রংপুরের সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম আসছে
২৯ মে ২০২৩, ১০:৪১ পিএম | আপডেট: ৩০ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
আর মাত্র কয়েকদিন পরেই বাজারে আসবে হাঁড়িভাঙ্গা আম। ইতিমধ্যে স্ব-রূপে ফিরেছে সুস্বাদু এই আম। বাজারে নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। হাঁড়িভাঙ্গা আম উত্তর জনপদ রংপুুরের একটি সুস্বাদু আমের নাম। যার সুখ্যাতি ইতিমধ্যে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বিস্তৃতি লাভ করেছে। সেই হাঁড়িভাঙ্গা আম এখন শোভা পাচ্ছে গাছে গাছে। বাগানে বাগানে ঝুলছে। আমের ভারে গাছের ডাল-পালা হেলে পড়েছে-যা বাগানকে করেছে আরও দৃষ্টিনন্দন। ইতিমধ্যে প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে স্ব-রূপে ফিরেছে এই আম। এই হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসতে সময় লাগবে আর মাত্র কয়েকটি দিন। আশা করা হচ্ছে মাত্র কয়েকটি দিন পর অর্থাৎ আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পরেই এই সুস্বাদু আম পাকতে শুরু করবে। বাগান মালিক এবং আমচাষিরা এখন বাগানের শেষমুহুর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন প্রস্তুতি। তৈরী করা হচ্ছে গোডাউন এবং অস্থায়ী দোকান।
সর্বজন নন্দিত, অত্যন্ত নজর কাড়া, সুমিষ্ট এবং আঁশবিহীন এই আম সাধারণত রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকায় হয়ে থাকে। তারমধ্যে পদাগঞ্জ এলাকা এই আমের জন্য বিখ্যাত। এর স্বাদ ও বৈশিষ্টের জন্য সকলের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইতিমধ্যে এই আমের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও। ফলে চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে হাঁড়িভাঙা আম চাষ ও উৎপাদনের পরিধি। যার ফলে এই আম এখন রংপুরের প্রায় প্রতিটি জেলায় চাষ হচ্ছে। শুধু রংপুর জেলাতেই নয়, পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান করা হয়েছে অনেক। এখনও শত শত মানুষ হাঁড়িভাঙ্গা আমের চারা নিয়ে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী জেলাতে।
রংপুর সদরের ভুরারঘাট, রানীপুকুর, ধাপেরহাট এলাকা থেকে শুরু করে মিঠাপকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জে যেতে দেখা মিলবে সারি সারি গাছ। রাস্তার দুই ধারে হাঁড়িভাঙা আম গাছের সারি সারি বাগান। বাড়ির চারপাশ ছাড়াও বিভিন্ন ফসলি জমিতে লাগানো হয়েছে হাঁড়িভাঙা আমের গাছ। যতদূর চোখ যায় সারি সারি আম বাগান। বাগানের প্রতিটি গাছে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে কাঁচা আমের ঘ্রাণ ।
একই চিত্র মিঠাপুকুরের আখিরাহাট, মাঠেরহাট, খোড়াগাছ, ময়েনপুর, মৌলভীগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ছাড়াও বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, কুতুবপুর, কাঁচাবাড়ি, সর্দারপাড়া, রোস্তমাবাদ, খিয়ারপাড়া, রংপুর সদরের সদ্যপুষ্করনী ইউনিয়নের কাঁটাবাড়ি, পালিচড়াসহ অন্যান্য এলাকাতেও। এসব এলাকার মানুষ এখন এই আমের বাগান করতেই ঝুঁকে পড়েছেন। উঠোন থেকে শুরু করে বাড়ির আশ-পাশের পতিত জমি এখন আর পতিত নেই। সেগুলোতে লাগানো হয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছ।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এ বছর জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরেরও অধিক জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আড়াই হাজার হেক্টরেরও অধিক জমিতে হয়েছে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছে। জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টনেও অধিক। জেলার বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও সদর উপজেলার হাঁড়িভাঙ্গা আম খ্যাত কুতুবপুর, পদাগঞ্জ, খোড়াগাছ, রাণীপুকুর, গোপালপুর, কাঁটাবাড়ি, পালিচড়া, সদ্যপুস্করিনী, ভুরারঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সারি সারি আম বাগানে আমের ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছে। বাগান মালিকরা শেষ মুহুর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই ইতিমধ্যে বাগান বেচে দিয়েছেন। আর তাই বাগান পাহারা দেয়ার জন্য ক্রেতা বা আম ব্যাবসায়ীরা বাঁশের তৈরী টং বা মাচাং তৈরী করে ছাউনি দিয়ে রেখেছেন। তাদের নিয়োজিত পাহারাদাররা সেখানে বসে বসে লুডু খেলে বাগান পাহারা দিচ্ছেন।
বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় মওসুমের শুরুতে প্রায় সব বাগানেই ব্যাপক আম ধরেছিল। আমের গুটি আসার পর বৃষ্টি না হওয়ায় অধিকাংশই ঝরে পড়েছে। তারপরও বাগানে অনেক আম ছিল। শেষ মুহুর্তে কয়েকদিন আগে দুই দফা ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শেষ মুহুর্তে এসে এই ঝড় ও শিলা বৃষ্টি আমের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ফলে বাগানে এখন অর্ধেকেরও কম আম রয়েছে। শিলাবৃষ্টি না হলে এবছর হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলন হত।
বাগান মালিকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে এই হাঁড়িভাঙা আমের দাম বেশ কম থাকে। তখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। দিনে দিনে দাম বাড়তে থাকে এবং মাঝামাঝি সময়ে পর্যায়ক্রমে ৬০ থেকে ৭০ এবং শেষ মুহুর্তে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। তারা আরও জানান, আম সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় মাত্র ১ মাসের মধ্যেই আমের মওসুম শেষ হয়ে যায়। তারা হাঁড়িভাঙ্গা আম খ্যাত পদাগঞ্জ এলাকায় আম সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এবার রংপুর অঞ্চলে হাড়িভাঙ্গার ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। সারাদেশে জনপ্রিয়তার তালিকায় থাকা এই আম জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ পরিপক্ক হয়। তবে কিছু কিছু গাছে আগাম আম হয়েছে। সেগুলো মোটামুটি মধ্য জুন থেকেই পাড়া যাবে। গরম বেশি হলে মধ্য জুন থেকেও বাজারে হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করতে পারবেন বাগান মালিকরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শিল্পকলা একাডেমিতে মুজিবনগর দিবস উদযাপিত
লালমনিরহাটে ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর’ দিবস পালিত
মাদারীপুরে চোরাই মোটরসাইকেলসহ ৩ জনকে আটক
এনডিসি কোর্সের প্রতিনিধিদলের এফবিসিসিআই পরিদর্শন
ময়মনসিংহে বিজয় এক্সপ্রেসে কাটা পড়ে দুই যুবকের মৃত্যু, দুইদিনেও মিলেনি পরিচয়
বাবর-কোহলির রেকর্ড ভাঙার হাতছানি রিজওয়ানের সামনে
বান্দরবানে রাব মহাপরিচালকের সংবাদ সম্মেলন
চাঁদপুরে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
দিনাজপুরে নাশকতার মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৯ নেতাকর্মি জেলহাজতে
শ্রীনগরে নিখোঁজের একদিন পর বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
স্বাধীন দেশে বিচ্ছিন্নবাদী কোন সশস্ত্র সংগঠন কে বরদাশত করা হবে না
ইসরাইলের সীমান্ত গ্রামে হিজবুল্লাহর হামলায় অন্তত ১৩ জন আহত
'ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে হরতাল কর্মসূচির হুঁশিয়ারী সিলেট বিএনপির
ফের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা কুবি শিক্ষক সমিতির
এসআইআর ২০২৪-এ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ১৯৭টি ইরানি প্রতিষ্ঠান
কৃষকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে : স্পিকার
বছরে ৬০ লাখ বিদেশির ইরান ভ্রমণ
কাল সিলেট সফরে আসছেন জ্বালানী উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী : নতুন কূপের ৬০ শতাংশই ডিজেলের ভান্ডার
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন মাদকের আঁতুরঘর
বাজারে নকল ভেজাল ওষুধের জাঁকালো কারবার