ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বিল পরিশোধ না করায় কয়লা দিচ্ছে না বিদেশি কোম্পানি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে সারাদেশ, রাজধানী ঢাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যায়, গ্রামগঞ্জ থাকছে অন্ধকারে চীনা কোম্পানি সিএমসি, কাতারের রাস, যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন, বহুজাতিক কোম্পানি তাল্লোর বিল বাকি

বিদ্যুৎ সেক্টরের বিবর্ণদশা

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

৩১ মে ২০২৩, ১১:২২ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিল পরিশোধ করতে না পরায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীনা কোম্পানি সিএমসি। গত ২৫ মে থেকে পায়রার একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ। মজুত কয়লা দিয়ে দ্বিতীয় ইউনিট মাত্র দু’দিন চলবে। কয়লা আমদানি বাবদ বর্তমানে পায়রার ২৯ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ করা যায়নি। বার বার তাগাদা দেয়ার পরও ডলার সংকটের কারণে বকেয়া বিল পরিশোধ সম্ভব হয়নি। পেট্রোবাংলা কাতারের রাস গ্যাস থেকে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির বিল নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে না পারায় ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। বিবিয়ানা ও জালালাবাদের বিক্রি করা গ্যাসের ১১টি বিল ডলার সংকটে সময়মতো শোধ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। এ জন্য ২৪ লাখ ১২ হাজার ৯৯১ ডলার জরিমানা দাবি করেছে গ্যাসক্ষেত্রের ইজারাদার যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন। বহুজাতিক কোম্পানি তাল্লোর গ্যাস ও কনডেনসেট বিক্রির দুটি বিল এবং সামিটের এলএনজি প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট এফএসআরইউ (ভাসমান টার্মিনাল) ভাড়ার বিল নির্ধারিত সময়ে দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। ফলে কয়লার অভাবে বন্ধ হচ্ছে উৎপাদন। বকেয়া বিলের কারণে জ্বালানি সরবরাহে অনীহার পাশপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিলম্বে আমদানি মূল্য পরিশোধের জন্য বাড়তি চার্জ দাবি করছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় সারাদেশে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং। শতভাগ বিদ্যুতের দেশে বিদ্যুৎ (পাওয়ার) সেক্টরে নেমে এসেছে অন্ধকার। বিবর্ণদশায় পড়ে গেছে গোটা বিদ্যুৎ সেক্টর।

চীনা কোম্পানি সিএমসি ১৩ এপ্রিল চিঠি দিয়ে জানিয়েছে এপ্রিলে ৫ কোটি ডলার (৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা) পরিশোধ করা হলে মে মাসের জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা যাবে। মে মাসে ৭ কোটি ডলার (৭ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা) এবং পরবর্তী প্রতি মাসে ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করলে প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ঋণপত্র খোলায় বাধা থাকবে না।

সর্বশেষ তিন কোটি ডলার বরাদ্দ পেয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এই অর্থ দিয়ে এলসি খুলে কয়লা আনতে সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ দিন। ফলে প্রায় তিন সপ্তাহ দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরো বসে থাকবে। গত বছর থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ডলার সংকট শুরু হয়েছে। এর অবস্থা মাঝে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আবার সংকট দেখা দিয়েছে। এর আগে ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় গত ২৩ এপ্রিল থেকে প্রায় ২২ দিন বন্ধ ছিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটি থেকে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও এখন অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ডলার সংকটে কয়লা আমদানি না হওয়ায় দুই মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ ছিল বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির।

জানতে চাইলে ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, উৎপাদন করতে না পারলেও সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েই যাচ্ছে। কোনো যথাযথ পরিকল্পনা নেই। সামনে লোডশেডিং আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

দেশে মার্কিন ডলারের সংকটে সরকার গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি নিয়ে চাপে রয়েছে। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রয়োজন অনুযায়ী জ্বালানি দেওয়া যাচ্ছে না। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। দৈনিক ১১০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। কিন্তু গ্যাসভিত্তিক সব কেন্দ্র চালানোর মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। পিডিবির হিসাবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হয়েছে ৬ হাজার ২২১ মেগাওয়াট।

ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। যদিও কয়েক দিনে গড়ে উৎপাদন করা হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট। উৎপাদন করা হচ্ছে ২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট। দেশে এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৩। গত কয়েকদিন থেকে অন্তত ৫২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে ছিল। কোনো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে ছিল কয়লা, গ্যাস অথবা জ্বালানি তেলের অভাবে। রক্ষণাবেক্ষণসহ বেশ কিছু কারণে বন্ধ ছিল কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ বা কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হয়। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে কেন্দ্রভাড়া দিতে হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে তারা জানিয়েছেন।

ডলার সংকটে কাতারের রাস গ্যাস থেকে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির বিল নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। এ জন্য ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। বিবিয়ানা ও জালালাবাদের বিক্রি করা গ্যাসের ১১টি বিল ডলার সংকটে সময়মতো শোধ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। এ জন্য ২৪ লাখ ১২ হাজার ৯৯১ ডলার জরিমানা দাবি করেছে গ্যাসক্ষেত্রের ইজারাদার যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন। বহুজাতিক কোম্পানি তাল্লোর গ্যাস ও কনডেনসেট বিক্রির দুটি বিল এবং সামিটের এলএনজি প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট এফএসআরইউ (ভাসমান টার্মিনাল) ভাড়ার একটি বিল নির্ধারিত সময়ে দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। বকেয়া বিলের কারণে জ্বালানি সরবরাহে অনীহার পাশপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিলম্বে আমদানি মূল্য পরিশোধের জন্য বাড়তি চার্জ দাবি করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জ্বালানি তেলের সরবরাহ অব্যাহত রাখা চ্যালেঞ্জ হবে। এতে দেশের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে জ্বালানি বিভাগকে জানিয়েছে বিপিসি।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। পিডিবি থেকে বলা হয়,গত ২৪ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ২৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করা যায়নি জ্বালানির অভাবে, যা মোট উৎপাদন ক্ষমতার ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অন্তত দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। বাকি ১৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা ব্যবহার করে দিনের বেলায় গড়ে উৎপাদন করা হয়েছে ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। রাতে উৎপাদিত হয়েছে গড়ে ১৩ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন করতে না পারলেও সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েই যাচ্ছে। কোনো যথাযথ পরিকল্পনা নেই।
গত ৯ মের এক চিঠিতে বিপিসি থেকে বলা হয়, ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারিকে ৪ কোটি ১১ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে এ বছর। ইন্ডিয়ান অয়েলকে ডিজেল ও জেট ফুয়েল বাবদ দিতে হবে ১৪ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে রুপিতে অর্থ পরিশোধ করতে পারে, এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বিপিসি।

যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় কয়েক কোটি টাকা জরিমানা গুনছে পেট্রোবাংলা। ডলার সংকট দীর্ঘায়িত হলে ব্যাহত হতে পারে এলএনজি আমদানি। ডলারের অভাবে কয়লা আমদানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পায়রা, রামপালসহ একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সংকটে পড়েছে। এ অবস্থায় চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। তেল আমদানির বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে বিপিসি। বকেয়া পরিশোধ না করলে তেল সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। ডলার চেয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ থেকে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও সুফল মিলছে না। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, ডলারের কারণে সমস্যা হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। ডলার না পেলে কয়লা, এলএনজি সবকিছুতেই সমস্যা হবে।

ডলার সংকট কেন কাটছে না। ডলার সংকট কাটাতে বিভিন্ন উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তুলনামূলক কম প্রয়োজনীয় বা বিলাসবহুল পণ্যের এলসিতে শতভাগ পর্যন্ত মার্জিন নির্ধারণ এবং শুল্কহার অনেক বাড়ানো হয়েছে। আবার কেউ ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং করছে কিনা, তা যাচাই করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব উদ্যোগের ফলে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আমদানি ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে রপ্তানি ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এতে ডলার সংকট কমার কথা। এর পরও দিন দিন সংকট প্রকট হওয়ার মূল কারণ বিদেশি ঋণ ব্যাপকভাবে কমেছে। সুদসহ যে পরিমাণ আগের দেনা পরিশোধ হচ্ছে, নতুন ঋণ আসছে সে তুলনায় কম। এসব কারণে গত মার্চ পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ২২২ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে; আগের অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। শুধু এ কারণে আমদানি কমা এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পরও বৈদেশিক মুদ্রার সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে ৮১৭ কোটি ডলারে ঠেকেছে, যা গত অর্থবছরে ছিল মাত্র ৩১০ কোটি ডলার।

ডলার বিক্রি কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিস্থিতির উন্নয়নে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে রেকর্ড প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ রয়েছে ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ৪২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার ছিল। আর ২০২১ সালের আগস্টে দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে রিজার্ভের এ হিসাব দেখালেও আইএমএফের আন্তর্জাতিক মানদ- বিবেচনায় নিট রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো।

সংকটে গ্যাস সরবরাহ। ডলার সংকটে পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানির বিল, এলএনজি টার্মিনালের চার্জ এবং দেশে কর্মরত বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) বিল দিতে পারছে না। সময়মতো বিল না দেওয়ায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটিকে। পেট্রোবাংলার মোট বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি ডলার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইওসির বিল দিতে ব্যর্থ হলে লাইবরের (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট) সঙ্গে ১ থেকে দেড় শতাংশ এবং এলএনজি বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে লাইবরের সঙ্গে ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে জরিমানা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিল শোধে যত বিলম্ব হবে, জরিমানা তত বাড়বে। ডলার সংকটের সুরাহা চেয়ে একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে লেখা জ্বালানি বিভাগের চিঠিতে প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলএনজির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে এবং জরিমানা এড়াতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহের অনুরোধ করা হয়। আইওসির গ্যাসের দাম, শুল্ক ও কর এবং এলএনজি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানের জন্য গত ১১ মে জ্বালানি বিভাগে আবার চিঠি দিয়েছে পেট্রোবাংলা।

ডলার সংকটে আমদানি করা জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না বিপিসি। এতে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তেলবাহী কার্গো না পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। জ্বালানি বিভাগে পাঠানো বিপিসির এক চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদা অনুযায়ী প্রতি মাসে ১৭-১৮টি এলসির মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ টন পরিশোধিত এবং ১ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। বর্তমানে সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক মাসে ৪-৫টি এলসি খুললেও অগ্রণী ব্যাংক দুটির বেশি এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করেছে। ডলারস্বল্পতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার সরবরাহ না করায় যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না। কয়েক ধাপে একটি এলসির মূল্য পরিশোধ করতে ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগছে। গত ১১ মে পর্যন্ত বিপিসির কাছে সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার।

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার তথ্য বলছে, দিনে লোডশেডিং দুই হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সোমবার লোডশেডিং করেছে ৮৬৬ মেগাওয়াট। গতকাল লোডশেডিং ১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহের গ্রাম এলাকায়। ঢাকা শহরে গতকাল গড়ে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করেছে দুই বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। গতকাল বিকেল চারটায় দুটি সংস্থার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। তারা চাহিদার চেয়ে ৪৫০ মেগাওয়াট কম পেয়েছে। এ ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে লোডশেডিং করে।
কয়েক দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে সিলেটে। বিদ্যুৎ না থাকায় চার্জার লাইট জ্বালিয়ে রান্না করছেন এক নারী। রোববার দিবাগত রাত দুইটায় সিলেটের শিবগঞ্জের লামাপাড়ায়। ##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নোয়াখালীতে রেজাল্ট শীট আনতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

নোয়াখালীতে রেজাল্ট শীট আনতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান টিটু নির্বাচিত

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান টিটু নির্বাচিত

উচ্ছ্বাসে ভাসছেন ইনজাগি

উচ্ছ্বাসে ভাসছেন ইনজাগি

ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

নগর প্রতিদ্বন্দ্বিদের হারিয়েই ইন্টারের শিরোপা উদযাপন

নগর প্রতিদ্বন্দ্বিদের হারিয়েই ইন্টারের শিরোপা উদযাপন

পুলিশ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা নয়, মানবিক কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে: ডিএমপি কমিশনার

পুলিশ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা নয়, মানবিক কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে: ডিএমপি কমিশনার

রুশ হামলায় ভেঙে পড়েছে খারকিভ টিভি টাওয়ার

রুশ হামলায় ভেঙে পড়েছে খারকিভ টিভি টাওয়ার

ইউক্রেনের জন্য সর্বকালের বৃহত্তম সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যে

ইউক্রেনের জন্য সর্বকালের বৃহত্তম সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যে

খান ইউনিসের এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ

খান ইউনিসের এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ

দৌলতখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

দৌলতখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রতিদ্বন্দ্বী

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রতিদ্বন্দ্বী

ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ,জনতার হাতে আটক ২

ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ,জনতার হাতে আটক ২

মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন —মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন —মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী

যত সম্পদের মালিক কাতারের আমির

যত সম্পদের মালিক কাতারের আমির

বাগাতিপাড়ায় গবাদিপশু সহ ঘর পুড়ে ছাই

বাগাতিপাড়ায় গবাদিপশু সহ ঘর পুড়ে ছাই

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের

যে তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

যে তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ইসরাইল বিরোধী আন্দোলন করায় গুগলের ২৮ কর্মী বরখাস্ত

ইসরাইল বিরোধী আন্দোলন করায় গুগলের ২৮ কর্মী বরখাস্ত

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনের মাঠে বিএনপি নেতারা

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনের মাঠে বিএনপি নেতারা

আজ দুপুরে ব্যাংকক নেওয়া হচ্ছে বিএনপি নেতা মিন্টুকে

আজ দুপুরে ব্যাংকক নেওয়া হচ্ছে বিএনপি নেতা মিন্টুকে