ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
স্বেচ্ছায় আবেদন করছে প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই বন্ধের মুখে ৩১৭টি প্রতিষ্ঠান : আরজেএসসি :: এভাবে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয় : ড. আহসান এইচ মনসুর

কোম্পানি বন্ধের সংখ্যা বাড়ছে

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

০২ মে ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

ব্রিটিশ-ডাচ্ কোম্পানি গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন, যা জিএসকে বাংলাদেশ নামে পরিচিত ছিল। কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিউটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করত। ১৯৭৬ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হয়। ২০২০ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশ থেকে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে চলে যায়। যদিও পরবর্তীতে আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার সকল শেয়ার কিনে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেয়। তবে এখন আর আগের সেই জৌলুস নেই।

ফ্রেঞ্চ ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট সানোফির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড। ১৯৫৮ সালে ‘মে অ্যান্ড বেকার’ নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে সানোফি। শুরু থেকেই বাংলাদেশে বেশ সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছিল সানোফি। ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে ছিল তাদের একটি অত্যাধুনিক ওষুধ তৈরির কারখানা। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ভ্যাকসিন, ইনসুলিন ও কেমোথেরাপির নানা ওষুধ বাংলাদেশে আমদানি করে সানোফি। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, টিউমার চিকিৎসা, চর্মরোগ ও সিএনএসে সানোফির ওষুধ বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। কোম্পানিটির বহুল প্রচলিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে লান্টাস, এপিড্রা, ফিমোক্সিল, ফ্লাজিল, এভিল ও এন্টারোজারমিন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

দীর্ঘ ছয় দশকের এ পথচলায় বেশ কয়েকবার নাম বদল করেছে বাংলাদেশে সানোফির এ অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। ২০০৪ সালে তিনটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অ্যাভেন্টিস বাংলাদেশ লিমিটেড, ফাইসন্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও হোয়েস্ট বাংলাদেশ ম্যারিয়ন রোজেল লিমিটেড একীভূত হয়ে সানোফি-অ্যাভেন্টিস বাংলাদেশ নাম নেয়। এরপর ২০১৩ সালে কোম্পানিটির নাম বদলে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড রাখা হয়।

ব্যবসা গুটিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ার ঘোষণা ২০১৯ সালের অক্টোবরেই দিয়েছিল ওষুধ খাতের বৈশ্বিক জায়ান্ট সানোফি। ওই সময় সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডে থাকা শেয়ার হস্তান্তরের জন্য ক্রেতা খোঁজার কথাও জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘোষণার ১৪ মাস পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেয়ার হস্তান্তরের জন্য বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠানটি। সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরে সানোফি বাংলাদেশের আয় হয়েছিল ৩০৩ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ২৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। কিন্তু তারপরও প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। যদিও সানোফি বাংলাদেশ এখন সিনোভিয়া ফার্মা নামে পরিচিত। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুত ও রফতানিকারক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি সানোফির বাংলাদেশ ইউনিট কিনে নেয়ার ছয় মাসের মাথায় এর নতুন নাম দিয়েছে সিনোভিয়া ফার্মা পিএলসি। কেন প্রতিষ্ঠান দু’টি চলে গেল যা এখনো সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। জিএসকে’র পক্ষ থেকে শুধু বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজার ব্যবসার জন্য উপযোগী নয়। পাশাপাশি দেশের ওষুধের বাজার অনৈতিক, দূষিত বা দুর্নীতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে। তাই তারা এ দেশে ওষুধের উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

দু’টি কোম্পানির কয়েকটি অতি মূল্যবান ওষুধ ছিল যেগুলো তারা বাজারজাত করলেও বাইরে রফতানি হতো। ফ্রান্সের বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি সানোফি-অ্যাভেন্টিস ও বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ কোম্পানি গ্লাক্সো স্মিথক্লাইনই শুধু বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়নি প্রতিদিনই কোনো কোনো বাংলাদেশি কোম্পানিও ব্যবসা বন্ধ বা অবসায়নের আবেদন করছে। আর অবসায়ন হলো এমন অবস্থা যখন কোনো কোম্পানি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে সম্পত্তি বিক্রি করতে চায়। এদিকে ২০২১ সালে অবসায়ন করা হয় সাফেকো লজিস্টিক অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডকে। অবসায়নকারী সিরাজুল ইসলাম জানান, বিদেশি এই প্রতিষ্ঠান নানান কারণে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে অক্ষম হওয়ায় স্বেচ্ছায় অবসায়নের আবেদন করে। স্বেচ্ছা অবসায়নের প্রক্রিয়াধীন থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ চীনা কোম্পানি ব্রিলিয়ান্স ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড; জাপানি কোম্পানি- মিক জাপান (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড; চীনা কোম্পানি পিএইচএফজেড কোম্পানি লিমিটেড; পাবলিক ক্লথিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড; পলি শিপিং কোম্পানি লিমিটেড এবং গ্লোবাল কমার্শিয়াল কোম্পানি লিমিটেড। ২০২১ সালে স্বেচ্ছায় অবসায়ন নেয়া এমন একটি কোম্পানি হলো রিটাচ ফুটওয়্যার কোম্পানি লিমিটেড। অবসায়ন নেয়ার জন্য কোম্পানির ব্যবসার মন্দা দশার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়াকে বিশেষজ্ঞরা স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন না। তাদের মতে, ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নজর দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর অবস্থা কেমন সে বিষয়ে সরকারের সঠিক নজরদারির অভাব, ছোট ব্যবসাগুলোর জন্য সীমিত সহায়তা এবং ব্যবসাকে সুরক্ষিত রাখার অভাবেই অবসায়নের প্রবণতা বাড়ছে। এ পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে উন্নয়নশীল দেশে অর্থনীতির মেরুদ- ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার সমর্থনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে আরো উন্নত সরকারি নজরদারি ও সহায়তার প্রতিও গুরুত্ব দেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম ও গবেষণাধর্মী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিজনেস রিভিউ’র গত বছরের ডিসেম্বরে এক গবেষণায় বলছে, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসার এই ক্ষতি সেভাবে পুষিয়ে উঠতে না পারার কারণ হলোÑ সরকারের সঠিক তদারকির অভাব, ব্যবসায়ীদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ঘাটতি ও সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসা রক্ষার তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকা। অথচ ভিন্ন প্রেক্ষাপটও পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপানের সরকার ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে সহায়তার পদক্ষেপ নিয়েছে। গত বছর প্রায় ১৫৩টি কোম্পানি অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু করলেও, সরকারের উদ্যোগে প্রায় ৯৮টি কোম্পানি আবার পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এ জন্য সরকার সহজ সুদে ঋণ প্রদান, কর-ভ্যাট মওকুফ ও ব্যবসা ভালোভাবে মনিটরিং করার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করে দেয়।

সূত্র মতে, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোও উল্লেখযোগ্য আর্থিক লোকসানের শিকার হয়েছে। ফলে গত তিন বছর ধরে অবসায়নের আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে, যাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান।

যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের (আরজেএসসি) তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মহামারির তা-বের পর থেকে প্রতি বছর দেশে কোম্পানি অবসায়নের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই অবসায়নের সম্মুখীন ৩১৭টি প্রতিষ্ঠান। গত অর্থবছরে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩০১টি। এর আগের অর্থবছরগুলোয় তুলনামূলক কম সংখ্যক কোম্পানি অবসায়িত হয়েছে: ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭৩টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯৩টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৪টি। এই সময়ে অবসায়ন হওয়া কোম্পানির সবগুলোই ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান তাদের সম্মিলিত বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বেশ কিছু বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিও রয়েছে অবসায়নের তালিকায়।

আরজেএসসি’র তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০৮টি অবসায়নের আবেদন আসে, এর মধ্যে ৮৪টির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসায়নের আবেদন ছিল ৭৯টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩৬টি আবেদন জমা পড়ে, ৯৩টিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়, এর মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসায়নের আবেদন ছিল ৯১টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০০টি আবেদনের মধ্যে ১৪৩টির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়, যার মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসায়নের আবেদন ছিল ১৭৩টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৬৫টি আবেদন জমা পড়ে, এর মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসায়নের আবেদন ছিল ৩০১টি। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৬৩টি আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসায়নের আবেদন ৩২৪টি। আরজেএসসি’র একটি সূত্র জানিয়েছে, আরো ৮১টি কোম্পানির স্বেচ্ছায় অবসায়নের প্রক্রিয়া চলমান। আর হাইকোর্টের আদেশে আরো ১১টির অবসায়ন প্রক্রিয়া চলমান। সুপ্রিম কোর্টে আরো ৬১ কোম্পানির অবসায়নের আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে শুধু স্বেচ্ছায় অবসায়নই নয়; আর্থিক সঙ্কটে ক্রেতা দেশগুলোয় সঙ্কুচিত হয়েছে চাহিদা। মিলছে না ক্রয়াদেশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা চালু রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি শিল্পোদ্যোক্তাদের। শিল্প খাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় গত তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) কারখানা চালুর চেয়ে বন্ধ হয়েছে বেশি। চলতি পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কারখানা বন্ধ হয়েছে ৯৭টি। একই সময়ে বন্ধ থেকে নতুন করে চালু হয়েছে ৮৭টি কারখানা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ভাষ্যমতে, করোনাকালীন দুর্বিপাকেও অনেকেই এমন ক্রয়াদেশ সঙ্কটে ভুগেছে। কিন্তু সে ভোগান্তি খুব বেশিদিনের ছিল না। একপর্যায়ে ক্রয়াদেশে বড় উল্লম্ফনও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু শিল্প খাতে এখন করোনার চেয়েও বড় আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। ক্রেতা দেশগুলোর অর্থনীতিতে এরই মধ্যে জেঁকে বসেছে মন্দার আশঙ্কা। ক্রয়াদেশ নেই রফতানিমুখী কারখানাগুলোয়। বিশেষ করে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা ছোট কারখানাগুলো এ মুহূর্তে বিপদে আছে সবচেয়ে বেশি।

গত দুই মাসে বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর একটি বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্য এমওএফ ফ্যাশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, কাজ না থাকায় বন্ধ হয়েছে কারখানাটি। একই কারণে বন্ধ হওয়া আরেকটি কারখানা রিম নিটিং লিমিটেড। গত তিন মাসে এমন ৯৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। যদিও এসব কারখানা এখনও অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়নি।

কাজের অভাবের পাশাপাশি অর্থায়নে সঙ্কটও কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তাদের বক্তব্য হলো ব্যাংকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পেয়ে কোনো কোনো উদ্যোক্তা তাদের কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। আবার যেসব কারখানা বন্ধ থেকে চালু হয়েছে, সেগুলো কতদিন চালু থাকবে, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, যে কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে সেগুলোর বড় অংশ কাজের অভাবেই বন্ধ হয়েছে। তবে ব্যাংকের চরম অসহযোগিতার কারণেও অনেক কারখানা কাজ থাকলেও বন্ধ করতে বাধ্য করেছেন মালিকরা। যেসব কারখানা চালু হয়েছে সেগুলো দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির পরই চালু হয়েছে। আবার চালু হওয়া কারখানার মধ্যে ঠিকা পদ্ধতিতে কাজ করা কারখানাও আছে। যেসব কারখানা থেকে তারা ঠিকা নিত, সেসব কারখানায় কাজ আসায় এসব ঠিকা কারখানাগুলো চালু হয়েছে। তবে চালু হওয়া মানেই সঙ্কট কেটে গেছে, এমনটা নয়। ২০২৩ সালজুড়ে এ সঙ্কট অব্যাহত থাকবে। তবে আশা করছি ২০২৪ সালে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। ওই পর্যন্ত কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখতে অব্যাহত ব্যাংকিং সহায়তা প্রয়োজন।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত তিন বছরে সারা বিশ্বের ব্যবসায়ীরা নানান ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও কিছু কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে বলে স্বীকার করেন বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসীম উদ্দিন। যদিও তিনি উল্লেখ করেন, গত পাঁচ বছরে যেসব কোম্পানি বন্ধ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বৃহৎ কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল না; ফলে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় অর্থনীতিতে সামান্যই প্রভাব পড়েছে। অবশ্য এফবিসিসিআই সভাপতি জসীম উদ্দিনের কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এভাবে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়। এতটা পরিমাণে বৃদ্ধি বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কোনো দেশেই হয়নি।

যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের রেজিস্ট্রার শেখ শোয়েবুল আলম গত পাঁচ অর্থবছর কোম্পানি অবসায়নের সংখ্যা তীব্র হারে বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বলেছেন, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রুগ্ন প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারেনি। তাই অবসায়নের পথ বেছে নিয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী