খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে
১৬ মে ২০২৩, ১০:৪৯ পিএম | আপডেট: ১৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
খুলনা-মোংলা রেললাইন এ বছর জুলাই মাসে চালু হতে পারে। ৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনের ১১টি প্ল্যাটফর্মের কাজ শেষ হয়েছে। বাকী রয়েছে ১০ কিলোমিটার লেললাইন স্থাপনের কাজ। সার্বিকভাবে প্রকল্পটির ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। চার হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রেল সংযোগের মূল কাজ রূপসা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। রেললাইনটি চালু হলে মোংলা সমুদ্র বন্দরের সাথে সারাদেশের রেল নেটওয়ার্ক চালু হবে। একই সাথে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে ভারত, নেপাল ও ভুটান। দক্ষিণের জেলাগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। রেললাইনের জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেলসেতু নির্মাণসহ পুরো প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। নির্মাণকাজ শুরুর পর কয়েক দফায় এর সময় ও অর্থ বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে এর ব্যয় দাঁড়িয়েছে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। একাধিকবার উদ্বোধনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিন ভাগে বিভক্ত। এর একটি রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৯১ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। রূপসা নদীর ওপরে যুক্ত হচ্ছে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এছাড়া রয়েছে ১০৭টি ছোট সেতু ও ৯টি আন্ডারপাস। রেলপথের ৯১ কিলোমিটারের মধ্যে ৮১ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। বাকী ১০ কিলোমিটারের কাজ আগামী দু’ মাসের মধ্য শেষ হবে। রেলসেতুর ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণকাজ শেষ করেছে। স্টেশন, রেললাইন স্থাপনসহ বাকি কাজ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।
জানা গেছে, ৯১ কিলোমিটারের রেলপথে খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত মোট ৮টি স্টেশন থাকছে। সেগুলো হচ্ছে- খুলনার ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশন, আড়ংঘাটা রেলওয়ে স্টেশন, মোহম্মদনগর রেলওয়ে স্টেশন, বাগেরহাটের কাটাখালী রেলওয়ে স্টেশন, চুলকাটী রেলওয়ে স্টেশন, ভাগা রেলওয়ে স্টেশন, দিগরাজ রেলওয়ে স্টেশন এবং মোলা রেলওয়ে স্টেশন। দর্শনা জংশন-খুলনা লাইনের শাখা লাইন হিসেবে এই রেলপথটি তৈরি করা হচ্ছে।
প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনালের প্রজেক্ট ম্যানেজার বলরাম দে জানান, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী দু’তিন মাসের মধ্যে এটি চালু করা সম্ভব হবে।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, আগামী জুলাইয়ে পুরো রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের ব্যয় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৯৪৮ কোটি ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বাকি ১ হাজার ৩১২ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, খুলনা-মোংলা রেললাইন সংযুক্ত হলে মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়ার পাশাপাশি নিরাপদ ও আরামদায়ক রেলওয়ে পরিবহন সুবিধায় বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, পদ্মাসেতু চালুর পাশাপাশি মোংলা বন্দরে রেলপথ যুক্ত হলে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যাবে। একইসাথে খানজাহান আলী বিমানবন্দর এবং চাহিদামতো গ্যাস মিললে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবেন। খুলনার হিমায়িত মৎস্য, পাট ও পর্যটন শিল্প থেকে আয় আরও বাড়বে। দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল।
মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত হবে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের শিলিগুড়ির রেলযোগাযোগ। ফলে দেশের মধ্যেসহ কমখরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানের মালামাল পরিবহন সহজ হবে। এতে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কনটেইনার সার্ভিসও বাড়বে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, পদ্মাসেতু চালুর পাশাপাশি মোংলা বন্দর রেলপথে যুক্ত হলে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়বে। ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ব্যবধান অনেক কমবে। সময় ও খরচ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহারে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
প্রসঙ্গত, ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় খুলনা-মোংলা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো। আর ট্র্যাক লিংকিং এর করছে আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করায় ইমামকে চাকরি ছাড়তে বললেন মসজিদের সভাপতি!
সময় টিভির সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি: ওই দিনের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরলেন হাসনাত
চট্টগ্রামের প্রবীণ আলেম আল্লামা জালাল উদ্দীনের ইন্তেকাল
ইসকন নিয়ে পোস্ট: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
সংস্কার প্রশ্নে পিছপা হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না: পরিবেশ উপদেষ্টা
সদরপুরে জাসাসের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র্যালী ও শোভাযাত্রা
বেগমগঞ্জে যুবদল নেতা সুমনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে চরম অচল অবস্থা, সহিংস ঘটনার আশংকা
জকিগঞ্জে জামায়াতের সেক্রেটারিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
মেলবোর্নে স্মিথ-কামিন্সের অনন্য কীর্তি
মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
নেত্রকোনায় এ আর খান পাঠান স্মৃতি উন্মুক্ত ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন
এবার তিন অঙ্কে মুর্শিদা
আগুনে পুড়েছে সবচেয়ে বিতর্কিত ফাইলগুলো: রিজভী
সখিপুরে বনবিভাগের বিরুদ্ধে বিএনপি’র বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল
হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ
বিসিএফের কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনায় ফ্রান্স প্রবাসীদের প্রাণবন্ত মিলনমেলা
পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থগিত পরিচালক সমিতির নির্বাচন
সিলেটে আজহারীর তাফসির মাহফিল আলিয়া মাঠের পরিবর্তে এমসি কলেজ মাঠে