তল খুঁজে পাচ্ছে না দুদক : গালীবের কত সম্পদ
০৪ মে ২০২৩, ১০:২৬ পিএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
বাংলাদেশ সমবায় একাডেমি, কুমিল্লার অধ্যাপক (প্রশাসন) মুহাম্মদ গালীব খান। উপ-নিবন্ধক পদ মর্যাদায় বর্তমান কর্মস্থল এটি। স্ত্রী ইস্টার্ণ ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। সরকারি চাকরি এবং সীমিত বেতনের এই দম্পত্তির পদ-পদবি যা-ই হোক, সম্পদ যেন অতলস্পর্শী। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে মাত্র ৫ কোটি টাকার। কিন্তু তদন্তে নেমে দেখা যাচ্ছে, এটি তাদের মোট সম্পত্তির ২০ ভাগের এক ভাগও নয়। যা দেখে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভিড়মি খাওয়ার যোগাড়। প্রাপ্ত বিভিন্ন রেকর্ডপত্রের পরতে পরতে মিলছে তাদের অবৈধ সম্পদের অস্তিত্ব।
দুদক সূত্র জানায়, দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সমবায় অধিদফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ গালীব খান এবং তার স্ত্রী তানিয়া সুলতানা রাখির বিপুল সম্পদ। মামলা রুজুর সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন মামলা রুজুর অনুমোদন দেয়। গত বছর ১২ অক্টোবর সংস্থার উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে গালীব দম্পতির বিরুদ্ধে পৃথক ২টি মামলা করেন। এজাহারে গালীব খানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভ‚ত ২ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৩২ টাকার সম্পদ প্রাপ্তির তথ্য উল্লেখ করা হয়। স্ত্রী তানিয়া সুলতানা রাখির বিরুদ্ধে আনা হয় ২ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৫২০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। তবে মূল অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে পণ্য আমদানি-রফতানির আড়ালে বিপুল অর্থ পাচারের তথ্য থাকলেও দুদকের মামলায় সে’টি উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া বহু তথ্য গোপন করা হয়েছে এজাহারে। যা ক্রমে উদঘাটিত হচ্ছে তদন্তে। নামে-বেনামে প্লট, ফ্ল্যাট, নগদ অর্থ এবং ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের নামে স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ সম্পদই করেছেন স্ত্রী রাখির নামে। কিন্তু সীমিত বেতনের সরকারি চাকরি করে কেমন করে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হলেন উপ-নিবন্ধক গালীব খান?
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৭ বিসিএসের কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয়ে যোগদান করেন গালিব। টানা ৮ বছর একই দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন একই পদে থাকার কারণে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার লাইন-ঘাট ছিল তার নখদর্পণে। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থ তিনি আয় করেন বিভিন্ন কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিতর্কিত নির্বাচন ও অবৈধ কমিটি অনুমোদন, অডিট রিপোর্টে উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্যের ত্রæটি-বিচ্যুতি ধরে, ফাইল আটকে রেখে। এভাবে তিনি হাতিয়ে নেন অর্থ। এ অর্থে স্ত্রী তানিয়া সুলতানা রাখির নামে গড়ে তুলেছেন ইট ভাটা, ওষুধ কোম্পানী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। স্ত্রীর নামে ফরিদপুরে রয়েছে ৩০০ শতাংশ জমি। রাজধানীর খিলগাঁও এবং বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে প্লট, ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডে এবং খিলগাঁও এলাকায় ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং শেয়ারবাজারে রয়েছে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ। দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডে তানিয়া সুলতানার নামে কেনা ফ্ল্যাটটির মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৬৪ লাখ টাকা। অথচ ফ্ল্যাটের ইন্টেরিয়রই করা হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে। ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তিপত্র বলছে, এটির মূল্য ১ কোটি সাড়ে ৯ লাখ টাকা। দুদক অনুসন্ধান শুরুর পর নিজের ও স্ত্রী তানিয়া সুলতানার নামে যেসব বিও একাউন্ট রয়েছে সেগুলো থেকে টাকা তুলে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের নামে বিও একাউন্ট খুলে সেগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। এরকম প্রায় ১০-১১টি একাউন্টের মাধ্যমে তার প্রায় ১০ থেকে ১১ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ গোপন করা হয়েছে। দুদক গালিব ও তার স্ত্রীর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দিলে তারা নতুন ব্যাংক একাউন্ট খুলে ওই সব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এখনও লেনদেন অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা যায়। স্ত্রী তানিয়া সুলতানার নামে এজিএস ফার্মা অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস নামে একটি ওষুধ কোম্পানী রয়েছে।
অবৈধ কমিটির অনুমোদন দিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা : বিশ্বজুড়ে তখন করোনার প্রকোপ। সর্বত্র মৃত্যুর বিভীষিকা। সারা দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। এ অবস্থায় ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল বহুল বিতর্কিত ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির এডহক কমিটির একটি ‘সভা’ দেখান তিনি। কথিত ওই সভায় এই মর্মে সিদ্ধান্ত দেখানো হয় যে, নোটিশ জারির ১৫ দিনের মধ্যে যারা ৫০০ টাকা জমা দিতে পারবেন, তাদের সদস্যপদ হালনাগাদ করা হবে। পরবর্তীতে তাদের আর সময় বাড়ানো হবে না। যারা লকডাউনের কারণে সঞ্চয়ী আমানত জমা দিতে পারবেন না, তাদের বিষয়ে পর্ষদ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ডেসটিনি কো-অপারেটিভের এডহক কমিটির এমন কল্পিত সভায় সমিতির ৮ লাখ সদস্যের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত দেখানো হয়। পরে কথিত ‘নব নির্বিাচিত কমিটি’র কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে ডেসটিনির এডহক কমিটি। এভাবে অবাস্তব ‘নির্বাচন’ এবং ‘নির্বাচিত কমিটি’ দেখানো ডেসটিনির বিতর্কিত কমিটিকে বৈধতা দানের নেপথ্যে ছিলেন সমবায় অধিদফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ গালীব খান। এর বিনিময়ে ডেসটিনির কাছ থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে জানা যায়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ‘মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতি’। নিম্ন আয়ের অন্তত ১ হাজার মানুষ এই সমিতির সদস্য। কিন্তু নতুন করে সমিতির সদস্য অন্তর্ভুক্তি, নতুন কমিটি গঠন, সরকারি সম্পত্তি দখল করে খালের ওপর ভবন নির্মাণ, সমিতির বহুতল মার্কেটে দোকান বরাদ্দ, লটারিতে অনিয়মসহ বহু দুর্নীতির অভিযোগ ছিল সমিতিকে কুক্ষিগত করে রাখা প্রভাবশালী ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে। একেকটি সদস্যপদ বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায়। মমতা সমবায় সমিতির কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মোখলেছুর রহমান ও বদরুল আলমসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ছিল বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। সমবায় অধিদফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ গালীব খান এ অভিযোগ উপেক্ষা করে সমিতির নির্বাচন ও নতুন কমিটির অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নেন কয়েক কোটি টাকা। তবে দুদকের এজাহারে এসব উল্লেখ করা হয়নি। তবে তদন্তে ক্রমেই সেগুলো বেরিয়ে আসছে। মামলাটি তদন্ত করছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমিদা আক্তার।
শত অপরাধেও পান না শাস্তি : সমবায় অধিদফতরের মুহাম্মদ গালীব খান হচ্ছেন ‘ম্যানেজ মাস্টার’। এ কারণে একই স্থানে টানা ৮ বছর চাকরি করেন তিনি। তার উপরের পদের কর্মকর্তাদের নানাভাবে তুষ্ট করে তিনি একের পর এক বাগিয়ে নেন পদোন্নতি। সর্বশেষ তিনি ২০১৭ সালে ৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে পদোন্নতি পান তিনি। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে তার ‘মুরুব্বী’ হিসেবে রয়েছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। এ কারণে শত অপরাধেও তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। মমতা সমবায় সমিতির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণতো দূরে থাক, উল্টো ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে দেয়া হয় পদোন্নতি।
মুহাম্মদ গালীব খানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার বিষয়ে মুহাম্মদ গালীব খান ইনকিলাব প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। দুদক কিসের ভিত্তিতে এগুলো করছে, জানি না। তারা একই তথ্য কয়েক জায়গায় দেখিয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী
মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান
সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান
ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স