বিদ্যুৎ সঙ্কটে বিপর্যস্ত জনজীবন
৩১ মে ২০২৩, ১১:১৯ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদ্যুতের ভয়াবহ সঙ্কট চলছে। রাতে দিনে দফায় দফায় টানা লোডশেডিং দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। নজিরবিহীন এই বিদ্যুৎ সঙ্কটের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুপেয় পানির সঙ্কট। জ্যৈষ্ঠ মাসে অস্বাভাবিক গরমের সাথে পানি-বিদ্যুতের অভাব জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ডায়রিয়া, পেটের পীড়াসহ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে নানা রোগ-বালাই। চরম হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
বিদ্যুতের অভাবে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কল-কারখানায় উৎপাদনের চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে রফতানিমুখি তৈরী পোশাক কারখানাগুলো এখন অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এমনিইতে পোশাক রফতানি কমে গেছে। তার উপর দেশে ডলার সঙ্কটে একদিকে যেমন কাঁচামাল আমদানি কমেছে অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সঙ্কটে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন পোশাক শিল্প মালিকেরা।
বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সঙ্কটে শিল্পাঞ্চলগুলোতে হাহাকার চলছে। বিদ্যমান কারখানা মালিকেরা পড়েছেন বিপাকে। উৎপাদনে ধস নামায় আয় কমেছে, বকেয়া পড়ছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। নতুন বিনিয়োগ এবং সেই সাথে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও কাজে আসছে না। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তরফে বলা হচ্ছে, দেশে গ্যাস ও কয়লার অভাবে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। আবার ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি কমে গেছে। জ্বালানি সাশ্রয়ে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল নির্ভর বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে লোডশেডিং অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরো শোচনীয় হতে পারে।
চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে তিনভাগের একভাগ বিদ্যুৎও মিলছেনা। রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাতে পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীতের দফায় দফায় লোডশেডিং করা হয়। কোন কোন এলাকায় টানা দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুৎ আসলেও তা আধা ঘণ্টার বেশি ছিল না। নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক থেকে দেড় ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ ছিল। বাকি সময় লোডশেডিং করা হয়েছে। একই চিত্র ছিল নগরীর জুুবিলি রোড, রেয়াজুদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকায়। নগরীর ষোলশহর, কালুরঘাট, পতেঙ্গা, সাগরিকা শিল্পাঞ্চলে লোডশেডিং করা হয় দিনভর। বিদ্যুতের অভাবে শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়।
বিদ্যুতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুপেয় পানির সঙ্কট। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং কাপ্তাই লেকের পানির স্তর অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদায় লবণ পানি ঢুকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জোয়ারের সময় ১২ ঘণ্টা পানি পরিশোধন বন্ধ রাখতে হচ্ছে ওয়াসাকে। তাতে উৎপাদন অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ৬০ কোটি লিটার। বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ কোটি লিটার। আবার এ পানিতেই রয়েছে অস্বাভাবিক লবণ। পানি পরিশোধন ও সরবরাহ বাড়াতে গত কয়েক বছরে আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ওয়াসা। উৎপাদন কেন্দ্র বাড়লেও ৪০ বছরের পুরনো পাইপ লাইনে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। জরাজীর্ণ পাইপ লাইন ফেটে এমন সঙ্কটের সময়ও পানির অপচয় হচ্ছে।
সম্প্রতি নগরীর চেরাগি পাহাড়, বহদ্দারহাটসহ একাধিক এলাকায় ওয়াসার পাইপ লাইন ফেটে প্লাবিত হয় বিশাল এলাকা। গতকাল বিকেলে মুরাদপুর এলাকায় পাইপ ফেটে কয়েক ঘণ্টায় পুরো এলাকা প্লাবিত হয়। জরাজীর্ণ পাইপ লাইনে একদিকে পানির অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে পানিতে ময়লা-আবর্জনা মিশে যাচ্ছে। লবণাক্ত ও ময়লা পানি ব্যবহার করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সঙ্কট মেটাতে পুকুর, টিউবওয়েলসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে নগরবাসী। অনিরাপদ এসব পানি পান করে ডায়রিয়া, পেটেরপীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। অস্বাভাবিক তাপদাহের কারণে নগরীর শ্রমজীবী মানুষেরা কাহিল হয়ে পড়ছে। এ সুযোগে নগরীর অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অনিরাপদ পানি দিয়ে তৈরি হরেক রকমের শরবতের দোকান। এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানের শরবত খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন শ্রমজীবীরা।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি শরবতসহ খোলা খাবার খেয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে। তাতে জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় অন্য বছরের তুলনায় এবার অস্বাভাবিকহারে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ওয়াসার নোংরা পানি। তীব্র গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে নগরবাসী। বিশেষ করে শ্রমজীবী এবং কর্মজীবী মানুষের অবস্থা একেবারেই বেহাল। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল নগরীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ভাই আটক
থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সেই যুবদল নেতা গ্রেফতার
এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত