বরিশাল নগর পরিষদের বহু কাঙ্খিত ভোটের পনের দিন বাকি না থাকলেও জনসাধারণের মাঝে প্রার্থী বাছাইসহ ভোট দেয়া নিয়ে তেমন আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি। এ অবস্থাতেই নির্বাচনী কর্মকা- পর্যবেক্ষণসহ মাঠের পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল শিল্পকলা একাডেমীতে প্রার্থীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ে সিইসি’র এটাই প্রথম বরিশাল সফর।

এর আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আহসান হাবিব খান বরিশালে পুলিশ-প্রশাসন ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে গেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আসন্ন সিটি নির্বাচনগুলোতে অত্যন্ত কঠোর বিধি-বিধান প্রতিপালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানসহ গ্রহণযোগ্য করার দৃঢ় অঙ্গিকারের কথা পূণব্যক্ত করেছেন। তিনি গাজীপুর সিটি নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে কোনো ধরনের অনিয়মকে প্রশ্রয় না দিতে নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থানের কথাও জানান।
এদিকে এখনো বরিশালের নির্বাচনী মাঠের পরিবেশ শান্ত থাকলেও প্রচারণা নিয়ে বেশিভাগ প্রার্থীই বিধি-বিধান মানছেন না। বিষয়টি নিয়ে এখনো এখনো নির্বাচন কমিশনের কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বর্তমান মেয়র এবং ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহ ও তার অনুসারীগণের আসন্ন ভোটের প্রচারণাসহ কর্মকা-ে অংশগ্রহণ নিয়ে নিরব উদাসীনতায় রয়েছেন। এ অভিমত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। একইসাথে ইতোমধ্যে সাদিক আবদুল্লাহর একান্ত অনুসারী ও মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহমদ মান্নার গ্রেফতারের পরে এ নগরী থেকে ক্ষমতাশীন দল ও সহযোগী সংগঠনের এতদিনের অনেকে প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরা কিছুটা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। অনেকেই বুঝে শুনে পথে নামছেন। অনেক আবার নিভৃতচারী।

এমনকি এতদিনের দোর্দান্ড প্রতাপশালী কয়েকজন কাউন্সিলর এবং আসন্ন নির্বাচনে পুনরায় প্রার্থী হয়েও মান্না’র গ্রেফতারের পরে অনেকটা হিসেব করেই চলছেন। এরা নির্বাচনে প্রার্থী হলেও সশরীরে এখনো প্রচারণায় নেই। তাদের প্রচারণা কর্মীদের দিয়ে পোস্টার সাটানসহ মিছিল সেøাøাগানে সীমাবদ্ধ রয়েছে এখনো। নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত যে সময় অবশিষ্ট রয়েছে, ততদিন অনেকেই ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নীতিমালা নিয়ে পথ চলতে চাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তাদের কয়েকজনের ঘনিষ্ঠজনেরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, নৌকা প্রতিকের প্রচার-কর্মীর ওপর হামলা এবং তা নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরির পরে রইস আহমদ মান্নার গ্রেফতারের বিষয়টি অবধারিত ছিল। তা কার্যকরের পরেই সতর্ক সাদিক-এর প্রায় সব অনুসারী। উপরন্তু গত দেড় মাসাধিককালের অনুপস্থিতি বরিশালের রাজনীতির মাঠ থেকে সাদিকের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে বলেই মনে করছেন তার একান্ত অনুসারীগণও। ফলে এতদিন ক্ষমতাশীন দল ও সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতা এ নগরীর ভাগ্য নিয়ন্তা ছিলেন, এখন তাদের অনেকই আপন ভুবনে প্রায় পরবাসী। অনেকেই রাজনীতির মাঠ ছাড়া।

এদিকে এতদিনের সাদিকের প্রভাবশালী অনুসারীরা বরিশাল মহানগরীতে কোনঠাশা হয়ে পড়ার সাথে তাদের দখলে থাকা বাস টার্মিনাল ও মিনি বাস টার্মিনালসহ আরো কিছু সরকারি স্থাপনার নিয়ন্ত্রণও হাতছাড়া হয়েছে। অবশিষ্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তনও অত্যাসন্ন। তবে এসব বিষয়ে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন আগামী ১২ জুনের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত সয়ং। কোনো ধরনের দখলবাজিসহ অনৈতিক কর্মকা-ে আবুল খায়ের নিজেকে জড়িত করতে চান না বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ জনেরা।
এদিকে আগামী ১২ জুনের বরিশাল সিটির ৫ম নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন ছাড়াও ৩০টি ওয়ার্ডে ১৩৩ এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রয়েছেন।

গত শুক্রবার প্রতিক বরাদ্দের পরে প্রচারণায় বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের সাথে গোটা বরিশাল মহানগরী পোস্টারে ছেয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম বিধায় প্রায় সব প্রার্থীর লেমিনেটিং করা পোস্টার ঝোলান হয়েছে নগরী জুুড়ে। ইতোমধ্যে নগরীর সব উন্মুক্ত দেয়াল ঢেকে গেছে পোস্টারে। আর গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর প্রথম দিনেই বিধি ভেঙে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় খন্ড মিছিলসহ মাইক যোগে প্রচারণাও অব্যাহত ছিল।
তবে নির্বাচন কমিশন অন্য আরো অনিয়মের মতো বিধি ভঙ্গের এ বেপরোয়া কর্মকা-কে এখন পর্যন্ত আমলে নেয়নি।

এদিকে গতকাল শনিবারও দিনভরই বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং পাড়া মহল্লায় মূল তিন মেয়র প্রার্থী ব্যাপক গণসংযোগসহ প্রচারণায় ছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ও ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিম প্রচারণার দ্বিতীয় দিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে করেছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সব মেয়র ও বেশিরভাগ কাউন্সিলর প্রার্থী সিইসি’র বৈঠকে যোগ দিয়েছেন।