ধীরগতিতে অর্থের অপচয়
০৪ মে ২০২৩, ১০:২৭ পিএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
ও ব্যয় বেড়েছে তিনবার : উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না জনগণ
প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে দুই দফা। আর সময় বাড়ানো হয়েছে তিনবার। মেয়াদ আছে আর মাত্র দুই মাস। কিন্তু এখনও অনেক কাজ বাকি। ফলে চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি এবারও নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সংস্থার অন্যসব প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পেও শুধু অর্থ এবং সময় বাড়ছে, কিন্তু কাজে কোন গতি আসছে না।
বিগত ২০১৭ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রায় নয় কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ কাম নতুন সড়ক নির্মাণের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। তখন বলা হয়েছিল ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ হবে। তবে পাঁচ বছরেও কাজে কোন গতি আসেনি। তাতে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। আর দুই দফায় প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। এখন কাজের যে গতি তাতে আগামী বছরের জুনেও সড়ক নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
কর্ণফুলীর তীরবর্তী দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ থেকে শুরু করে কালুরঘাট ভারী শিল্পাঞ্চল হয়ে কালুরঘাট রেল সেতু পর্যন্ত এই সড়কটি নির্মাণের পাশাপাশি ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কথা ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মহানগরীর ওই অংশের সড়ক যোগাযোগ এবং সেই সাথে নদী তীরে উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন এবং পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। একই সাথে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মহানগরীর ওই এলাকা পানিবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা পাবে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক ধীরগতির কারণে এসব সম্ভাবনা কাজে আসছে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, দফায় দফায় উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর কৌশলে জনগণের অর্থ লুটের উৎসব চলছে। মেগা প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাটের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় হরিলুট অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, একটি প্রকল্প গ্রহণ করার আগে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করে বাজেট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এরপর দেখা যায় ঠিকাদার এবং প্রকল্প পরিচালকের যৌথ সিন্ডিকেট নানা কৌশলে প্রকল্পের সময় এবং ব্যয় বাড়িয়ে জনগণের অর্থের নয়ছয় করে। এর ফলে উন্নয়নের সুফল থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে। আর জনগণকে ভোগান্তি এবং খেসারত দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনরকম জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা না থাকায় এ ধরনের প্রবণতা বেড়েই চলেছে।
১৯৯৫ সালের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যানে কালুরঘাট থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কথা উল্লেখ ছিল। একই সাথে ২০০৬ সালে নগরীর অপ্রতুল অবকাঠামোগত অসুবিধা চিহ্নিত করতে সমীক্ষা পরিচালনা করে জাপান ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি)। সমীক্ষায় কর্ণফুলী নদীর তীরে দুটি রিং রোড ও ছয়টি শাখা রোড নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। মাস্টারপ্ল্যানের সাথে এই সমীক্ষার ফলাফলকে যুক্ত করে শহর রক্ষাবাঁধ কাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সিডিএ। শুধু চট্টগ্রাম মহানগর নয়, মহানগরের বাইরের লোকেরাও এই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবে।
এই প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪ ফুট উঁচু ও ৮০ ফুট প্রশস্ত চার লেনের সড়ক কাম বাঁধ এবং ১২টি খালের মুখে জোয়ার-ভাটা প্রতিরোধক রেগুলেটর (সøুইস গেট) ও পাম্পহাউজ স্থাপনের কথা রয়েছে। প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি মূলত শহর রক্ষাবাঁধ হওয়ার কথা। সেই সাথে পানিবদ্ধতা নিরসন ও পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য সুবিধা সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে সিডিএর। কিন্তু পাঁচ বছরের বেশি সময় পরেও প্রকল্প কাজ শেষ করা যায়নি।
সড়ক নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট করা হয়। কিন্তু এরপর কাজ থেমে যাওয়ায় বর্ষাকালে ভরাট মাটি নদীতে চলে যাচ্ছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগছে, আবার অর্থেরও অপচয় হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, মূলসড়কে মাটি ভরাটের কাজ এখনও বাকি। রেগুলেটর নির্মাণ কাজও শেষ হয়নি। মাত্র কিছু অংশে মাটি ভরাট শেষে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ চলছে সম্ভুক গতিতে। তবে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ দাবি করেন, নয় কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ইতোমধ্যে সাত কিলোমিটার অংশে মাটি ভরাট শেষ হয়েছে। দুই কিলোমিটারে সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে।
এছাড়া ১২টি খালের মধ্যে ১০টিতে রেগুলেটর বসানোর কাজ প্রায় শেষ। বাকি দুটোর কাজও সহসা শুরু হবে। প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো কাজ শেষ করা না গেলেও আগামী বছরের জুনের মধ্যে সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। করোনা মহামারি এবং ভ‚মি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ নানা কারণে প্রকল্পে সময় এবং ব্যয় দুটোই বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এখন আর কোন সমস্যা নেই, দ্রæত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
সিডিএর তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। মাঝে দু’দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সর্বশেষ আরো এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল দুই হাজার ২৭৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে কিছুটা বাড়িয়ে করা হয় দুই হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফা ৪৩৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট দুই হাজার ৭৪৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা করা হয়।
সিডিএর তরফে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর দক্ষিণাংশের তথা আগ্রাবাদ, নিউমার্কেটসহ ওই এলাকার যানবাহনগুলো নগরীর ভেতরের সড়কগুলো ব্যবহার না করে কর্ণফুলীর তীরবর্তী সড়ক দিয়ে দ্রæত সময়ের মধ্যে নগরীর উত্তর ও উত্তর-পূর্বদিকে চলাচল করতে পারবে। একইভাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যানবাহনগুলো নগরীর উত্তর ও উত্তর-পূর্বদিক এবং কাপ্তাই অভিমুখে দ্রæত সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবে। অন্যদিকে উত্তর, উত্তর-পূর্ব অংশ, কাপ্তাই থেকে আসা যানবাহনগুলো নগরীর প্রধান সড়কসমূহে বাইপাস করে কর্ণফুলী সেতু হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ বান্দরবান-কক্সবাজারে সহজে দ্রæত সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের কক্সবাজারগামী গাড়িগুলো ডিটি রোড-বায়েজিদ রোড এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে এই সড়ক দিয়ে কর্ণফুলী সেতু ব্যবহার করতে পারবে। একইভাবে ঢাকাগামী গাড়িগুলো মহানগরীতে প্রবেশ না করেই সহজে যাতায়াত করতে পারবে। এতে করে মূল সড়কে তথা নগরীতে যানবাহনের চাপ কমবে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু হয়ে বোয়ালখালী ও পটিয়ার সঙ্গে স্বল্প সময়ে যাতায়াতের সুবিধা পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে জোয়ার-ভাটা প্রতিরোধক রেগুলেটর নির্মাণের ফলে কর্ণপুলী নদীর জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রণ হবে। এতে নগরীর বাণিজ্যিক এবং শিল্প এলাকাগুলো পানিবদ্ধতা থেকেও অনেকাংশে রেহাই পাবে। বর্তমান কালুরঘাট সেতু থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত কোন বাঁধ ও সøুইসগেট না থাকায় অতি বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানি নগরীতে আটকা পড়ে। তাতে প্রতিবছর চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জে কোটি কোটি টাকার পণ্য ও মালামাল বিনষ্ট হয়। নদী তীরে সড়কটি চালু হলে ওই এলাকায় আবাসন ও পর্যটন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ আসবে। গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কল-কারখানা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী
মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান
সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান
ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স