এক দফা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচন ওবায়দুল কাদের
১২ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
সরকার পতনে বিএনপি যে এক দফার দাবি ঘোষণা করেছে তার প্রেক্ষিতে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ বলেছে, তাদেরও এক দফা। আর সেটি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে না। গতকাল বুধবার দলের রাজধানীর বায়তুল মোকাররাম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশ থেকে এমন ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশ থেকে বর্তমানে বাংলাদেশ অবস্থানকারী যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আপনারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না। এ দিকে সমাবেশে চেয়ার ছোঁড়া ছুড়িসহ বিশৃঙ্খলায় মঞ্চে উপস্থিত দলীয় সাধারণ সম্পাদকসহ নেতারা বিরক্তি প্রকাশ করেন।
এর আগে গতকাল দুপুর থেকেই আওয়ামী লীগের ওই সমাবেশে যোগ দিতে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। এ সময় বৃষ্টি উপেক্ষা করেও তারা সমাবেশস্থলে আসেন। বিএনপির এক দফা আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির খবর জানেন? তাদের এক দফা জানেন? এক দফা হলো, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আমাদেরও দফা একটা, শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচন শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই হবে। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দেবেন। জনগণ তাকে (শেখ হাসিনা) ভালবাসে। জনগণ সেই নেত্রীর সততাকে পছন্দ করে।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি জানে, নির্বাচন হলে তারা হেরে যাবে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় তারা ভেসে যাবে। বিএনপি দেশের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প চায়নি অভিযোগ করে কাদের বলেন, শেখ হাসিনার অপরাধ তিনি দেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন।
সরকার পতনে বিএনপি অনেক চেষ্টা করেছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি অনেক চেষ্টা করেছে। অনেক লোক আনার চেষ্টা করেছে। ডিসেম্বরের স্বপ্ন গোপীবাগের গরুর হাটে গিয়ে মারা গেছে। আরেকটা স্বপ্ন দেখেছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নয়াপল্টনের কাঁদা পানিতে আটকে গেছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের এক দফা-সংবিধানসম্মত নির্বাচন। আমরা বিএনপিকে কোনো বাধা দেব না। কাউকে আক্রমণ করতে যাব না।
সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যাদের হাতে রক্তের দাগ, তাদের সঙ্গে সংলাপ নয়, তাদের সঙ্গে আপস নয়। আমরা একাত্তরের চেতনার সঙ্গে আপস করতে পারি না।
দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মাঠ ছাড়বেন না। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ যখন খেলতে নামবে তখন কোন অপশক্তি টিকবেন না।
সমাবেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বিদেশি কূটনীতিকদের ঢাকা সফর প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকায় যারা বিদেশি বন্ধুরা এসেছেন, আপনারা চান ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন (অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন)। আমাদেরও লক্ষ্য ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন। আমাদের সেই নির্বাচনে যারা বাঁধা দিতে আসবে আমরা তাদের প্রতিহত করব। খেলা চলবে নির্বাচন পর্যন্ত।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিদেশি বন্ধুরা আমাদের উন্নয়নের সহযোগী। আপনাদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু রক্তে লেখা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আপনারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে, দেশের জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, অল্প সময়ের নোটিশে এই আওয়ামী লীগের সমাবেশে নেতা-কর্মীরা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এই উত্তাল তরঙ্গে বিএনপির সকল ষড়যন্ত্র ভেসে যাবে। আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে হাজার হাজর মানুষ হত্যা করেছে। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে। এটি মেনে নেওয়া হবে না। সংবিধান অনুসারে আগামী নির্বাচন হবে। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সকল সংকট মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকবো।
বিএনপি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায় বলে সমাবেশে অভিযোগ করে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন, বিএনপি শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। তাদের নেতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। তারা ২০-২৫ হাজার লোক নিয়ে এক দফা ঘোষণা করেছে। তাদের মোকাবিলা করা হবে।
আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, কিসের এক দফা? আসলে এই দেশের উন্নয়ন ওদের সহ্য হয় না। দেশের মানুষ খেয়ে পড়ে উন্নত বাংলাদেশ দেখুক এটা ওদের সহ্য হয় না। তিনি বলেন, ওরা বলে নির্বাচন বর্জন করবে, প্রতিহত করবে। আগেও এগুলো করেছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। আপনারা প্রস্তুত ত থাকবেন। তিনি আরো বলেন, এবার যে হাতে আগুন দেবে সেই হাত ভেঙ্গে দেওয়া হবে।
মার্কিন কূটনীতিকদের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, বিএনপি দেশের বাইরে ঘটক ধরেছে। সেই ঘাটকরা এখনো বাংলাদেশে আছে। ওরা নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল...। তিনি আরো বলেন, একাত্তরে আমাদের অনেক বন্ধু ছিল। সেই বন্ধুরা এখনো আমাদের সঙ্গে আছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি এক দফা ঘোষনা করার কথা বলছে। তারা মাঝে মধ্যে এক দফা ঘোষণা করে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার এখনো টিকে আছে। অতীতে তাদের এক দফার আন্দোলন বেলুনের মতো ফুটো হয়ে গেছে। এই বারও ফুটো হয়ে যাবে। কোনো দিন বাস্তবায়ন হবে না। বিষধর সাঁপের খোলসের মতো তারাও বদল করে।
বিএনপির গতকালের সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশের উদ্দেশ্যে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরী করা। দেশে বিশেষ ধরনের হামিদ কারজাই (আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট) মার্কা সরকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি এই সমাবেশ করছে।
এ দিকে আওয়ামী লীগের ওই শান্তি সমাবেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলাপূর্ণ দেখা যায়। যাতে দলটির নেতারাও ব্যাপক বিরক্ত হয়েছেন। এমনকি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও নিজ বক্তব্যে মধ্যে ওই সমাবেশের শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, আমি এমন মঞ্চ চাইনা। শৃঙ্খলা থাকতে হবে। এত নেতা আমার দরকার নেই।
সমাবেশের শুরুতে মঞ্চের এক পাশে চেয়ার-ছুড়াছুড়ি করেন দলের কর্মীরা। সমাবেশের শুরুতে দুই পক্ষের মধ্যে এমন এমন মারামারির এক পর্যায়ে এমন চেয়ার ছুড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এ সময় মঞ্চ থেকে সমাবেশের ও মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি বলেন, এই তোমরা বসে পড়ো, কোন বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। মঞ্চে উপস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, পৌনে দুইটার দিকে মহানগর দক্ষিণের মন্নাফি ভাইয়ের সমর্থকরা মঞ্চের সামনে চেয়ার বসে যান, এ সময় রুাপগঞ্জ থেকে গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে একটি মিছিল মঞ্চের সামনে চলে আসে, তখন বসাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সমাবেশ দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যানারে ঘিরে যায় মঞ্চের সামনের পুরো অংশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের প্রায় সবাই তাদের বক্তব্যে বলছেন, ব্যনার নামানোর কথা। বারবার বললেও কোন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নেতাদের কথা শুনে নি। এক পর্যায়ে মঞ্চ থেকে বলা হয়, ব্যনার না নামালে রাজনীতি শিখিয়ে দেবো এমন হুমকি ধামকি দিলেও তৃনমূলের নেতা-কর্মীরা তা শুনেন নি। এক পর্যায়ে মঞ্চ থেকে নেতারা বলছেন, বহিস্কার করবো। এমনকি বলতে বলতে হতাশ হয়ে কেউ কেউ বলছেন, কেউ কথা শুনে না। মঞ্চে নিজের বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আপনারা ব্যানার গুলো নামান, আজকের এই সমাবেশ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইট থেকে নগর ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের নেতারা সামনে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। আপনারা ব্যনার গুলো নামিয়ে ফেলুন।এর আগে আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, আপনার মঞ্চকে ব্যনার দিয়ে ঢেকে ফেলেছেন, আপনারা ব্যনার নামিয়ে ফেলুন। পরে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম মাইকের সামনে গিয়ে বহিস্কার সহ রাজনীতি শিখিয়ে দেবো বলে হুমকি দিলেও কোন কাজে আসে নি। এর পরে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, আজকে আমাদের শান্তি সমাবেশ, ব্যনারগুলো গুটিয়ে ফেলুন, ব্যনার গুটান। কেউ কথা শুনে না..., সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, বহিস্কার করবে তবুও কেউ কথা শুনে না।
ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম, দলের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ দলেরও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
তিলকের সেঞ্চুরিতে টি-টোয়েন্টির নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে জিতল ভারত
বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি ছাড়লেন আবু সাঈদের দুই ভাই
মেন্ডিসের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে জয়ে শুরু শ্রীলঙ্কার
রিয়েলিটি শো’র প্রধান বিচারক নাজনীন হাসান খান
অনেক দিন পর সায়ানের একক কনসার্ট
ছাত্র আন্দোলনে ফারুকী ভাইকে মাঠে দেখিনি-হিরো আলম
ঈশ্বরগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে তিন চোর আটক
আসিফের গানের মডেল গণবিপ্লবের ভাইরাল কন্যা সিঁথি
গাজায় যুদ্ধ শেষ করার সময় এসেছে : অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন
বন্য হাতির সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ উপদেষ্টা
সরকারি কৌঁসুলির নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে পটুয়াখালীতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিল
সরকারি অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের দিয়ে কাজ করানোর পর বখশিশ দেওয়া প্রসঙ্গে?
শিক্ষা প্রশিক্ষণের সর্বস্তরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা অত্যাবশ্যক
আল্লামা আলহাজ¦ আবুবকর সিদ্দিকি ফুরফুরাভীর জীবন ও কর্ম
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবারও সিন্ডিকেটের আশঙ্কা রামরুর আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ
আখেরাতের বাসিন্দা মানুষ মুসাফির দুনিয়ায়
হযরত রাসূল (সা) ঃ আধার রাতে,আলোর প্রদীপ
প্রশ্ন: মসজিদে পানাহারের শরয়ী বিধান কি?
নোয়াখালীতে বিএনপির তিন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি
পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে জুলাই বিপ্লবে আহতদের অবরোধ