পাকিস্তানে তাকিয়ে দেখুন, শিখুন
১০ মে ২০২৩, ১১:০৩ পিএম | আপডেট: ১১ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বাংলা ব্যাকরণের ভাবসম্প্রসারণ ‘যেখানে দেখিবে ছাই/ উড়াইয়া দেখ তাই/ পাইলেও পাইতে পার/ অমূল্য রতন’ বাক্যের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। ‘পাকিস্তানে গণতন্ত্র নেই’ এবং পাকিস্তান নাম শুনলেই যাদের স্বভাবজাত অভ্যাস ‘তুচ্ছতাচ্ছিল্য, ছেই ছেই’ করা; ইমরান খান গ্রেফতারের পর তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো সে দেশে গণতন্ত্রের চর্চার কত প্রবল। বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিঞ্চুতা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতাদের একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কত প্রবল।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গ্রেফতারের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে অগ্নিগর্ভ পাকিস্তানের সচিত্র প্রতিবেদনগুলো দেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপির শেখার আছে অনেক কিছুই। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, প্রশাসনে কর্মরত আমলা, আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য যারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের খুশি করতে অন্যায্য কাজকর্ম করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন এবং প্রতিপক্ষ দলগুলোর নেতাকর্মীদের ঠেঙ্গাতে সদাব্যস্ত থাকেন তাদেরও শেখার রয়েছে। যে মন্ত্রী-এমপিদের খুশি করতে এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালানোই দায়িত্ব্ মনে করছেন; সামনে আপনারা বিপদে পড়লে ওই বর্তমানের ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিরা আপনাদের পাশে দাঁড়াবে না। পাকিস্তানের চলমান ঘটনাই তার জ্বলজ্ব্যান্ত প্রমাণ।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) দাবি ইমরান খানকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে একটি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছে। আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সহায়তায় ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে থেকে তাকে ৯ মে গ্রেফতার করা হয়। ইমরানকে গ্রেফতারের পর ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমির ফারুক নির্দেশনা দেন ‘১৫ মিনিটের মধ্যে ইসলামাবাদ পুলিশ প্রধান, স্বরাষ্ট্র সচিব, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেলকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে। নির্দেশ অমান্য করলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে তলব করবেন।’ বাংলাদেশে এমন নির্দেশনা কল্পনা করা যায়? সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পরিণতি দেশের মানুষ দেখেছে।
এখন সারা পাকিস্তান কার্যত; জ্বলছে। বিক্ষোভকারীরা রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতরের গেইট ভেঙ্গে ফেলেছে। আধা সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নি সংযোগ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের একাধিক এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছে। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু কোথাও দেখা যায়নি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ঠেকাতে লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন বা পুলিশ বাহিনী আইন শৃংখলা রক্ষার অজুহাতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তথা আল জাজিরার খবরে হলা হয়, বিক্ষোভকারীরা সেনা বাহিনীর স্থাপনা, আধা সামরিক বাহিনীর স্থাপনা ভাংচুর করছে, অগ্নি সংযোগ করছে। ইমরান সমর্থনদের বক্তব্য যে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা ভুয়া অভিযোগ। এ ছাড়া দেশের যে কোনো নাগরিককে গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ বাহিনী, অন্য কোনো বাহিনীর গ্রেফতার করার অধিকার নেই। পাকিস্তানের এই চলমান ঘটনায় কয়েকটি জিনিস পরিস্কার। প্রথমত, বিক্ষোভকারীরা সে দেশের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে না; আন্দোলন এবং জ্বালাও পোড়াও করছে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। বিক্ষোভ ঠেকাতে ১৪৪ জারী এবং সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। কিন্তু আন্দোলন ঠেকাতে বাংলাদেশের মতো ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের (নেওয়াজ) কর্মী-সমর্থকরা ‘শাস্তি সমাবেশ’ নাম দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় আন্দোনকারীদের পেটাচ্ছে না। রাজধানী ইসলামাবাদসহ শহরের মোড়ে মোড়ে লাঠিয়ার বাহিনী প্রহরায় বসায়নি। আইন শৃংখলা বাহিনী ইমরান খানের কর্মী সমর্থকদের ঠেঙ্গাতে যুদ্ধংদেহি অবস্থায় রাস্তায় নামেনি। শত শত বিক্ষোভকারীকে বিভৎস কায়দায় গ্রেফতার করেনি। আইন শৃংখলা বাহিনী আইনের মধ্যে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো বিভৎস গ্রেফতার দৃশ্য দেখা যায়নি! গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির একটি বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে দলের নয়াপল্টনস্থ কার্যালয় থেকে সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ শত শত নেতাকে ঠেঙ্গিয়ে গ্রেফতারের পর রশির সঙ্গে বেঁধে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সে ভয়াবহ দৃশ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেশ-বিদেশের মানুষ দেখেছেন। প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের সাইজ করতে বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হাজার হাজার মামলার নজীর পাকিস্তানে নেই; থাকলে ইমরানের দলের নেতারা সে অভিযোগ তুলতেন। ইমরান খান গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেছেন, ‘ইমরান খানের মতো নেতা থাকলে সে দেশে শত্রুর প্রয়োজন নেই’। সে দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিপক্ষ্যের প্রতি এই শালীনতা বিদ্যমান। অথচ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের যে ভাষায় গালিগালাজ করেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একই চিত্র বিরোধী দলের নেতাদেরও। তারাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ফলে পাকিস্তানের এই চিত্র দেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এবং প্রশাসনে কর্মরত আমলা ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের শেখার আছে অনেককিছু। এ ছাড়াও দিল্লির তাবেদারী করতে অভ্যস্ত যে সব বুদ্ধিজীবী-সুবিধাবাদী পাকিস্তান নাম শুনলেই তুচ্ছজ্ঞান করেন তাদেরও শিক্ষা নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যদি শিক্ষা গ্রহণ না করি তাহলে আমরা রয়ে যাবো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি’র মতোই। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়
রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড
ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী