দশ হাজার যখন ২০ টাকা!
২৩ মে ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
২০১০ সাল পর্যন্ত ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট ফি ছিল প্রতি কন্টেইনার ১০ হাজার টাকা হারে। ২০২০ সালের জুলাইয়ে এসে ভারতের পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল রানে) ট্রানজিট (ট্রান্সশিপমেন্ট) পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি সেঁজুতি’র পণ্য বাবদ ট্রান্সশিপমেন্ট ফি আদায় করা হয় ৫শ’ টাকা। সম্প্রতি এনবিআর-এর মাধ্যমে সরকারি আদেশে ট্রান্সশিপমেন্ট ফি কার্যকর হয়েছে টন প্রতি ২০ টাকা হারে! সড়কপথে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানযোগে প্রতি টন আগে (২০১০ সাল) ছিল এক হাজার টাকা। ২০২০ সালে তা কমিয়ে ধার্য করা হয় ২০ টাকা। এখন সেই ফি কন্টেইনার বা লরি প্রতি কি.মি. হিসাবে ৮৫ পয়সা।
পুলিশ এসকর্ট ফি ৮৫ টাকা, প্রতি কন্টেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা। প্রতি চালান প্রক্রিয়াকরণ বা প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, সিকিউরিটি চার্জ একশ’ টাকা, প্রশাসনিক ফি একশ’ টাকা ধার্য হয়েছে। আদেশে প্রতিটি কন্টেইনার বা গাড়ির জন্য প্রতি কি.মি. এসকর্ট (পাহারা) ফি ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। (আগে প্রতি চালানে এসকর্ট ফি ছিল ৫০ টাকা)। পনের শতাংশ ভ্যাটসহ এই ফি-চার্জ দিতে হবে।
গত ২৪ এপ্রিল সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে একটি আদেশ জারি করেছে। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট (ট্রানজিট-করিডোর) সুবিধা কীভাবে কার্যকর হবে, করিডোর বা ট্রানজিটের পণ্য পরিবহনের রুটগুলো চিহ্নিত করাসহ গাইডলাইন দেয়া হয়। আদেশে ট্রানজিট অপারেটর নিয়োগ, বন্দরে জাহাজ ভিড়া, ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্টের ঘোষণা, শুল্কায়ন, পণ্যের কায়িক পরীক্ষা, ট্রানজিট সময়কাল ইত্যাদি প্রক্রিয়ার কথা রয়েছে। বন্দরে কন্টেইনার পণ্যের প্রচলিত ফ্রি টাইম (বাড়তি মাশুল ছাড়া) যেখানে সর্বোচ্চ চার দিন, সেখানে ভারতের ট্রানজিট পণ্যের ক্ষেত্রে তার সুযোগ দেয়া হয়েছে ২৮ দিন।
আদেশের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ভারতের ট্রানজিট পণ্যসামগ্রী পরিবহন ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা হলো। ‘ভারত থেকে ভারতের পণ্য ভারতে’ পরিবহন বাবদ নামেমাত্র কিছু ট্রানজিট ফি-মাশুল পাবে বাংলাদেশ। যা বলা হচ্ছে, সব মিলিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি! এর বিনিময়ে ভারতের ট্রানজিট পণ্য নিরাপদে পৌঁছে দেবে।
‘সমানে-সমানে’ এবং ডলারে হলেই যথাযথ হতো : সমুদ্রবদর ও ট্রান্সশিপমেন্ট বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম ট্রান্সশিপমেন্টের ফি মাশুল প্রসঙ্গে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশের জন্য যে চার্জ নির্ধারণ হয়েছে সেটি আরো বেশি হতে পারতো। ইতোমধ্যেই ডলারের বিপরীতে টাকার অবচয়ন হয়েছে ২৫ শতাংশ। ভারতের সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট (ট্রানজিট) ফি এবং অন্যান্য চার্জ-মাশুল টাকায় নির্ধারণ না করে ডলারে হওয়াই সমীচীন ছিল। তাহলে সময়ে-সময়ে টাকার অবচয়ন হলেও সমস্যা ছিল না।
আমাদের ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ (সমানে-সমান) লাভের সুযোগ ছিল। কেননা বন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার ফলে ভারতের যদি একশ’ ডলার বেঁচে যায়, আমাদের সেখানে পঞ্চাশ ডলার দেয়া হোক, ওরা পঞ্চাশ রাখুক। কিন্তু ভারত যদি ৮০ বা ৮৫ ডলারই নিয়ে যায়, আমাদেরকে ১৫ বা ২০ সুবিধা দেয়, সেটা আমি সমতা ও ন্যায্য মনে করি না।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলামের অভিমত, ট্রান্সশিপমেন্ট (ট্রানজিট) ফি, চার্জ-মাশুল পুনর্মূল্যায়ণ করার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার হবে, বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহার হবে, রেলপথ ব্যবহার হবে। এসব অবকাঠামোর যে অবচয় সেটি অনেক বেড়ে যাবে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করলে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আরো বেশি হওয়া উচিৎ বলেই আমি মনে করি। গত দেড়-দুই বছরে টাকার যে ২৫ শতাংশ অবচয়ন হয়েছে, সেখানে টাকার অঙ্কে যদি ফি-মাশুল ধার্য হয় তাহলে আমরা আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম পাচ্ছি।
ভবিষ্যতেও টাকা আরো বেশি অবচয়নের শিকার হবে। টাকায় হওয়াতে অবচয়নের সুবিধাটা ভারতই পেয়ে যাচ্ছে। কাজেই ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিটের চুক্তিতে ফি-চার্জ যেগুলো টাকায় উল্লেখ হয়েছে, তা ডলারে নির্ধারণ করলেই যথাযথ হতো।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনের অধীনে ২০১০ সালে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ‘ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিট পণ্যের কাস্টমস ব্যবস্থাপনা বিধিমালা- ২০১০’ শীর্ষক ওই বিধিমালায় ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এতে সড়ক বা রেলপথে প্রতি ইউনিট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট ফি প্রযোজ্য।
সড়কপথে কাভার্ডভ্যান বা ট্রাকে পণ্য পরিবহনে প্রতিটন ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট ফি ধার্য হয় এক হাজার টাকা, নন-কন্টেইনার জাহাজ বা রেলপথে পরিবহনের জন্য প্রতিটন বাল্ক (খোলা) পণ্যে ট্রানজিট ফি এক হাজার টাকা। তাছাড়া ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট পণ্যের জন্য বীমা কাভারেজ বাধ্যতামূলক করা হয়। যদিও তারপর ভারতের পিআইডব্লিউটিটি (প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড)-এর অধীনে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে দু’টি জাহাজে ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রদানে আপত্তি জানায় ভারত। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট ফি আদায় স্থগিত করা হয়। অতঃপর বিধিমালাটি বাতিল হয়ে যায়। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খালেদ মুহিউদ্দীনকে কী পাঠ পড়ালেন ড. আলী রীয়াজ
আটঘরিয়ায় বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আলোচনা সভা ও মিছিল
আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
মহাবিশ্বের সুদূর পারে মিলল অতিকায় মহাসাগরের সন্ধান
‘সচিবালয়ে আগুন প্রমাণ করে দুস্কৃতিকারীরা সক্রিয়, সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে’
নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের পণ্যবাহী ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দর
মাহমুদুর রহমান’কে হত্যাচেষ্টা মামলার অগ্রগতি শুন্য
সচিবালয়ে আগুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত: ইউট্যাব
মির্জাপুরে ঘর ভেঙে দিয়ে সরকারি জমি উদ্ধার
নামাজ পড়ে সাইকেল উপহার পেলো ৫৬ শিশু
দৌলতদিয়ায় আগুনে গবাদি পশুসহ বাড়ি পুড়ে ছাই
ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চাই সমমর্যাদার ভিত্তিতে: আলতাফ হোসেন চৌধুরী
মাদারীপুরে ২ পক্ষের সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩, আহত ১০
মাত্র ২ ডলার টিপস দেয়ায় গর্ভবতী মহিলাকে ১৪ বার ছুরিকাঘাত
সেলিনার পর ডুয়া, বছরের শেষেই বাগদান সারতে চলেছেন পপ গায়িকা
'তুই প্রফেসরগিরি দেখাস আমার সাথে'
সচিবালয়ের দুর্নীতির নথিপত্র পুড়িয়ে হাসিনা ও তার দোসররা রেহাই পাবে না: শাকিল উজ্জামান
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমীর বরখাস্তের আদেশ বাতিল : আইএসপিআর
নওগাঁর রাণীনগরে রাস্তা ছাড়াই কলেজের গেইট নির্মাণ, লাখ টাকা জলে
না ফেরার দেশে সুজুকি কোম্পানির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ওসামু সুজুকি