‘মুফতি নিয়োগ : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’
২৪ মে ২০২৩, ০৯:৩৯ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
১৬ : ০২ : শিক্ষাঙ্গণ, অফিস-আদালত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টগণ ও জাতীয় পর্যায়ে জেনারেল শিক্ষিতগণ যেভাবে চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যা, গণিতবিদ্যা, পদার্থ-রসায়ন-জীববিজ্ঞান ইত্যাদি- সর্বত্র সকলে নিজ নিজ সীমা-নিয়ম-নীতি ও চেইন-আব কমান্ড মেনে চলেন; এক বিশেষজ্ঞ অন্য বিশেষজ্ঞ এর কাজে বা অন্য বিভাগে গিয়ে হস্তক্ষেপ করেন না। একইভাবে তাফসীর বিষয়ে মুফতী বা মুহাদ্দিস, হাদীস বিষয়ে মুফাসসির বা মুফতী এবং ফিকাহ-ফাতওয়া বা শরীয়া আইন বিষয়ক কোন ব্যাপার-বিষয়ে মুহাদ্দিস বা মুফাসসির যেন হস্তক্ষেপ বা নাক গলাতে যেতে না পারেন; তার কার্যকরী ব্যবস্থা রাষ্ট্র, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের উপর ন্যাস্ত করা চাই।
১৬ : ০৩ : জনগণকে Ñএসব পার্থক্য-জ্ঞানের প্রতি উৎসাহিতকরণ ও তাদের ভুল ভাঙ্গানোর জন্য মূল উদ্যোগ রাষ্ট্র ও প্রশাসনকেই নিতে হবে। অর্থাৎ জনগণ ও মুসুল্লিদেরকে বোঝাতে হবে, “তাফসীর’ সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে সেটি একজন বিজ্ঞ মুফাসসিরকে জিজ্ঞাসা করতে হবে; মুফতি বা মুহাদ্দিসকে নয়; হাদীস সম্পর্কে কোন কিছু জানতে হলে, তা একজন বিজ্ঞ মুহাদ্দিসকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, মুফতী বা মুফাসসিরকে নয়; একইভাবে ‘মাসআলা’ বা ‘ফাতওয়া’ সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত বা জানার থাকলে, তা একজন শরীয়তবিশেষজ্ঞ মূফতিকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, কোন মুহাদ্দিস বা মুফাসসিরকে নয়”। তা হলেই কেবল বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ ধর্মীয় ব্যাপারে যেমন শৃঙ্খলায় ফিরে আসবে, রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসাবেও শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে ফিরে আসবে।
০১ : ১৭ : প্রবন্ধটির সার-সংক্ষেপ :
১৭ : ০১ : ‘গ্র্যান্ড মুফতী’ মানে রাষ্ট্রীয়ভাবে বা সরকারীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত বা অনুমোদিত মুফতী।
১৭ : ০২ : দেশ ও জাতির বৃহৎ প্রয়োজন ও চাহিদা বিবেচনায় রেখে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘দীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগ’ এর অধীনে পূর্ব থেকে চলমান ‘ফাতওয়া শাখা’টিকে প্রশাসনিক ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদের মাধ্যমে অবশ্যই ‘ফাতওয়া বিভাগে’ উত্তীর্ণ করা চাই।
১৭ : ০৩ : ষোল (১৬) কোটি মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন মেটানোর জন্য ‘নিয়োগপ্রাপ্ত একজন মুফতী’ মোটেও যথেষ্ট নয় বিধায় অনতিবিলম্বে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ের অধীনে কমপক্ষে আরো (২/৩) দু’টি বা তিনটি পদসৃষ্টি করে মোট চারজন মুফতির সমন্বয়ে সম্বৃদ্ধ ‘ফাতওয়া বিভাগ’ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। তার পাশাপাশি ৬৪ জেলা ও প্রতিটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্যও এক একজন করে মুফতী নিয়োগের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা চাই।
১৭ : ০৪ : ‘ফাতওয়া বিভাগ’ এর প্রশাসনিক অবকাঠামো ‘প্রধান মুফতী’-১টি পদ, ‘উপ-প্রধান মুফতী’-১টি পদ এবং ‘সহকারী মুফতী’ ২টি পদ Ñএভাবেও সেটিং-সাজানো যেতে পারে।
১৭ : ০৫ : রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত মুফতিগণ কিংবা ‘ফাতওয়াদান’ কর্মের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত মুফতিগণের বাইরেও, পুরো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জনগণের ব্যাপক চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে যথাযোগ্য ও বিভাগীয় বিশেষজ্ঞ মুফতিগণ অবশ্যই শর্ত-সাপেক্ষে ফাতওয়াদানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সেই শর্ত হচ্ছে, তাঁকে নির্ভরযোগ্য সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠান থেকে বিধি মোতাবেক উত্তীর্ণ হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও হাতে-কলমে অনুশীলনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে।
১৭ : ০৬ : উপরে আলোচিত ‘শর্ত-সাপেক্ষে’ বলতে, একদিকে যেমন এতদসংক্রান্ত ইতোপূর্বে উল্লিখিত ‘ফিকহ্-ফাতওয়া’ বিদ্যার বিধিবদ্ধ ‘নিয়ম-নীতি’সমূহ অন্তর্ভুক্ত; অপরদিকে নিজ নিজ দেশ-জাতি-রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় আইন-আদালতের প্রতিও লক্ষ রাখা জরুরী; যা কিনা খোদ ফিকহ্-ফাতাওয়ার গ্রন্থাদিতেই ‘স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনা’ বা (مقتضائ حال) ‘মুকতাযায়ে-হাল’ শিরোনামে বলা হয়েছে। সে হিসাবে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট এর আপিলেট ডিভিশন’ (২০১১খ্রি.) এর নির্দেশনাÑ তথা যথাযোগ্য মুফতিগণ বিধি মোতাবেক ফাতওয়া দিতে পারবেন মর্মে অনুমতিদানের পাশাপাশি, “দেশের প্রচলিত আইনে কভার করে (‘মুসলিম পারিবারিক আইন’ তথা বিবাহ-তালাক ও সম্পত্তি বন্টন ইত্যাদি), তার বিরুদ্ধে চলে যায় বা সাংঘর্ষিক হয়ে যায়, কারও দৈহিক-মানসিক শাস্তির কারণ হয়ে যায়” Ñতেমন কোন ফাতওয়া ইস্যু করা যাবে নাÑ বিষয়টি/অবজারভেশন/শর্তের প্রতিও লক্ষ রাখতে হবে। যেমন বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আপিলেট ডিভিশন এর (বৃহস্পতিবার : ১২/০৫/২০১১) সংক্ষিপ্ত নির্দেশনাটি দেখা যেতে পারে :
But no person can pronounce fatwa which violates or affects the rights o reputation or dignity of any person which is covered by the law of the land. (iv) No punishment including physical violence and/or mental torture in any form.
০১ : ১৮ : উপসংহার : দেশাচার ও প্রচলন থাকুক বা না থাকুক; প্রশাসনিক কাগজপত্রে লেখা থাকুক বা না থাকুক এবং সংশ্লিষ্ট ওই মুফতী নিজে নিজেকে ‘গ্র্যান্ড মুফতী’ বলুক বা না বলুক; তিনি যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন অথবা একজন মুফতী হিসাবে যার নিয়োগ সরকারীভাবে অনুমোদিত হবে, তিনি অবশ্যই ‘গ্র্যান্ড মুফতী’ হিসাবে পরিগণিত হবেন।
লেখক : মুফতী ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ব্রাহ্মণপাড়ায় আলোচিত শফি উল্লাহ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১
ফরিদপুরের ধলার মোড়ে ৮ম ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত
খালেদ মুহিউদ্দীনকে কী পাঠ পড়ালেন ড. আলী রীয়াজ
জানুয়ারিতে আরও ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
আটঘরিয়ায় বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আলোচনা সভা ও মিছিল
আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
মহাবিশ্বের সুদূর পারে মিলল অতিকায় মহাসাগরের সন্ধান
‘সচিবালয়ে আগুন প্রমাণ করে দুস্কৃতিকারীরা সক্রিয়, সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে’
নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের পণ্যবাহী ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দর
মাহমুদুর রহমান’কে হত্যাচেষ্টা মামলার অগ্রগতি শুন্য
সচিবালয়ে আগুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত: ইউট্যাব
মির্জাপুরে ঘর ভেঙে দিয়ে সরকারি জমি উদ্ধার
নামাজ পড়ে সাইকেল উপহার পেলো ৫৬ শিশু
দৌলতদিয়ায় আগুনে গবাদি পশুসহ বাড়ি পুড়ে ছাই
ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চাই সমমর্যাদার ভিত্তিতে: আলতাফ হোসেন চৌধুরী
মাদারীপুরে ২ পক্ষের সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩, আহত ১০
মাত্র ২ ডলার টিপস দেয়ায় গর্ভবতী মহিলাকে ১৪ বার ছুরিকাঘাত
সেলিনার পর ডুয়া, বছরের শেষেই বাগদান সারতে চলেছেন পপ গায়িকা
'তুই প্রফেসরগিরি দেখাস আমার সাথে'
সচিবালয়ের দুর্নীতির নথিপত্র পুড়িয়ে হাসিনা ও তার দোসররা রেহাই পাবে না: শাকিল উজ্জামান