একমুখী অভিনব ট্রানজিট
২১ মে ২০২৩, ১১:২৫ পিএম | আপডেট: ২২ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
চুক্তিটির প্রথমেই বলা আছেÑ ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফরম ইন্ডিয়া’। বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি অনুসারে ‘ভারত থেকে ভারতের পণ্যÑ যাচ্ছেও ভারতেই’। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট এবং করিডোর সুবিধায় যাবে। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত এ চুক্তিটি এখন পূর্ণাঙ্গ কার্যকর হয়েছে। পুরোদমে খুলে গেছে ট্রানজিট-করিডোরের দুয়ার। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ‘কানেকটিভিটি’ কিংবা ’ট্রান্সশিপমেন্টে’র নামে ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্থনীতিবিদ, কনেকটিভিটি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী মহলের মতে, এটি একতরফা ও একমুখী ট্রানজিট-করিডোর ব্যবস্থা। যা অভিনব বটে। পৃথিবীর কোনও দেশে এমনটি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
‘ভারতকে পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিট ও বাংলাদেশের প্রাপ্তি’ শীর্ষক চলতি বছরের গত ৫ মে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে’তে সিনিয়র সাংবাদিক আসজাদুল কিবরিয়া একটি সংবাদভাষ্যে লিখেছেনÑ ‘সাধারণত প্রথম দেশ দ্বিতীয় দেশের ভূখ- ব্যবহার করে যখন তৃতীয় দেশের জন্য পণ্য বহন করে নিয়ে যায়, তখন তা প্রথম দেশটির জন্য দ্বিতীয় দেশ থেকে পাওয়া ট্রানজিট সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন- বাংলাদেশি ট্রাক ভারত হয়ে নেপালে গেলে তা হবে বাংলাদেশকে দেয়া ভারতের ট্রানজিট সুবিধা। এ বিবেচনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতের ত্রিপুরায় সরাসরি সড়কপথে কিংবা ভারতের মেঘালয়ে নৌপথে পণ্য পরিবহনকেও এক ধরনের ট্রানজিট সুবিধা হিসেবে ধরা যায়। যদিও এ নিয়ে দ্বিমত আছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতি-বিধি অনুসারে তৃতীয় দেশে পণ্য নিয়ে যেতে প্রথম দেশকে দ্বিতীয় দেশ ট্রানজিট সুবিধা দিতে বাধ্য হলেও; একই দেশের এক স্থান থেকে আরেক স্থানের জন্য এই সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য নয়। তবে দেশ দুটি পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এই ট্রানজিট চালু করতে কোন বাধা নেই। দেখা যাচ্ছে, এ ব্যবস্থায় ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট কিছুটা মিশ্রিত হয়ে গেছে’।
ভারতের মেগা আবদার পূরণ : বর্তমানে অভিনব এই ট্রানজিট ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কোন পণ্য ভারতে যাচ্ছে না। চুক্তিতেও তার বন্দোবস্ত নেই। তাছাড়া ভারতের ভূমি ব্যবহার করে ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট করে বাংলাদেশের কোন পণ্যসামগ্রী প্রতিবেশী অপর দুই দেশ নেপাল ও ভুটানে রফতানি কিংবা বাংলাদেশে আমদানির কোন সুযোগ এই চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত নেই।
ভারতের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধাদানের ব্যাপারে ২০১০ সালে বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ বৈঠকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ধাপে ধাপে এবং জেট গতিতে তার বাস্তবায়ন কাঠামো, রূপরেখা অগ্রসর হয়। ২০২০ সালের জুলাইয়ে ’এমভি সেঁজুতি’ নামে জাহাজযোগে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট পণ্যসামগ্রী পরিবহনের ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক ট্রানজিট কার্যক্রম শুরু হয়। এভাবে কয়েক দফা সফল ট্রায়াল হয় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে। এরপর গত ২৪ এপ্রিল এ বিষয়ে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে একটি আদেশ (এসআরও) জারি করেছে। অবশেষে ১৩ বছর পর বাংলাদেশের কাছে ভারতের ‘মেগা আবদার’ এবং বহু আলোচিত-সমালোচিত প্রাপ্তিটি তারা মুঠোভরে পেয়ে গেলো।
ভারতকে ট্রানজিট-করিডোর সুবিধাদান প্রসঙ্গে প্রবীণ ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মু. সিকান্দার খান বলেন, বন্ধুত্ব হতে হবে পরস্পরের চাওয়া-পাওয়া, দেয়া-নেয়ায় সমতার ভিত্তিতে। অসম দেয়া-নেয়ায় সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব হয় না। ওয়ান-টু-ওয়ান যাচাই হতে হবে। আমরা কী দিয়েছি তারা কী দিলো এর হিসাব প্রয়োজন। দিবো আর নিবো, মিলবো আর মিলাবোÑ এটাই হবে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কের ভিত্তি।
ভারতকে দেয়া ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট থেকে বাংলাদেশের ‘প্রাপ্তির খাতা’ কী- এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলে’র (৫ মে, ২০২৩ ইং) সংবাদভাষ্যে আসজাদুল কিবরিয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভারতকে দেয়া ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিষয়টি সেভাবে দৃশ্যমান নয়। সে কারণেই একটা ধারণা বেশ জোরালো যে প্রায় একতরফাভাবে এসব সুবিধা দেয়া হয়েছে। ভারতের সাথে বিদ্যমান বড় বাণিজ্য ঘাটতি (যা এক হাজার ১৭০ কোটি ডলার), তিস্তাসহ ৫৩টি অভিন্ন নদীর পানি বন্টন বিষয়ে সুরাহা না হওয়া, সীমান্তে হত্যা শূণ্যতে নামাতে না পারাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সাথে সন্তোষজনক সমঝোতা না হওয়ায় ট্রানজিট সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীও বেড়েছে’। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন