ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
বাজারে ধানের দাম কম ১ মণ ধানের উৎপাদন খরচ ১ হাজার ১৫০ টাকা কৃষক বিক্রি করছে ৯০০ টাকা হ বোরোর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে হ সরকারের ধান সংগ্রহ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি হ কম দামে ধান কিনে মজুদদার ও মিলাররা মজুদ করছে

হতাশ কৃষক

Daily Inqilab রফিক মুহাম্মদ

২০ মে ২০২৩, ১০:৪৪ পিএম | আপডেট: ২১ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। বাজারে ধানের দাম কম। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে ধান বিক্রি করে কৃষক এখন হতাশ। সরকার ৩০ টাকা কেজি দরে ধান কেনার ঘোষণা দিলেও তা এখনো শুরু হয়নি। আর এ সুযোগে কম দামে ধান কিনে মিলার ও একশ্রেণির মজুদদার মজুদ করছে।
এবারের বোরো মৌসুম ছিল কৃষকদের জন্য সর্বোচ্চ খরচের বছর। খরার কারণে জমিতে সেচ দিতে হয়েছে বেশি। সেচযন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম রেকর্ড পর্যায়ে। একই সঙ্গে বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। অথচ সীমাহীন খরচের এ মৌসুম শেষে ধানের কাক্সিক্ষত দাম পাচ্ছেন না কৃষক। উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে তাদের দাবি।

সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এবছর প্রতি মণ বোরো ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকার বেশি। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে এলাকাভেদে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা (মোটা ধান) মণ দরে। কাঁচা ধানের দাম আরও কম। সরু জাতের ধানের দাম সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকা। এ দামে ধান বিক্রি করে মণ প্রতি দেড় থেকে ২০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে কৃষকের দাবি।

কৃষকরা বলছেন, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনের খরচ ছিল ১০ থেকে ১১ হাজার টাকার মধ্যে, যা এবছর সেচ, সার, কীটনাশক ও মজুরি বাড়ায় দাঁড়িয়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এর মধ্যে ডিজেলের দাম বাড়ায় সেচ খরচ বেড়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। সারের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া বীজ ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে চড়া দামে। ধান পরিচর্যা, কাটা শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই ও পরিবহনসহ অন্য সব ধরনের খরচও বাড়তি। কয়েক দফায় সবকিছুর দাম বাড়লেও ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। ধান বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচের চেয়ে দেড় থেকে ২০০ টাকা কম দামে।

নওগাঁ সদর দুবলহাটি ইউনিয়নের প্রতাপদহ গ্রামের কৃষক এনামুল ইনকিলাবকে বলেন, এবার সার ও সেচের খরচ বেশি হওয়ায় ধার করে ধান চাষ করতে হয়েছে। বিঘাপ্রতি ২ হাজার টাকা সারের জন্য ও সেচে আরও হাজার টাকা বেশি লেগেছে। ধান কাটতে একজন শ্রমিককে মজুরি দিতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। সঙ্গে তিনবেলা খাবার। এখন ধান বিক্রি করে সেটা পরিশোধ হচ্ছে না। এ এলাকায় প্রতি মণ মোটা ধান (কাঁচা) বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। এত কম দামে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। লোকসান হচ্ছে। পাওনাদারের তাগাদায় বাধ্য হয়ে কম দামে বাজারে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।

নেত্রকোণা জেলার সদর উপজেলার চরপাড়া গ্রামের ফজলুল হক বলেন, আমার জমিতে এবার বোরোর ফলনে বাম্পার হয়েছে। আশপাশের সবার জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। তারপরেও কারো মনে এখন আনন্দ নেই। কারণ ধান ফলাতে যে খরচ হয়েছে সে তুলনায় বর্তমানে বাজারে দাম অনেক কম। লোকসানে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কৃষক ধানের দাম কিছুটা কম পেলেও এবছর সারাদেশে ব্যাপক ফলন হয়েছে। তাতে তাদের অনেকটা পোষাচ্ছে। তারপরও ধানের যে দাম সেটা দিয়ে খরচ উঠছে না এমনটা নয়। তবে দাম আরও বেশি হলে কৃষকরা চাষে বেশি আগ্রহী হতো।
ধানের দাম কম হওয়ায় সারাদেশে কৃষকের হতাশা ও হাহাকার নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট তুলে ধরা হলো।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, ধানের অঞ্চল হিসাবে খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চল অঞ্চলে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ধানের আবাদ হয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে এবার বোরো ধান আবাদ করতে হয়েছে। টানা দাবাদাহের কারণে এবার সেচও দিতে হয়েছে বেশি। ফলে আবাদ করতে খরচের পরিমাণও বেড়েছে। ডিজেল, সার এসবের পাশাপাশি ধানকাটা শ্রমিকের মজুরিও অনেক বেড়েছে। সেই সাথে রয়েছে শ্রমিক সংকটও। তারপরও হাটে-বাজারে নতুন ধান আসা শুরু করেছে। তবে কাক্সিক্ষত দাম মিলছে না। রাজশাহী রাজা বাড়ি হাট ও নওহাটা হাটে খবর নিয়ে জানা যায়, ২৮ ধান মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা ও জিরা সাইল ১৩০০ টাকা দরে। অথচ এসব ধানের উৎপাদন খরচ হয়ে ১৩০০ টাকারও বেশি।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের (রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ) ৪টি জেলায় মোট ৩ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানকাটা হতে বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১২’শ থেকে সাড়ে ১২’শ টাকা। অন্যদিকে সরাসরি কৃষকদের কাছে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। কৃষকদের মাঝে লটারির মাধ্যমে বাছাই করা হয় কৃষক। কৃষকরা সরকারি খাদ্য গুদামে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ১২’শ টাকা মণ দরে।

নওগাঁ থেকে এমদাদুল হক সুমন জানান, এ জেলা ধান-চাল উৎপাদনে বরাবরই এগিয়ে। চলতি বোরো মৌসুমের ধান কেটে ঘরে তুলছে চাষিরা। গেল বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু মিলছে না চাষির কাক্সিক্ষত দাম। ধান বিক্রি করে বাজার থেকে ফিরে চাষিদের মুখে নেই হাসি।

এবার ২০ থেকে ২৮ মণ পর্যন্ত বাম্পার ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। সদ্য কাটা-মাড়াই করা প্রতি মণ ধানের দাম পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ দাম যথেষ্ট নয় বলে দাবি করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা। প্রতি মণ ধানের দাম কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ টাকা সরকারিভাবে নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

কৃষকদের তথ্য মতে, প্রতি বিঘা বোরো আবাদে এ বছর জমি চাষ বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা, ধান রোপণ বাবদ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সেচ খরচ বাবদ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ৩৫ থেকে ৪৫ কেজি ইউরিয়া সার বাবদ ৭৭০ টাকা থেকে ৯৯০ টাকা, ২০ কেজি ডিএপি সার বাবদ ৩২০ টাকা, ১৫ কেজি এমওপি সার বাবদ ২২৫ টাকা, ৩ থেকে ৪ ডোজ কীটনাশক প্রয়োগ বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা, দেড় থেকে ২ কেজি জিংক বাবদ ৩৭৫ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, ১ কেজি বোরন বাবদ ১৫০ টাকা, ধান কাটা বাবদ ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা, বোঙ্গা মেশিনে মাড়াই বাবদ ৬০০ টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতি বিঘা হিসেবে মোট খরচের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৪০ টাকা থেকে ১৫ হাজার ৩৮৫ টাকা।

আর ৯০ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে গড়ে এক হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে হাটগুলোয় প্রতি মণ জিরা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। তবে কৃষকের দাবি এই দামে আমাদের পোষাবে না। এখন সর্বনিম্ন জিরা জাতের ধান এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি করতে হবে।

সদ্য কাটা-মাড়াই করা ধান হাটে বিক্রির পর খুশি মনে কৃষকের বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও এ বছর ধানের বাজার দরে কৃষকের মুখে মলিনতার ছাপ দেখা যাচ্ছে। গত ২ বছরে দফায় দফায় সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে ধান উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিদের। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে যারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। টানা সাড়ে ৩ মাস হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে প্রতি বিঘায় জমির মালিককে বুঝে দিতে হচ্ছে ফলনের অর্ধেক ফসল। বর্তমান ধানের বাজার দর অনুযায়ী বর্গাচাষিদের জন্য যা পুরোটাই লোকসান।

নওগাঁ সদর দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক শামিম হোসেন বলেন, নিজের জমিজমা বলতে কিছুই নেই। তাই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ১ বিঘায় ৮ হাজার টাকা খরচ করে কাটারি জাতের ধানের আবাদ করেছিলাম। কমপক্ষে ২৫ মণ ফলন পাব বলে আশা করছি। ফসলের অর্ধেক দিতে হবে জমির মালিককে। এমনিতেই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ফসল আবাদ করেছি। এরমধ্যে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে গেলে আরও বেশি ঋণগ্রস্ত হয়ে পরব। তাই নিজের ধান নিজেই কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বঙ্গা মেশিনে মাড়াই করতে দিতে হবে ৩০ কেজি ধান। সবমিলিয়ে ধানের বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী আমার পুরোটাই লোকসান।

নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত হাওরে শত ভাগ এবং উঁচু এলাকায় ৮৮ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৫/৭ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।

জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নেত্রকোনার কৃষকরা তাদের জমিতে ব্রি-২৮ ধান ও ব্রি-২৯ ধান চাষ করেছিল। বেশ কিছু জমির ব্রি-২৮ ধান ছিটা হওয়ায় এবং শিলাবৃষ্টির কারণে ধান জমিতে ঝড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষকের কপাল পুড়েছে। লাভের আশায় তারা এখন লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। এতে সারা বছরের খোরাকী এবং ঋণ পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। তবে ব্রি-২৯ ধানের ফলন ভালো হয়েছে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলায় চলতি ইরি-বোরো মওসুমে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪ শত ৭০ হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬ শত ৯০ হেক্টর জমি।

খালিয়াজুরী উপজেলার বোয়ালী নূরপুর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, আমি প্রায় ৩৫ কাটা জমিতে ব্রি-২৮ ধান ও ৬০ কাটা জমিতে ব্রি-২৯ ধান রোপণ করেছিলাম। ব্রি-২৮ ধান ছিটা হয়েছে। তবে ব্রি-২৯ ধানের ফলন ভাল হয়েছে। তবে ভালো দাম না পাওয়ায় আমরা হতাশ। দাদনের টাকা পরিশোধ করার পর আমার হাতে আর তেমন কিছু নেই। কেন্দুয়া উপজেলার দুল্লী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বলেন, উজান এলাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে সাড়ে ৭ শত থেকে ৮ শত টাকা মণ ধরে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় তার জন্য সরকার খাদ্য বিভাগকে প্রতি কেজি চাল ৪৪ টাকা এবং প্রতি কেজি ধান ৩০ টাকা করে ক্রয়ের নির্দেশনা দিয়েছে। আশা করি কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাবে।

সুনামগঞ্জ থেকে মো. হাসান চৌধুরী জানান, জেলার ১২ উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার সরকার ধানের দাম কিছু বৃদ্ধি করলেও স্থানীয় হাট-বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পায়নি। ধানের দাম বেশি হলেও উৎপাদন খরচ উঠছে না কৃষকের। উৎপাদিত ধানের প্রকৃত মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। তাই বাধ্য হয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে ফড়িয়াদের কাছে কষ্টের ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। পরে ফড়িয়ারা এই ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করে বিরাট মুনাফা করবে। অথচ কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য সরকারি খাদ্য গুদামে ‘ধান-চল ক্রয় কর্মসূচি’ শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল। সুনামগঞ্জ জেলার সরকারি খাদ্য গুদামে ধান কেনার গতি কম হওয়ায় কৃষকরা অনেকটাই বিপাকে। অনেকেই তাদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে কমমূল্যে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা খাদ্য গোদাম কর্মকর্তা বেনু গোপাল দাস বললেন, জেলায় ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান কেনা হবে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাসহ পাঁচ উপজেলায় অনলাইনে এবং ছয় উপজেলায় সনাতন পদ্ধতিতেই ধান ক্রয় করা হবে। জেলার ৭টি মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কেনা হবে ৯ হাজার ৬৭৬ টন। ১৩টি খাদ্য গুদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান ৩০ টাকা কেজি ও চাল ৪৪ টাকা কেজিতে কেনা হচ্ছে।
কৃষক মো. সাদির হোসেন বলেন, যত দ্রুত সরকারি খাদ্য গোদাম ধান কিনবে, ধানের দামও তত স্থানীয় হাট- বাজারে বাড়তে থাকবে। তবে খাদ্য গুদামে ধান দিতে গিয়ে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। এছাড়া ও রয়েছে অনলাইনে আবেদনের ঝামেলা। অনেক কৃষক নিবন্ধন করার পর পাসওয়ার্ড নম্বর ও মোবাইল নম্বর ভুলে যান। আবার বিড়ম্বনায় পড়েন নেটওয়ার্ক ঝামেলায়। তাই ১২০০ টাকার ধান ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা মণে বিক্রি করছেন তারা।

নাটোর থেকে মো. আজিজুল হক টুকু জানান, এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে শ্রমিকের মজুরী বেশি হওয়ায় কৃষকেরা পড়েছেন বিপাকে। একদিকে উৎপাদন খরচ বেশি আবার অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সরকার নির্ধারিত দাম না পাওয়ায় হতাশ হচ্ছেন তারা।

চলনবিলের কৃষক মুনছুর রহমান ও চৌগ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ সহ অন্যান্য কৃষকরা জানান, এলাকাভেদে চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘায় ২৪ থেকে ২৭ মণ ধান উৎপাদন হলেও সেচ খরচ, সার খরচ ও শ্রমিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। সরকার চলতি বছরের ৭ মে থেকে ৩০ টাকা কেজিতে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ায় খুশি তারা। তবে ব্যবসায়ীদের কারণে বর্তমানে নাটোরে বাজারে প্রতিমণ ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন না বলে দাবি করেন তারা। সরকার নির্ধারিত দাম বাজারে পাওয়া গেলে লাভের মুখ দেখবেন বলে জানান কৃষকরা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা