ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করুন : ইনু
০২ মে ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
যার তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে নিবর্তনমূলক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ পাস হয়েছে; তিনিই (বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু) আইনটি সংশোধন করে গণমাধ্যমবান্ধব করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে হাসানুল হক ইনু সাইবার জগতের নিরাপত্তার বিধান করারও আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সকল প্রকার মানবাধিকারের চালিকা শক্তি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সম্পাদক পরিষদ। এ সময় সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। তিনি সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রক্রিয়াধীন সব আইন এখনই স্থগিতের দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে; এই অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। যতক্ষণ না এটি বন্ধ করতে পারছেন, সংশোধন না করতে পারছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মামলা দায়ের করবেন। অভিযোগ এলেই গ্রেপ্তার করে চালান দিয়ে কারাগারে পাঠাতে পারবেন না। জামিন পাওয়ার অধিকার থাকতে হবে। সবাই বলেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা দরকার। অবশ্যই পর্যালোচনা দরকার এবং সংশোধন দরকার। এটি ঝুলিয়ে রাখা ঠিক নয়।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আরো বলেন, সরকারকে বলবো অবিলম্বে আইনমন্ত্রীর কথা বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ সাপেক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোথায় কোথায় সংশোধন করতে সেগুলো সংশোধন করে দেন। সাইবার জগতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কী ধরনের আদালত ও আইনকানুন দরকার, সেটিও ঠিক করে বলে দেন। সুতরাং সাইবার জগতের নিরাপত্তার বিধানও করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার করে এটিকে গণমাধ্যমবান্ধব করেন।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক বলেন, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোনো দর-কষাকষি চলতে পারে না। আবার ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তা বিধানের জন্যও কোনো রকমের দর-কষাকষি চলতে পারে না। ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তার বিধানও করতে হবে, গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতাও নিরাপদ করতে হবে। একই সঙ্গে বাক্স্বাধীনতাও নিরাপদ করতে হবে। এই দুটো নিশ্চিত করার মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যতে সাইবার জগতে ভূমিকা রাখতে হবে। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমকে সাইবার জগতের সঙ্গে খাপ খাওয়া হবে।
আলোচনা সভায় স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যেসব আইন প্রক্রিয়াধীন আছে, সেই প্রক্রিয়া এখনই স্থগিত করার দাবি জানায় সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়। সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি তুলে ধরেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মাহফুজ আনাম বলেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্ত গণমাধ্যমের কণ্ঠস্বর রোধ করে এমন ৯টির মতো আইন বর্তমানে দেশে কার্যকর রয়েছে। এ ছাড়া, প্রস্তাবিত প্রেস কাউন্সিল আইনসহ এ ধরনের আরও ৪টি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সম্পাদক পরিষদ বারবার সরকারকে প্রস্তাবিত প্রেস কাউন্সিল আইনের খসড়া কপি শেয়ার করার আহ্বান জানালেও সরকার এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া দেয়নি। সরকারকে এ ধরনের ‘গোপন রাখার সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার এবং এ আইনের অধীনে গ্রেপ্তার সব সাংবাদিকের মুক্তি দিতে হবে। তিনি প্রত্যাশা করেন, সাংবাদিকদের জন্য দেশে যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেটি সরকার উদ্যোগী হয়ে যেন একবারেই মুছে ফেলে।
সম্পাদক পরিষদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে; ১.স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যেসব আইন প্রক্রিয়াধীন আছে, সেই প্রক্রিয়া এখনই স্থগিত করা। আইনগুলোর মধ্যে যেসব ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ব্যাহত করতে পারে, সেগুলো আইন থেকে বাদ দেওয়া। ২. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। আর যদি তা বাতিলে সরকারের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে এমন একটি ধারা যুক্ত করতে হবে, যেখানে বলা থাকবে, এই আইন গণমাধ্যম, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রযোজ্য নয়। সাংবাদিকতার কারণে আজ পর্যন্ত যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে হবে। ৩. যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেটি সরকার উদ্যোগী হয়ে যেন একেবারেই মুছে ফেলে। ৪. সাংবাদিকতার সুরক্ষার জন্য আইন হতে পারে, যা সংবিধানের চেতনার মধ্যে রয়েছে।
আলোচনা সভায় নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং স্বাধীন মতামত প্রকাশ ও সংবাদপত্রে দেশের অসঙ্গতি নিয়ে যারা লিখতে চান, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী