বিরোধী নেতাদের মাঠ থেকে সরাতে সরকারের ভয়াবহ মহাপরিকল্পনা
৩১ মে ২০২৩, ১১:১৫ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরোধী দলের নেতাদের সরিয়ে দিতে সরকার ভয়াবহ মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসে, যখন আর কোনো আশা থাকে না তখন অনেকেই চেষ্টা করেন যে, কোনো রকমের কোন কিছু ধরে যদি টিকে থাকা যায়। আজকে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে সাজা দেয়ার রায় হচ্ছে সরকারের সেই পরিকল্পনা, যে পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রাজনীতিকে একেবারে তিরোহিত করা, বিরাজনীতিকরণ করা, রাজনীতিবিদদের রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া, সরিয়ে আবার যদি এককভাবে পার হওয়া। গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুদিন আগে থেকেই তারা (সরকার) এই ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমাদের কানে এসেছে যে, প্রায় সাড়ে ১৩‘শ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যে মামলাগুলো নির্বাচনের পূর্বেই তারা শুনানি করে সব শেষ করে সাজা দিয়ে দেবে। তার সবগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক মামলা। প্রত্যেকটি মামলার আসামী হচ্ছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা।
তিনি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য, এদেরকে (বিরোধী দলের নেতাদের) যদি আটক করে ফেলা যায়, সাজা দিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তাদের কথা মতো এরা তো নির্বাচন করতে পারবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব সময় সেই সংবিধানের উল্লেখই তারা করছে যে, সংবিধান তারা তৈরি করেছে, ১৯৭২ সালে সেই সংবিধান পরবর্তিকালে জনগণের যেটুকু এমেন্ডমেন্ট হয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে তারা নিজেরা শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে সংবিধানকে কাটা-ছেঁড়া করে তাদের মতো করে নিয়েছে সেই সংবিধান অনুযায়ী তারা একদম একা খেলার মাঠে খেলবেন আর গোল দিয়ে যাবেন। যেটাকে আমরা বলি যে, প্রতিপক্ষ কেউ থাকবে না। ওই লক্ষ্যে তারা যাচ্ছে, এগুচ্ছে।
তারেক রহমান-জোবাইদা রহমানের মামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, মঙ্গলবার আদালতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে যেটা আমি মনে করি এদেশের বিচার ব্যবস্থার উপরে সবচেয়ে বড় কফিন একটা পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। সেটা হচ্ছে যে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ২০০৭ সনে। এতোদিন ধরে এই মামলা চলেনি। হঠাৎ করে দেখা গেলো যে, দ্রুত মামলার শুনানি শুরু হয়েছে, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। এখন অতি দ্রুত প্রতিদিন একজন-দুইজন-তিনজন সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে এবং তাদের রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে যখন আমাদের ঢাকার আইনজীবীরা বিশেষ আদালতে কথা বলতে চেয়েছিলেন তখন তাদেরকে সেখানে কথা শুধু বলতেই দেয়া হয়নি তা নয়, তাদেরকে সরকারি দলের আইনজীবীরা আক্রমণ করেছে, তাদেরকে আহত করেছে এবং পুলিশ সেখানে বেআইনিভাবে প্রবেশ তাদেরকে নির্যাতন করেছে। এরপরে আমরা কিভাবে বলব, এই দেশে একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হওয়ার সুযোগ আছে? এদেশে কিভাবে বলব যে, বিরোধী দলের এখানে রাজনীতি করার, মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার, সাংবাদিকদের লেখার অধিকার আছে?
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, এসব মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে জনগণের চলমান গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের, ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা বন্ধ করা যাবে না। কারণ জনগণ জেগে উঠেছে, জনগণের উত্থানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে সরে যেতে হবে, পরাজিত হতে হবে।
তিনি বলেন, পরিস্কার ভাষায় আবারো বলতে চাই, একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই বলতে চাই যে, এখনো সময় আছে। এই সমস্ত খেলাধূলা বাদ দেন, মানুষকে প্রতারনা করার, নির্যাতন করার পথ থেকে সরে গিয়ে, সোজা পথ ধরেন। একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং দেশে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমাদের বিরুদ্ধে মামলার দায়েরের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উদ্দেশ্য একটাই সাজা দিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা। অথচ একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও মরহুম মোহাম্মদ নাসিমকে আদালত খালাস দিয়েছে। তিনি ঢাকা মহানগরে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর দক্ষিনের সদস্য রফিকুল আলম মজনু, কেরানিগঞ্জে নিপুণ রায় চৌধুরী, চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত হোসেনসহ সারাদেশের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এভাবে তারা (সরকার) মিথ্যা মামলা দায়ের করে গোটা দেশে ভয়-ত্রাস এবং একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে তারা একই কায়দায় এককভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় যেটা এদেশের মানুষ এটা হতে দেবে না। এদেশের মানুষ তাদের বিতারণ করেই নির্বাচন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, মীর সরাফত আলী সপু, কায়সার কামাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আসাদুল করিম শাহিন, জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, এম এ খালেক আমিনুল হক, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২,মানবিক সংকট চরমে
চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত
‘একদল খাইছে আরেকদল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে’ কথাটি ছিল ভেরি জেনারেল: আজহারী
নোয়াখালীর মাইজদী হর্কাস মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে দিল জাবি ছাত্রদল
গরু চুরি করে বিএনপি নেতা ও তার স্ত্রীর ভূরিভোজ, অতঃপর...
মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ভাই আটক
থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সেই যুবদল নেতা গ্রেফতার
এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী