। তিনি বলেন, দুদকের মূল কাজ হচ্ছে তফসিলভুক্ত অপরাধের অনুসন্ধান, মামলা দায়ের এবং তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা। এটি যদি দুদক নিজ আইনের শক্তিতে সম্পাদন না করে তাহলে দুদকের কাজ কি? অনুসন্ধান-তদন্ত তো সংস্থাটির রুটিন ওয়ার্ক। এ জন্য আলাদা তাগিদ লাগবে কেন? ধাক্কা দিতে হবে কেন? কোর্টকে ইন্টারফেয়ার করতে হবে কেন? আমি মনে করি, এখানে দুদকের সদিচ্ছার অভাব প্রকট। তাই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রাখছে। এটি নিজের দায় এড়ানোর চাতুর্য ছাড়া কিছুই নয়। এতে দুদকের মামলার সংখ্যাই শুধু বাড়াচ্ছে। নিয়মিত মামলাই দুদক যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারে না। সেখানে ইচ্ছে করে মামলার প্রতিপক্ষ হওয়া কি ধরনের দূরদর্শিতা। এটি তো কেবল খরচ বাড়াচ্ছে। আইনজীবীদের ফি পরিশোধ করার মধ্য দিয়ে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। এই প্রবণতার অবসান হওয়া দরকার।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ড. ইউনূস-জো বাইডেন বৈঠক হবে নিউইয়র্কে

ড. ইউনূস-জো বাইডেন বৈঠক হবে নিউইয়র্কে

ফ্রিজের ভেতর থেকে মিলল তরুণীর ৩০ টুকরা লাশ

ফ্রিজের ভেতর থেকে মিলল তরুণীর ৩০ টুকরা লাশ

খলিস্তানপন্থীদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন কর্তারা, সফরের আগেই অস্বস্তিতে মোদি

খলিস্তানপন্থীদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন কর্তারা, সফরের আগেই অস্বস্তিতে মোদি

আওয়ামী দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি র আতুঁড়ঘর ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’

আওয়ামী দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি র আতুঁড়ঘর ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’

বড় ব্যবধানে হেরে এএফসি বাছাই শুরু যুবাদের

বড় ব্যবধানে হেরে এএফসি বাছাই শুরু যুবাদের

যাত্রাবাড়ীতে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

যাত্রাবাড়ীতে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

বজ্রপাতে এক দিনে ৯ জনের মৃত্যু

বজ্রপাতে এক দিনে ৯ জনের মৃত্যু

রফিকের রেকর্ড ভাঙলেন সাকিব

রফিকের রেকর্ড ভাঙলেন সাকিব

লেবাননে ভয়ঙ্কর পেজার বিস্ফোরণ, নেপথ্যে হাত ভারতীয় বংশোদ্ভূতের!

লেবাননে ভয়ঙ্কর পেজার বিস্ফোরণ, নেপথ্যে হাত ভারতীয় বংশোদ্ভূতের!

ছাগলনাইয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কিশোর নিহত,আহত   ১

ছাগলনাইয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কিশোর নিহত,আহত ১

তামিমকে টপকে শীর্ষে মুশফিক

তামিমকে টপকে শীর্ষে মুশফিক

শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি

শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান