হামলার শিকার অভিযোগকারীরা
০৬ মে ২০২৩, ১০:৪২ পিএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দুর্নীতির অভিযোগকারীরা হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। গ্রেফতার হচ্ছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মিথ্যা মামলায়। গ্রেফতারের পর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। কারাভোগও করছেন। দুদকে অভিযোগ দায়েরের মাশুল স্বরূপ মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে অনেকে পরিবার ছাড়া। অথচ এসব ঘটনার কোনো দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না দুদক। গ্রহণ করছে না সুরক্ষামূলক কোনো ব্যবস্থা। বরং অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতিবাজদের পক্ষে হামলা-মামলা ও নির্যাতনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিচ্ছেন দুদকেরই এক শ্রেণির কর্মকর্তা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনায় উদ্ঘাটিত হয়েছে এসব তথ্য।
অভিযোগ করে বিপদে মুক্তিযোদ্ধা খুরশেদ : বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার (এসপি) মো: নূরে আলম (বিপি নং-৭৭০৬১১৯৭৮৭) এবং তার ভাই ট্রাফিক সার্জেন্ট মো: সারে আলম (বিপি নং-৭৮০৩১০৮১৭)। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সোহাগপুরে। মরহুম আক্তারুজ্জামানের পুত্র। তারা কয়েক ভাই। পুলিশে চাকরির সুবাদে দরিদ্র পরিবার থেকে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া, অর্থ-বিত্তের পাহাড়, দুই ভাইয়ের প্রভাবে অন্য ভাইদের দাপট, তেল চুরি, ভূমি ও বালুদস্যুতা ইত্যাদি অপরাধমূলক কার্যক্রমে স্থানীয় অতিষ্ঠ। এ প্রেক্ষাপটে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মো: খুরশেদ আলম পুলিশ সুপার নূরে আলম এবং ট্রাফিক সার্জেন্ট সারে আলমের অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি দিয়ে দুদকে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। দুদকের সেগুনবাগিচাস্থ প্রধান কার্যালয়ে গত ১৮ এপ্রিল তিনি অভিযোগটি দায়ের করে। দায়েরকৃত অভিযোগটি ২০ এপ্রিলের মধ্যে পৌঁছে যায় পুলিশ কর্মকর্তা নূরে আলম-সারে আলমের হাতে। ওইদিন থেকে খুরশেদ আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি-ধামকি শুরু হয়। এক পর্যায়ে গত ১ মে খুরশেদ আলমের পরিবারের ওপর নূরে আলম-সারে আলমের অন্য ভাইয়েরা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলার চেষ্টা চালান। অবস্থা বেগতিক দেখে গত ২ মে মুক্তিযোদ্ধা মো: খুরশেদ আলম (৬৮) আশুগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি সোহাগপুর গামের নাকড়পাড়ার আক্তারুজ্জামানের ছেলে মো: সফিউল আলম ইমন (৪০), সুমন মিয়া (৪৩), খাইরুল আলম সাইমন (৩০), জালালউদ্দিনের ছেলে হানিফ মিয়া (৪৫), মুস্তফা কামাল (৩৮), গিয়াসউদ্দিনের ছেলে মো: রায়হান মিয়া (৪৪)-এর বিরুদ্ধে যেকোনো মুহূর্তে হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। সফিউল আলম ইমন, সুমন মিয়া এবং খাইরুল আলম সাইমন হচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা মো: নূরে আলম ও সারে আলমের ভাই। থানায় অভিযোগের পরও তিনি স্বীয় পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। বিস্ময়ে বিমূঢ় এই যোদ্ধা ভেবে পাচ্ছেন না, গোপনে দুদকের অভিযোগের কপি কি করে এতো দ্রুত নূরে আলম-সারে আলমের হস্তগত হলো!
চলতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি দুদকে দায়ের হয় আরেকটি অভিযোগ। বিষয়বস্তু : একটি শিল্প পরিবার শত শত কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করছে। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ। হাতিয়ে নেয়া ঋণের অর্থ পাচার করেছেন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগটি দায়ের করেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের অধিবাসী জুনায়েদুল হক, মো: ছারোয়ার এবং মো: জীমানউদ্দিন। অনুসন্ধান শুরুর আগেই অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। কারণ হচ্ছে, অভিযোগের কপি দ্রুত পৌঁছে যায় শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান-পরিচালকদের হাতে। সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগকারী তিনজনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা (মতিঝিল থানার মামলা নং-২৭, তারিখ-২৩/০৩/২০২৩ ইং) হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মো: রেজাউল করিম (৩৭) বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এর মধ্যে প্রধান আসামি কাজী মসিউর হোসেন শিল্প পরিবারটির সম্পত্তি হিসেবে বন্ধক দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছিলেন। এ প্রেক্ষিতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দিয়ে ঢাকার কেএম দাস লেনের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা। আদালতে তোলার আগেই রাতভর তার ওপর চলে নির্যাতন। তবে প্রাথমিকভাবেই মামলাটি হয়রানিমূলক ও মিথ্যা প্রতীয়মান হওয়ায় গ্রেফতারের ১৫ দিনের মাথায় জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। কারামুক্ত হলেও মসিউর এখন বয়ে বেড়াচ্ছেন নির্যাতনের ক্ষত। কাঁতরাচ্ছেন হাসপাতালের বিছানায়। এরই মধ্যে আরও মামলা হয়েছে বলেও জানতে পারেন তিনি। ডিজিটাল আইনের একই মামলার অন্য আসামিরা গ্রেফতার ও নির্যাতন আতঙ্কে এখন পরিবার ছাড়া। মুক্তিযোদ্ধা খুরশিদ আলম, জুনায়েদ, ছারোয়ার, জীমানউদ্দিনই নন। এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে অনেক। শুধুমাত্র দুদকে দুর্নীতির অভিযোগ দাখিলের মাশুল গুনছেন তারা।
অনুসন্ধানের আগেই কপি পৌঁছে যায় দুর্নীতিবাজের হাতে : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একাধিক কালো আইন, ব্যাংক লুটেরা, দুর্নীতিবাজ রাঘব বোয়ালদের দায়মুক্তি প্রদান-ইত্যাদি সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে অনেকে দায়ের করেন দুর্নীতির অভিযোগ। এসব অভিযোগের সবগুলোই হয়তো দুদকের তফসিলভুক্ত নয়। অভিযোগ যেমনই হোক- সেগুলো নিষ্পত্তিতে দুদকের নিজস্ব বিধিবিধান রয়েছে। অভিযোগ হিসেবে এন্ট্রি, যাচাই-বাছাই, কমিশনের অনুমোদন, প্রাথমিক অনুসন্ধানসহ রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়। এসব পর্যায় অতিক্রমের আগেই দাখিলকৃত অভিযোগের কপি পৌঁছে যাচ্ছে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের হাতে। বিনিময়ে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে মিলছে মোটা অঙ্কের নজরানা। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নগদ-নারায়ণের পাশাপাশি, মাসোহারা, স্থাপিত হচ্ছে স্থায়ী সম্পর্ক। প্রতিদানে মিলছে বিদেশ সফর, হজ্ব করিয়ে আনাসহ আত্মীয়-স্বজনের চাকরি, নানা রকম সুযোগ-সুবিধা। দুদকের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীয় উদ্যোগে সযতনে অভিযোগগুলো পৌঁছে দেন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে। এতে অভিযোগকারীর পরিণতি যা-ই হোক না কেন, নানাভাবে লাভবান হন দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ ধরনের এ ‘সেবা’ প্রদানের বিনিময়ে সংস্থাটির পদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেক কনস্টেবলও হয়েছেন বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক।
সুরক্ষিত ‘যাবাক’র অরক্ষিত ব্যবস্থাপনা : নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় জমা পড়া অভিযোগগুলো প্রথম যায় দুদকের চেয়ারম্যান দফতরে। সেগুলো ধরন অনুযায়ী মার্কিং হয়ে চলে যায় ‘দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ প্রাপ্তি’র সেলে। ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন এই সেলটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব এবং স্পর্শকাতরতা আরোপ করেন। দফতরটিকে আবদ্ধ করেন কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে। ওই সেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতিত দুদকের অন্যদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়। সংস্থার ‘গ্যারেজ বিল্ডিং’র প্রকোষ্ঠের ভেতর স্বচ্ছ মোটা গ্লাসের প্রাচীর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক ‘আয়নাঘর’। এর ভেতরই চলে দুর্নীতির অভিযোগ ‘যাচাই-বাছাই কমিটি’ বা ‘যাবাক’র কাজ। কমিটিতে কাজ করেছেনÑ এমন দুই কর্মী জানান, ‘যাবাক’ সেলটিকে আপাত: সুরক্ষিত মনে হলেও এটি কার্যত বজ্র আঁটুনি-ফসকা গেঁড়োর মতো। কমিটির সদস্যদের সুরক্ষা থাকলেও দুর্নীতির অভিযোগ বা তথ্য সুরক্ষার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। কমিশন প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরে তেমন কোনো মেকানিজমও প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। অভিযোগ বাছাই এবং বাছাই সেল পরিচালনায় একেক কমিশন একেক পদ্ধতি বাৎলে নিয়েছেন। এই সেলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, বাছাই কমিটির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর প্রযুক্তিগত নজরদারি নেই। ফলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের হাতেই দুর্নীতিবাজের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অভিযোগের অবিকল কপি। এই সেলে কর্মরত একজন কর্মকর্তা শুধু বাটন মোবাইল সেট ব্যবহার করেন। প্রায় প্রত্যেকের হাতে হাতে অ্যানড্রয়েড মোবাইল সেট। অ্যাপসের মাধ্যমে নিমিষেই ‘আউট’ করে দেয়া সম্ভব অভিযোগের কপি। কার্যসিদ্ধিও ক্লু-মুছে ফেলা সম্ভব মুহূর্তেই। যদিও বিশ্লেষকদের মতে, শুধুমাত্র যাবাকের সদস্য নন। দুদকের অন্যান্য শাখার কর্মীদের দ্বারাও পাচার হচ্ছে তথ্য। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের সবকর্মীর ওপর প্রযুক্তিগত নজরদারি প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কমিশন তথ্যপাচার রোধে সংবাদকর্মীদের প্রবেশাধিকারে নিয়ন্ত্রণ, প্রাত্যহিক যাতায়াতকারী সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি এবং তাদের উদ্দেশ্যমূলক অপদস্ত করা ছাড়া কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে অনাগ্রহী। অভ্যন্তরীণ একটি ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থাকলেও দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে প্রযুক্তিগত কোনো ব্যবস্থা কমিশনের হাতে নেই। তবে, এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যাবাক থেকে অভিযোগের কপি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে পৌঁছে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব বলে দাবি করেন মহাপরিচালক মো: জাকির হোসেন। তিনি বলেন,্ আমরা সাধ্যমতো ‘চেক’ দিচ্ছি। এখান থেকে কোনো তথ্য পাচার হওয়ার কানো সুযোগ নেই।
কিন্তু ‘সুযোগ’ যে রয়েছে সেটির প্রমাণ দিয়ে গেছেন অভিযোগ বাছাই কমিটির সাবেক কর্মকর্তা উপ-পরিচালক ইমরুল কায়েস। সুরক্ষিত এই ‘আয়নাঘরে’ বসেই যাবাক’র এই কর্মকর্তা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতির বহু অভিযোগ ‘গুম’ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, অ্যানড্রয়েড মোবাইলে সø্যাপ নিয়ে হোয়াটস অ্যাপে তিনি জমা পড়া অভিযোগটি দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দিতেন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে। বিনিময়ে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের নজরানা। কখনওবা বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা। অথচ ‘তথ্য পাচার’র অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ জুন তৎকালিন দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত ও পরে মামলা করা হয়েছিল। ইমরুল কায়েসের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। বরং জালিয়াতির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া গমনের ব্যর্থ চেষ্টার অভিযোগে মূল সার্ভিসে ফেরত পাঠানো হয় সসম্মানে। এ ঘটনাই পরবর্তীতে বাছাই পর্যায় থেকে অভিযোগ গায়েব করে দেয়া, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে অভিযোগের কপি তুলে দেয়া তথা তথ্য পাচারকে উৎসাহিত করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ কর্মকর্তার নূরে আলম-সারে আলমের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কপি তাদের হাতে চলে যাওয়ার ঘটনা এরই প্রকৃত উদাহরণ মাত্র।
জানা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগ বাছাইয়ে ইকবাল মাহমুদের সৃজনশীল পন্থা এখনও অক্ষত। এখানে এখন কার্য সম্পাদিত হয় ২টি স্তরে। একটি স্তর হচ্ছে ‘দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল’। এই সেলে রয়েছেন উপ-পরিচালক মো: মাহবুবুল আলম, সহকারী পরিচালক একেএম ফজলে হোসেনসহ ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। অভিযোগ তালিকাভুক্ত করে তারা ‘যাবাক’র মূল কমিটির টেবিলে উপস্থাপন করেন। দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক)। এই কমিটি তিন সদস্যের। মহাপরিচালক মো: জাকির হোসেনের নেতৃত্বে কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, পরিচালক উত্তম কুমার ম-ল এবং উপ-পরিচালক মো: হুমায়ুন কবির। এই কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন উত্তম কুমার ম-ল। অভিযোগ অনুসন্ধান যোগ্য কি নাÑ এই সিদ্ধান্ত নেয় এই কমিটি।
এই দায় কার? : দুদকে অভিযোগ দায়ের করে রোষাণলে শিকার হলেও দায় বহন করে না দুদক। যদিও রোষাণলে পড়ার কারণের অধিকাংশ দুদকেরই সৃষ্টি। সরকার ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন’ প্রণয়ন করলেও সেই আইনে সুরক্ষা পাচ্ছেন না তথ্য প্রকাশকারীরা। অথচ তথ্যদাতা ও প্রকাশকারীর পক্ষে একটি আইন রয়েছে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন-২০১১’র ৫(১) ধারা অনুযায়ী, কোনো তথ্য প্রকাশকারী ধারা ৪ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো সঠিক তথ্য প্রকাশ করলে উক্ত ব্যক্তির সম্মতি ব্যতিত তার পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। এই আইনের কারণেই দুর্নীতির তথ্য প্রদানকারীর নিরাপত্তার দায় দুদকের নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন সংস্থাটির সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) ও সিনিয়র জেলা জজ মো: মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগকারী ব্যক্তির নাম-পরিচয় সম্বলিত আবেদনের কপি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে পাঠানোটা গুরুতর অপরাধ। এ কারণে কে বা কারা এই অপকর্মটি করছেনÑ এটি আগে চিহ্নিত হওয়া জরুরি। তথ্য ফাঁস করে দেয়ার ফলে অভিযোগকারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। তিনি হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। প্রতিশোধমূলক মিথ্যা মামলায় জেল খাটছেন। রিমান্ডের নামে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অথচ তথ্য ফাঁসকারী দুদক কর্মী নিরাপদ থাকছেন। উপরন্তু ব্যক্তিগতভাবে অবৈধ লাভবান হচ্ছেন। এটির প্রতিকার থাকা দরকার।
দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে অভিযোগের বিষয়বস্তু কখনোই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিস্তারিত জানানো হয় না। অভিযোগের অনুলিপি পাওয়ার অধিকারও দুদক বিধিতে রাখা হয়নি। অনুসন্ধানের পর মামলা, মামলা দায়েরের পর তদন্ত, তদন্ত শেষে বিচারার্থে যখন আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়Ñ তখনই তিনি অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার আইনগত অধিকার পান। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, দুদকের অনুসন্ধান থেকে চার্জশিট দাখিল পর্যন্ত পুরো বিষয়টি গোপনীয়। গোপনীয় এই নথি যদি আগেভাগে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে তুলে দেয়া হয়Ñ সেই অপরাধতো আরও গুরুতর। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে অভিযোগের কপি পৌঁছে দিয়ে দুদক কর্মী উভয়বিদ অপরাধই করছেন। তাহলে এমন অপরাধের কোনো প্রতিকার থাকবে না, শাস্তি হবে না, দায়-দায়িত্ব কেউ নেবে নাÑ এমন তো হতে পারে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়
রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড
ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী