সরকারের চরম অব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি : ড্যাব
১৩ জুলাই ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই সিটির মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত এবং শাস্তির আওতায় আনা দরকার বলে মনে করে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সারাদেশে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ড্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ড্যাবের সভাপতি প্রফেসর ডা. হারুন আল রশিদ।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত। তারা যেভাবে জরিমানা করছে সেটি উদোর পিÐি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা। তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে ড্যাবের কিছু কর্মসূচি থাকবে বলে তিনি জানান।
লিখিত বক্তব্যে ডা. আবদুস সালাম বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। বিগত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলেও এই বছর এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস সত্যেও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উদাসীনতায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভবনা রয়েছে। বিশেষত আগামী অগাস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তনের আভাস ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবেই বলা হচ্ছে দেশের ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পরেছে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- বাংলাদেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে বড় আঘাত হানে ২০১৯ সালে। ওই বছর ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং সারা বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০ জন। সরকারি হিসাব মতে, ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ৬২ হাজার ৩২১ ও ২৮১। তবে দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনো দেখা যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২০৮ জন। মারা গিয়েছিলেন ৮ জন।
ডা. সালাম বলেন, এই বছর এখন পর্যন্ত পাওয়া সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইতোমধ্যে দেশে ডেঙ্গুতে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০ হাজার ২৯২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং ৯ হাজারের বেশি আক্রান্ত ব্যাক্তি চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের তথ্যমতে, দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাব থেকে অনেক বেশি। অন্যান্য সকল বিষয়ের মতো ডেঙ্গু মহামারীর সময়েও সরকার তথ্য নিয়ে মিথ্যাচার বা লুকোচুরি করে যাচ্ছে। বিগত কয়েকদিন যাবত গড়ে প্রতিদিন ৬০০ এর কাছাকাছি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যদিও এ হিসাব ঢাকার ৫৩টি হাসপাতাল ও বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য। এই হাসপাতালগুলো ছাড়াও ছোট বড় অনেক বেসরকারি ক্লিনিক ও বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও অনেক রোগী। যেসব ক্লিনিক বা হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তথ্য পাঠায় না, সেই রোগীদের হিসাব ডেঙ্গু পরিসংখ্যানে যুক্ত হয় না।
তারা বলেন, ডেঙ্গুতে প্রাণহানি কমানো এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোগী দ্রæত শনাক্ত জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা বললেও নেওয়া হচ্ছে না তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ।
পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করে ড্যাবের মহাসচিব বলেন, সিটি করপোরেশনগুলো কার্যক্রম জোরালো উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এই মুহূর্ত থেকেই সারাদেশে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত এবং ধ্বংসের উদ্যোগ নিতে হবে। ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সারাদেশে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে তাদের পরামর্শ মোতাবেক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলার জন্য চিকিৎসা অবকাঠামো প্রস্তুত এবং ২৪ ঘন্টা ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।
ড্যাবের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব ও হেমাটোলজিস্ট ডা. আদনান হাসান মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. রেজওয়ানুর রহমান সোহেল, প্রকাশনা সম্পাদক ডা. মো. জাফর ইকবাল, ঢাকা দক্ষিণ ড্যাবের সভাপতি ডা. দিদারুল আলম, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সায়েম বাবু, ডা. ইব্রাহিম রহমান, নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি বিলকিস জাহান চৌধুরী, এ্যামট্যাবের সভাপতি বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, ফিজিওথেরাপিস্ট মাহাতাব উদ্দিন প্রমুখ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব
কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই