সামনের মাসগুলোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসবে
২৮ মে ২০২৩, ১১:১২ পিএম | আপডেট: ২৯ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সামনের মাসগুলোতে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসবে বলে ধারণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর শহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ এখন খেলোয়াড়। কিন্তু দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণœ হচ্ছে।তাঁর ধারণা, সামনের মাসগুলোতে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসবে।
গতকাল রোববার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত ‘নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন ফ্রাই ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলসের ফেলো সাইমুম পারভেজ। স্বাগত বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জাহেদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন- সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আলী রিয়াজ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান।
বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির একটি সর্বব্যাপী প্রভাব আছে বলে ওয়েবিনারে উল্লেখ করেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এই নীতি যদি ২০-৩০ বছর আগে নেওয়া হতো, তাহলে এত প্রভাব থাকত না। কারণ, তখন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বার্থ–সংশ্লিষ্ট মানুষের সংখ্যা এই দেশে কম ছিল। এখন অনেক নিচু পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের পরিবারও যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। আর এই মানুষগুলোই নির্বাচনে অনিয়মের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন। তাই এই নীতি সুষ্ঠু নির্বাচনে একেবারেই প্রভাব ফেলবে না, তা নয়। তবে এটি যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। এখন দেখতে হবে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সরকার কী এটাকে মোকাবিলা করবে, না সমঝোতা করবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিবেশ লাগবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা অনেকে বলছেন। এটা সম্ভব নয়, তা নয়। এই ব্যবস্থা একসময় ছিল। দেশের প্রয়োজনে এটি করা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলোই সুষ্ঠু হয়েছে।
তবে সুষ্ঠু নির্বাচনে বিদেশি চাপ কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন সাবেক এই কূটনীতিক। তাঁর মতে, গত ২০-৩০ বছরে বিদেশিদের চাপ সব সময় কাজ করেনি। বাংলাদেশে ভারত ও চীনেরও স্বার্থ আছে বলেও উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন। তাঁর মতে, ভারতের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সুবিধাজনক। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির কারণে ভারত নীতি পরিবর্তন করে ফেলবে বলে মনে হয় না। এখানে যা-ই হোক, ভারত তার স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে। দেশটির সে সামর্থ্য ও গুরুত্ব আছে। পাশাপাশি চীনও তাদের স্বার্থ দেখতে চাইবে। এখানে বৃহৎ শক্তির সংঘাত হলে দেখতে হবে কারা কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।
বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বরাজনীতির তিন বড় শক্তির প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়ার পেছনে দেশে দীর্ঘদিন একটি ‘ম্যান্ডেটবিহীন’ (জনরায়বিহীন) সরকারের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি দায়ী বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে ক্রমাগত বাংলাদেশকে এমন একটি জায়গায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। তাঁর মতে, এমন অবস্থা সৃষ্টির কারণ ২০১৪ সাল থেকে কার্যত ‘ম্যান্ডেট’ ছাড়া একটি সরকার ক্ষমতায় আছে।
আলী রীয়াজ বলেছেন, ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচন বিবেচনায় নিলে তখন ভারতের স্টাবলিশমেন্ট (ক্ষমতার অংশীদারেরা) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে যতটা সোচ্চার ছিল এখন পর্যন্ত সেটা নেই। তাঁর ধারণা, দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো নেগোসিয়েশন (আলোচনা) চলছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ নিয়ে এখন যে অবস্থা তাতে দুটি শক্তিকে ‘অ্যালাইন’ (এক করা) করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত অথবা ভারত ও চীন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়ে যাবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে-এমনটা মনে করেন না প্রফেসর আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, এই নীতির প্রভাব সীমিত। তবে এটি একটি সতর্কবার্তা। এখন থেকে নির্বাচন-এই মধ্যবর্তী সময়ে আরও ব্যবস্থা আসবে বলে তিনি ধারণা করেন। তিনি মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেই সমাধান বের করতে হবে, নিরপেক্ষ প্রশাসন তৈরি করতে হবে। না হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভবনা তিনি দেখেন না।
প্রফেসর জাহেদুর রহমান বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, পরাশক্তিরা এখানে কাজ করছে। সংঘাতময় একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নাইজেরিয়াতেও একই ধরনের (ভিসা নীতির মতো) নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তবে এর সঙ্গে বাংলাদেশের বড় পার্থক্য হলো বাংলাদেশে নিবাচনের সাত আট মাস আগে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখানে বিচার বিভাগকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতিকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাহেদুল আনাম খান। তবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কিভাবে কার্যকর হবে সেই প্রশ্নও রয়েছে।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পাকিস্তানে সেনানিবাসে আত্মঘাতি হামলা, সেনাসহ নিহত ১৮
জুলাই বিপ্লবে শহিদের সংখ্যা ১৪২৩, আহত ২২ হাজার
নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুয়েল গ্রেফতার
বিচারবিভাগ নিয়ে আজ রোডম্যাপ দেবেন প্রধান বিচারপতি
নেছারাবাদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার নিহতদের স্মরণে বিএনপির আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল
নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় চীন: শি জিনপিং
পতিত স্বৈরাচারের দোষর মিডিয়া আর স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে
পাকিস্তান-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টও মুলতানে
৭০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইআইই-তে অংশ নেবে
সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আজ প্রতিনিধিদল যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে
৩ হাজার কয়েদির সাজা মওকুফ অথবা হ্রাস করতে যাচ্ছে ইরান
অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর শ্রীলংকায় প্রথম নির্বাচন আজ
জুনে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন ১৭ শতাংশ কমেছে
রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট
গারো পাহাড়ের বালু খেকোদের বিরুদ্ধে এসিল্যান্ডের সতর্কবার্তা
রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়