বেড়েই চলছে ডেঙ্গু রোগী
৩১ মে ২০২৩, ১১:০৬ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
দেশে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৯৫ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৩ জনে। চলতি বছরে পাঁচ মাসে ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। গতকাল সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯৫ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮২ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৩ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৯৫ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৩ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৪২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪১ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ২ হাজার ২২ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৭২৬ জন। অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন।
এ বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সারাদেশের মোট ১ হাজার ৯২৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪৮ জনে। শতকরা হিসেবে যা ১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
এদিকে, শুধু কীটনাশক প্রয়োগ করে নয়, ডেঙ্গু রোগ মোকাবেলায় সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, বর্ষা মৌসুমকে মাথায় নিয়ে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আমরা সচেতনতামূলক গণ লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম নিয়েছি। ঘরে ঘরে এই লিফলেট বিতরণ করতে চাই। এর মাধ্যমে ডেঙ্গুকে আমরা সামাজিকভাবে মোকাবেলা করতে চাই, প্রতিরোধ করতে চাই। কারণ, শুধু কীটনাশক প্রয়োগ করে ডেঙ্গু রোগ মোকাবেলা করা সম্ভব না। এডিস মশার বিস্তার রোধ করা সম্ভব না। তিনি বলেন, বাসা-বাড়ি, স্থাপনার অভ্যন্তরে যে পানি জমে, থেমে থেমে বৃষ্টির ফলে যে পানি জমে, আগে আমরা বলতাম ৩ দিনে একদিন, জমা পানি ফেলে দিন। আমরা এখন বলছি, পারলে নিয়মিত প্রতিদিন, জমা পানি ফেলে দিন। কোথাও যদি আমরা পানি জমতে না দেই, তাহলে আমরা এই এডিস মশার বিস্তার রোধ করতে পারব। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে পারব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছরের প্রথম ৫ মাসে যে পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তা গত বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ। গত বছর এই সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্য থাকলেও এবার এরইমধ্যে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। এ অবস্থায় এডিস মশার বংশ বিস্তারের লাগাম টেনে না ধরলে দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের নতুন ইতিহাস তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ৬০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩০, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড) হাসপাতালে ২৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন, শিশু হাসপাতালে ৫ জনসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১৪৪ জন ভর্তি আছেন। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ইসলামি ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে, সেখানে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধির পাওয়ার কারণে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিশুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এই প্রথম হাসপাতালটিতে ডেঙ্গুর জন্য আলাদা শিশু ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। শিশুদের ওপর ডেঙ্গু সহজেই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, এই কারণেই শিশুদের জন্য হাসপাতালটিতে আলাদা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলছেন, শনির আখড়া, কুতুবখালী, কাজলা এলাকার পাশাপাশি মান্ডা, মুগদা, সবুজবাগ এলাকার কিছু রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। তার মানে আস্তে আস্তে ডেঙ্গু সংক্রমণ স্প্রেড করছে। সামনের দিনে সংক্রমণকে নির্দিষ্ট এলাকায় রাখা আরও কঠিন হয়ে যাবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের সতর্ক হতে হবে। সেইসঙ্গে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাও লাগবে। আমরা সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি, তাহলে নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এডিস মশা নির্মূলে পুরো দেশে মশা নিধন প্রক্রিয়া অসম্ভব। তাই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল চিহ্নিত করে এডিস মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ তাদের। বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, ডেঙ্গু রোগীর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় এ রোগের বিস্তার রোধ অসম্ভব হয়ে পড়বে। ঢাকা শহরে ডেঙ্গুর হটস্পট শনাক্ত করা জরুরি। প্রয়োজনে হাসপাতালগুলো থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা নির্ধারণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুর স্বাস্থ্য অধিদফতর অংশে রয়েছে পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট। আমাদের পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনটি পুরোপুরি আপডেট করা আছে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার, ডেঙ্গু ওয়ার্ড অথবা ডেঙ্গু রোগী ম্যানেজমেন্টের জন্য বিশেষায়িত ইউনিটের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে। পরীক্ষা, চিকিৎসা কেমন হবে, সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের সীমিত সম্পদ, সীমিত জনবল দিয়ে আমরা সর্বোচ্চটা করে যাচ্ছি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার