ব্যবসায়ীর লাভ লোকসান চাষির
২১ মে ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম | আপডেট: ২২ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
ব্যাবসায়ীদের কাছে আবারও সরকারকে হার মানতে হলো। কৃষক যাতে তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পায় সে জন্য সরকার এ পণ্যের আমদানি বন্ধ রেখে ছিল। তাতে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে ছিল। এবার পেঁয়াজের ভালো ফলনের পর কৃষক ভালো দামও পাচ্ছিল। তবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজির কাছে সরকারকে পরাস্ত হতে হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অবশেষে সরকারকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্য নিয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে যে ভাবে নতিস্বীকার করেছে, ঠিক সেরকমই পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রেও সরকারকে সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও পেঁয়াজ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
পেঁয়াজ চাষিদের দাবি, ভালো বীজ, সার, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ সব মিলিয়ে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকা হয়। এরপর এটা সংরক্ষণের জন্য খরচ আরও কিছুটা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পারলে লোকসানে পড়তে হয়। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এ পর্যন্ত বাজারে দামও ছিল ভালো। তবে ভারত থেকে কম দামে পেঁয়াজ আমদানি করা হলে বাজারে দাম অনেক কমে যাবে। পেঁয়াজ তখন ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি হয়ে যেতে পারে। আর তা হলে কৃষকরা লোকসানে পড়বে।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া বিলের পেঁয়াজ চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বীজের দাম, সারের দাম এবং শ্রমিকের মজুরি সব কিছুই অনেক বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কমপক্ষে ৩০ টাকা খরচ হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে পেঁয়াজের দাম এতদিন ভালো ছিল। এখন যদি পেঁয়াজ আমদানি করা হয় তাহলে বাজার আবার কমে যাবে। পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকায় নেমে আসতে পারে। আর তা হলে আমাদের লোকসানে পড়তে হবে।
পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদানের ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামীমা আকতার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
এদিকে দেশের বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে নতুন করে আমদানির খবরে ভোমরা বন্দরের ওপারে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে পেঁয়াজ বোঝাই অর্ধশত ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। অনুমতি মিললেই যে কোনো সময় ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক দেশে ঢুকবে। আর তা হলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম হু হু করে নেমে আসবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৬ লাখ টন। এবছর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৪ লাখ টন। অর্থাৎ দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি আড়াই থেকে তিন লাখ টন। এ অবস্থায় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত কৃষকের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেবে।
দেশে প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল এ সময়ে কৃষকের পেঁয়াজ ঘরে ওঠে। এবারের উৎপাদন ও মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিবেদন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাব তুলে ধরে বলা হয়েছে, চলতি বছর দেশে ৩৬ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২ লাখ ৭৯ হাজার টন বেশি। পচে যাওয়া এবং ওজন কমে যাওয়ায় মোট উৎপাদনের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পেঁয়াজ বিক্রয়যোগ্য থাকে। সে হিসেবে প্রায় ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন ধরা হয়েছে। ডিএই বলছে, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে এখন পেঁয়াজ আছে কমপক্ষে ২৫ লাখ টন। যে মজুদ আছে, তা দিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত চাহিদা মিটবে। এ অবস্থায় সঠিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে আমাদানির সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কৃষকের জন্য হতাশাজনক।
এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের যে উৎপাদন খরচ সে হিসাবে এর দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি হলে ভালো হয়। এ দামে কৃষক লাভবান হবে। যদি পেঁয়াজ আমদানি করা হয় তাহলে এর দাম কমে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় নেমে আসবে। এ দামে বিক্রি করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর কৃষক লোকসানে পড়লে উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হতে পারে। এর ফলে আমরা যে পেঁয়াজ উৎপাদনে সয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার টার্গেট নিয়েছি তা ব্যাহত হবে। তারপরও ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সীমিত পরিসরে আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কৃষক যাতে দাম ভালো পান, সে জন্য আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। ভালো দাম পেয়ে কৃষক পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হওয়ায় গত অর্থবছরে এক লাফে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে আট লাখ টন। এবছরও আড়াই লাখ টন উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বিশ্ব রেকর্ড করে ৩০০ টাকা কেজি হয়েছিল। পেঁয়াজ কিনতে দেশবাসীর তখন নাভিশ্বাস অবস্থা ছিল। ভারত তখন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশে এ পণ্যটির দাম এমন বেড়েছিল। এ অবস্থা থেকে দেশের কৃষক অক্লান্ত পরিশ্রম করে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। সেই কৃষক যদি লোকসানে পড়ে পেঁয়াজ চাষে বিমুখ হয়ে পড়ে তাহলে ভবিষ্যতে এর ফলাফল আরও খারাপ হবে।
পেঁয়াজ আমদানি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদেরকে লাভবান করবে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা কেজি রাখতে পারলে ভোক্তারা খুব একটা আপত্তি করবে না। আর এ দামে কৃষকরাও লাভবান হবে। তাই সরকারের উচিত যথাযথ তদারকির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। আবার আমদানির নামে মুদ্রা পাচারেরও শঙ্কা থাকে। এ বিষয়েও সরকারের আর্থিক ও বাণিজ্যিক গোয়েন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ডিবির সাবেক ডিসি ৭ দিনের রিমান্ডে দলীয় বিবেচনায় শুদ্ধাচার পুরস্কার পান মশিউর
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সংঘর্ষ: তিন জেলার মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
গরমে যেন শেষ সিলেট !
গল টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা
প্রেতাত্মাদের উসকে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন হাসিনা
ময়মনসিংহে অস্ত্রসহ ডাকাত দলের ছয় সদস্য গ্রেপ্তার
খাগড়াছড়িতে হামলা, প্রতিবাদে ইবির আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নানকে জেলহাজতে প্রেরণ
কালীগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন আটক
হাবিপ্রবিতে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে ভিসি নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
ফ্যাসিবাদী দোসর মিডিয়া লীগে সংস্কার জরুরী
যৌথবাহিনীর হাতে সিলেট আটক বিপুল পরিমান ভারতীয় পণ্য
পরাজিত শক্তি এবং সুবিধাবাদীরা সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে লিপ্ত- বিমানবন্দরে সংবর্ধনা কালে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মুশাহীদ
নোয়াখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ‘জুলুম-নির্যাতন করে আস্তাকুঁড়ে চলে গেছেন কাদের মির্জা’
পুলিশের সামনে হামলা বিএনপি ও যুবদল নেতা আহত
গাজীপুরে ছুটির দিনেও ২৫ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা জাতিসংঘে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা
তিন জেলাসহ সাত বিভাগের ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ
তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আইএসপিআর এর বিবৃতি
দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ