পুরনো ইঞ্জিনে বন্ধুত্ব ঝালাই!
২৭ মে ২০২৩, ১১:১২ পিএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রবাদ আছে- ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’। তাহলে পুরনো ইঞ্জিনেরও কী গতি বাড়ে? হয়তো বাড়ে! তা না হলে কাছের প্রতিবেশী বন্ধুদেশ ভারত বাংলাদেশকে পুরনো রেলওয়ে লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) দিলই বা কেন! একটি দুইটি নয়; ২০টি ইঞ্জিন। সবগুলোই পুরনো। তাও আবার বিনামূল্যে! পুরনো রেলওয়ে ইঞ্জিন ‘উপহারে’র সুবাদে উভয়পক্ষের বন্ধুত্ব আরও ঝালাই শক্তপোক্ত হবে এমনটি আশাবাদ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। তবে রেলওয়ের অভিজ্ঞজনেরা বলছেন, ভারতের বিভিন্ন রেল রুটে এসব লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) দীর্ঘদিন ব্যবহৃত। প্রায় পরিত্যক্ত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন বহর আদৌ আর কাজে আসবে কিনা অথবা কতদিন সেগুলোর চলৎশক্তি বজায় থাকবে এ নিয়ে কারিগরি পরীক্ষা হওয়া দরকার। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ইঞ্জিন-ভেদে এগুলোর আয়ূষ্কাল অবশিষ্ট আছে ৩ থেকে ৫ বছর। প্রবাদে আছে- ‘উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ’। অর্থাৎ অনিচ্ছায় দান করা।
গত ২৩ মে দর্শনা-গেদে ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টে ২০টি ভারতীয় ‘উপহারে’র লোকোমোটিভ হস্তান্তর করা হয়। এ উপলক্ষে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে ঢাকা রেলভবন থেকে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এবং নয়াদিল্লির রেলভবন থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবসহ দু’দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। গত বছর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে অনুদান হিসেবে ২০টি রেল লোকোমোটিভ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) হস্তান্তর অনুষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভারত বিনা পয়সায় আমাদের ২০টি পুরনো ব্রডগেজ লোকোমোটিভ উপহার দিল। ইঞ্জিনগুলো ৮ থেকে ১০ বছরের পুরনো। এগুলো রেলওয়ের বহরে যুক্ত হবে।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ঐতিহাসিকভাবে ভারত ও বাংলাদেশে একই ধরনের রেলওয়ে ব্যবস্থা বিদ্যমান। তাই রেলওয়ে সেক্টর স্বাভাবিকভাবেই একে অপরের পরিপূরক। ২০টি বিজি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ভারতের কাছ থেকে বন্ধুত্বের প্রতীক। যেসব লোকো দেয়া হয়েছে সেগুলো আধুনিক, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, ৩ হাজার ৩শ’ হর্সপাওয়ারের। তিনি জানান, আন্তঃসীমান্ত সংযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালের আগের পাঁচটি রেলওয়ে সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নয়া উচ্চতায় পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে রেলওয়ে যোগাযোগের আরো প্রবৃদ্ধি একটি মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পরস্পর স্বীকৃত।
এদিকে ‘দি টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে (২৪ মে, ২০২৩ইং) বলা হয় ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার পাঁচটি ব্রডগেজ রেলওয়ে আন্তঃসীমান্ত সংযোগ রুট চালু রয়েছে। পুনরুজ্জীবিত হওয়া ভারতের সাথে বাংলাদেশের পুরনো ৫টি রুট হচ্ছেÑ গেদে-দর্শনা, বেনাপোল-পেট্রাপোল, সিঙ্গাবাদ-রহনপুর, রাধিকাপুর-বিরল এবং হলদিবাড়ি-চিলাহাটি। তাছাড়া আখাউড়া-আগরতলা, মহিশাসন-শাহবাজপুর আরও দু’টি আন্তঃসীমান্ত সংযোগকারী পুরনো রেল রুটের নির্মাণ কাজে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই তা সম্পন্ন হলে উদ্বোধন করা হবে।
এর মধ্যে মহিশাসন-শাহবাজপুর রেলরুটটি নিছক যোগাযোগ বা ব্যবসা-বাণিজ্যেই শুধু নয়; বরং ভবিষ্যতে এই রেললাইনটি ট্রান্স এশিয়ান রেললাইনের মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত হবে। আসামে উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ব্রিটিশদের আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি ১৮৯১ সালে রেললাইনটির নির্মাণ করে। যার সদর দফতর সিআরবি ভবন আজও চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রস্থলে তার স্মারক বহন করছে।
কেমন হবে ‘পরিপূরক’Ñ
ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সেই ২০টি পুরনো রেলইঞ্জিন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, ভারত ও বাংলাদেশের রেলওয়ে ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবেই একে অপরের ‘পরিপূরক’। বর্তমানে রেলওয়ে নেটওয়ার্ককে পরিপূরক করেই গড়ে তোলা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের চুক্তির (মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফরম ইন্ডিয়া’) আলোকে অতি সম্প্রতি সরকারি আদেশে পূর্ণাঙ্গ কার্যকর হয়েছে ভারতমুখী ও একতরফা ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা। যা চালু হয়েছে ‘কানেকটিভিটি’ বা ’ট্রান্সশিপমেন্টে’র নামে।
ভারতের বিরাট প্রাপ্তিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে তার সড়ক, রেলওয়ে ও নৌপথ অবকাঠামোর পরিকল্পিত উন্নয়ন করছে। বাংলাদেশের সাথে কানেকটিভিটি বা সংযুক্তির উপযোগী ও পরিপূরক করেই ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এরই আওতায় আবার ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ সুবিধা প্রসার করা হচ্ছে। ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া ৮টি রেলপথের মধ্যে ৫টি ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। বাকি তিনটি পুনরুজ্জীবনের কাজ চলছে। এর ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি বাড়বে ট্রানজিটের পরিধি।
এ ধরনের অন্যতম চলমান মেগাপ্রকল্প আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ। যা শিগগিরই চালুর পথে। জানা গেছে, ৯৭২ কোটি রুপি তথা হাজার কোটি টাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নয়া রেলপথসহ পূর্ণাঙ্গ রেলওয়ে অবকাঠামো স্থাপন প্রকল্প। ভারতের ইরকন ইন্টারন্যাশনাল (ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন লি.) নির্মাণ কাজ তদারক করছে। এ প্রকল্পে বাংলাদেশের ব্যয় দাঁড়াবে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা, ভারতীয় কঠিন শর্তযুক্ত ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০১০ সালে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগে ১০ কি.মি. অংশ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে এবং সাড়ে ৫ কি.মি. ভারতে পড়ছে।
এদিকে আগরতলা ও কলকাতার মধ্যে দীর্ঘ ঘুরপথে দূরত্ব ১৬শ’ ৫০ কি.মি.। আখাউড়া-আগরতলা সাড়ে ১৫ কি.মি. নতুন রেল সংযোগটি সম্পন্ন হলেই দূরত্ব এগারো শ’ কি.মি. কমবে। তখন দূরত্ব দাঁড়াবে মাত্র ৫৫০ কি.মি.। রেল সংযোগ স্থাপিত হবে কলকাতা থেকে রাজধানী ঢাকা, সরাসরি ঢাকা থেকে আখাউড়া দিয়ে আগরতলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর থেকে ভারতের নিশ্চিন্তপুর এবং নিশ্চিন্তপুর থেকে আগরতলা রেল স্টেশনের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এর ফলে ভ্রমণ সময় লাগবে ৩৬ ঘণ্টার স্থলে মাত্র ১০ ঘণ্টা। বেঁচে যাবে তিন-চার গুণ সময় ও অর্থ। ভাগ্য আমূল বদলে যাবে ‘সাত কন্যা’ আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়, অরুণাচল, মনিপুর ও নাগাল্যান্ড এবং সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশের। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে ভারতের মূল ভূখ-ের সংযোগ ঘটবে।
প্রবীণ অর্থনীতিবিদ চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. আবুল কালাম আযাদ এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, দেশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে মাল্টিমোডাল সংযুক্তির মাধ্যমে ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা পাচ্ছে ভারত। সড়ক, নৌ ও রেলপথ এই তিন দিক দিয়েই সহজ ও বিকল্প সংযোগ তারা পাচ্ছে। কৌশলগত সুবিধাগুলো মাথায় রেখেই ভারত তা করছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম বলেন, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়ে গেছে। আরো আগেই সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এটি হবে ট্রান্সশিপমেন্ট রুট; ট্রানজিট বা করিডোর নয়। দুই দেশের জন্য তা লাভজনক হবে। তবে এর ব্যবহার কতটা হবে তা নিয়ে এখনো সংশয় আছে। তবে ভারত এ সুবিধাকে অন্যভাবে ব্যবহার করবে না। তা পারবেও না। এই কানেকটিভিটি ভারতের জন্য সুবিধাজনক।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পথশিশুদের নিয়ে বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন
তামিমকে বিসিবির ধন্যবাদ
গণহত্যাকারীদের বিচারিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে: সারজিস
দ্বিতীয় চালানে ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার টন চাল
গাঁজা সেবনের অভিযোগে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থীকে শাস্তি
উইন্ডিজ সিরিজে পাকিস্তান দলে ৭ পরিবর্তন, নেই আফ্রিদি
সুইজারল্যান্ডে গ্লোবাল এসএমই সামিট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩-২৫ এপ্রিল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসিম : সিলেটে কাইয়ুম চৌধুরী
ডার্ক ওয়েবে গ্রাহকের তথ্য বিক্রির অভিযোগ : সিটি ব্যাংকের ব্যাখ্যা
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ‘বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলন-২০২৫’ অনুষ্ঠিত
গফরগাঁওয়ে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে বন্ধুর মৃত্যু
কর্মীদের বীমা সুরক্ষা প্রদানে ঢাকা ব্যাংক ও মেটলাইফের চুক্তি স্বাক্ষর
পাঠ্যবইয়ে নাম যুক্ত হওয়ায় আমার চেয়ে পরিবার বেশি খুশি: নিগার
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায় সম্মেলন- ২০২৫ অনুষ্ঠিত
শৈত্যপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার আভাস, বাড়বে রাত-দিনের তাপমাত্রা
বগুড়ায় শিবিরের সাবেক কর্মী সাথী ও সদস্যদের মিলন মেলায় রাফিকুল ইসলাম খান
ক্যাম্পাসভিত্তিক জুলাইয়ের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখার আহ্বান প্রেস সচিবের
শিবালয়ে নিখোঁজের ৫ দিন পর পদ্মায় ভেসে উঠলো বারেক মেম্বরের লাশ
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন: যাদের উপর থাকবে নজর
এবি পার্টির কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি