এডিস মশার লার্ভা
১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:০২ পিএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম
যেখানে অভিযান সেখানেই
চট্টগ্রামে ঘণ্টায় দুই জন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হাসপাতালে
চট্টগ্রামে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন গড়ে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। সেই হিসাবে হাসপাতালে ঘণ্টায় রোগী আসছেন দুই জনের বেশি। ডেঙ্গুর নজিরবিহীন এমন ভয়ঙ্কর রূপেও নেই জনসচেতনতা। সেখানে অভিযান সেখানেই মিলছে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার লার্ভা। স্কুল, বসতঘর, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, হাসপাতাল ভবন এমনকি চিকিৎসকের বাড়িতেও মিলছে এডিসের লার্ভা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সিটি কর্পোরেশনের অভিযান আর জরিমানা করেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যাবে না, এ জন্য দরকার সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা। নগরবাসী সচেতন হয়ে নিজ নিজ আঙ্গিনা বাড়ির ছাদ ও আশপাশ পরিষ্কার না করলে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব কমানো যাবে না। তাতে ডেঙ্গু জ¦রের ভয়াবহ প্রকোপও রোধ করা যাবে না। এবার ভরা মওসুমের আগেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। ফলে এখন থেকে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়া না গেলে সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীর জন্য পৃথক ওয়ার্ড না থাকায় হাসপাতালে অন্য রোগীরাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। কারণ ডেঙ্গু রোগীদের সাধারণ ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীদের সাথে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭৩ জন। গতকাল নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন।
একটা নির্দিষ্ট সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব হলেও গত দুই বছর ধরে বছরের বেশিভাগ সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ চলছে। তবে চলতি বছর আগে ভাগেই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, মূলত ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে মশার লার্ভার সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে এডিস মশার প্রজনন ঘটছে। এ কারণেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে।
সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে এবার ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিতে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়। তবে তা আমলে নেয়নি সিটি কর্পোরেশন। তবে গেল মাসের শেষ দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকলে টনক নড়ে কর্পোরেশনের। চলতি মাসের শুরুতেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ চার মৃত্যুর পর মশা মারতে তোড়জোড় শুরু হয়। নামানো হয় ড্রোন। এই ড্রোন দিয়ে নগরীতে চলছে এডিস মশার লার্ভা চিহ্নিত করার অভিযান। গত ৯ জুলাই থেকে অভিযানে প্রতিদিনই মিলছে এডিসের লার্ভা। প্রথম দিনে নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির একটি বাড়ির সুইমিংপুলে এডিসের লার্ভা মিলে। ওই দিন সাতটি ভবনের ছাদে পাওয়া যায় লার্ভা।
গত বুধবার নগরীর অভিজাত খুলশী আবাসিক এলাকায় একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল ও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বাড়ির আঙ্গিনায় জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। ছাদ বাগানে ফুলের টবের পাশাপাশি খালিপাত্র বা ড্রামে জমে থাকা পানিতে হাজার হাজার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এসব পানি পরিষ্কার করলে খুব সহজেই মশার প্রজনন ঠেকানো যায়। সিটি কর্পোরেশন নগরীর ৬০টি আবাসিক এলাকায় ভবনের ছাদে অভিযান পরিচালনা করার জন্য একটি মাত্র ড্রোন নামিয়েছে। আর নগরীতে সরকারি-বেসকারি মিলে হোল্ডিংয়ের সংখ্যা দুই লাখ ছয় হাজার ৯৭৫টি। ফলে নিজেদের উদ্যোগে এসব ভবনে মশার প্রজননকেন্দ্র ধ্বংস না করলে ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়তেই থাকবে।
অভিযান পরিচালনাকারী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ বলছেন, যেসব মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই ডেঙ্গুর বাহক এডিসের লার্ভা। অন্যন্য মশার লার্ভাও পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেটা অনেক কম। আবাসিক এলাকায় অসচেতনতার কারণে জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন হচ্ছে। স্বচ্ছ পানিতেই এখন বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। সবাই নিজ নিজ বাড়ি ঘর পরিষ্কার রাখলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধ করা সহজ হবে বলে মনে করেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র জরিমানা করেই মশার উপদ্রব থেকে বাঁচা যাবে না। এ জন্য দরকার জনসচেতনতা।
এদিকে গতকাল নতুন করে ৫২ জনসহ এই পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৬৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৭৩ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৯২ জন। মারা গেছেন শিশুসহ ১৩ জন। বিগত তিন বছর ধরে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ২০২২ সালে রেকর্ড সংখ্যক চার হাজার ৪৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ওই বছর মারা যান ৪১ জন। ২০২১ সালে ২৭১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল, মারা যান ৫ জন।
সচেতন হওয়ার আহŸান চেম্বার সভাপতির : ডেঙ্গু প্রতিরোধে চট্টগ্রামবাসীকে সচেতন হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজ নিজ বাড়ির ছাদ, আঙ্গিনা, নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলা ও ছাদ, ডাবের খোসা, ফুলের টব ইত্যাদিতে পানি জমিয়ে না রাখার আহŸান জানান তিনি। সেইসাথে সিটি কর্পোরেশনকে মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ জানান চেম্বার সভাপতি। পর্যাপ্ত পরিমাণ মশার ঔষধ সরবরাহ করে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার আহবান জানান চেম্বার সভাপতি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড স্থাপন করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করারও আহŸান জানিয়েছেন মাহবুবুল আলম।
খুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০০ পার হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত বুধবার পর্যন্ত খুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৮। গতকাল বৃহস্পতিবার বেড়ে এ সংখ্যা ১০২ এ দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে একজন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন, চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৫ জন। এদিকে, ডেঙ্গুর সংক্রমন বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেনি সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি থেকে জানান, পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বাড়ছে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম হলেও ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, গত ১০ দিনে জেলায় ১৯১ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত রয়েছে। যারমধ্যে জুরাছড়ি উপজেলায় ৫৩ জন। রাঙামাটির উপজেলাগুলোর মধ্যে জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বরকল ও বিলাইছড়িতে রোগী বেশি পাওয়া যায়।
জেলায় ম্যালেরিয়ায় মে মাসে রোগী ছিল ৩৬২ জন, জুনে ৬৬৭ জন। যার মধ্যে শুধু জুুরাছড়ি উপজেলায় চলতি বছর মার্চে ৫৫ জন, এপ্রিলে ৭৯, মে মাসে ২৩৩, জুন মাসে ২৩৬ জন। ডেঙ্গুতে রাঙামাটিতে জনু মাসে ৫ জন, জুলাই মাসে ১১ তারিখ পর্যন্ত ৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে একজন রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এদিকে রাঙামাটি পৌরসভার উদ্যোগে ডেঙ্গু রোধে শহরের বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম জোরদার শুরু করেছে। মশক নিধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া যেসব স্থানে এডিস মশা ডিম দেয়, তা পরিষ্কার করা হচ্ছে।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী বলেন, ম্যালেরিয়া রোগী দেশের ২৯ ভাগ রাঙামাটিতে। যারমধ্যে দুর্গম এলাকায় সবচেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে সাড়ে তিন লাখ মশারি বিতরণ করা হয়েছে। ব্র্যাকের সহযোহিতায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থসেবা চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গুর রক্ত পরীক্ষা আগামী ১ মাস ফ্রিতে করা যাবে। জ্বর হলেই যেন সবাই রক্ত পরীক্ষা করায়। বাড়ির আসে পাশে পরিষ্কার করার অনুরোধ জানান তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব
কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই