বিশ্ব জুড়ে তীব্র বন্যা, দাবানল ও দাবদাহে মহা বিপর্যয়ের সংকেত
১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:০৭ পিএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম
পৃথিবী এখন বিগত বছরগুলির থেকে অনেক বেশি উত্তপ্ত, এবং আবহাওয়ার সতর্কবার্তাগুলির গ্রহটির আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ভার্মন্টে দুই মাসের বৃষ্টিপাত মাত্র দুই দিনেই সংঘটিত হয়েছে। ভারত ও জাপান চরম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। টেক্সাস, ফ্লোরিডা, স্পেন এবং চীনের তীব্র দাবদাহ রাস্তাগুলিকে জ¦ালিয়ে দিচ্ছে। এবং পৃথিবীর দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি তীব্র তাপপ্রবাহও তৈরি হচ্ছে। সেখানে সমুদ্রের তাপমাত্রা আশঙ্কার থেকেও বেশি হারে বেড়েছে এবং কানাডা এখনও নজিরবিহীন দাবানলে জ¦লছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক ধোঁয়ার কুন্ডলী ছড়িয়ে পড়ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এই গোলযোগগুলি সৃষ্টি হয়েছে এবং ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে নিশ্চিতভাবে এগুলি তীব্রতর হতে থাকবে। গবেষণা দেখা গেছে যে, প্রাক শিল্প যুগের পর বেড়েছে মানুষের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, বিশেষত জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.২ ফারেনহাইট)। মার্কিন জলবায়ু পরিবর্তনের আন্ত:সরকারি প্যানেল অনুসারে, মানুষের যাতায়াত, জ¦ালানী শক্তি উৎপাদন এবং খাদ্য উৎপাদনের পদ্ধতিকে আম‚ল পরিবর্তন না করলে, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৫.৪ ফারেনহাইট) এরও বেশি বৃদ্ধি পাবে, যাতে এই বছরের দুর্যোগকেও হালকা মনে হবে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফ্রেডেরিক অটো বলেছে যে, উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মের আগমন এবং এল নিনোর আবহাওয়ার ধরণ ফিরে আসা, যা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়াতে প্রভাব খাটায়, এই সময়ে একযোগে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু মানব-সৃষ্ট আবহাওয়া পরিবর্তনের পটভ‚মি এই বিপর্যয়গুলিকে আগের চেয়ে আরও খারাপ করে তুলছে। তিনি বলেন, ‹আবহাওয়া পরিবর্তন ব্যতিত যে দিন আমরা স্বাভাবিক দেখে এসেছি, তা এখন একটি মারাত্মক তাবদাহে অবিবাহিত হয়। এক সময় যা ছিল একটি সাধারণ গ্রীষ্মকালীন বজ্রঝড়, এখন একটি বিপর্যয়কর বন্যার কারণ। এবং গ্রহটির জন্য যে একটি দিনের সাধারণভাবে উষ্ণ থাকার কথা, সেই ৪ জুলাই ছিল এই বছরের সবেথেকে উত্তপ্ত দিন।’
পৃথিবীর বর্তমান বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬২.৬ ফারেনহাইট) গত ১কোটি ২৫হাজার বছরের মধ্যে উষ্ণতম। গবেষকরা বলছেন, যখন তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে যায়, বা যখন এটি অতিরিক্ত আর্দ্রতার সাথে সংমিশ্রিত হয়, তখন মানুষের শরীর ঘামের মাধ্যমে ঠান্ডা রাখা আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। শিশু এবং বয়স্ক, সেইসাথে বহিরঙ্গন কর্মীরা এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের ভয়াবহ পরিস্থিতি ঘটতে পারে। উডওয়েল ক্লাইমেট রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী জেনিফার ফ্রান্সিস আশঙ্কা করছেন যে, ক্রমবর্ধমান তাপ একটি মারাত্মক মৃত্যুহার সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, ‹কিছু জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এই জিনিসগুলি ঘটা উচিত নয়। এসবকিছুই এই বাস্তবতার সাথে যুক্ত যে, আমরা গ্রহটিকে উত্তপ্ত করছি।›
মারাত্মক খরা এবং দাবানল এই গ্রীষ্মে কানাডাকে বিপর্যস্ত করেছে। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাপমাত্রা সপ্তাহান্তে ১শ’ ডিগ্রিতে পৌছে দাবানলের তীব্রতা বাড়িয়েছে, যা ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। এই ঘটনার উল্টো দিক হল যে, একটি উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুমÐল ঝড়ের সময় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এবং অতি বৃষ্টিপাতের প্রভাব দরিদ্র দেশগুলিতে আরও বিপর্যয়কর, যেখানে জনগণ এবং সরকারের কাছে মোকাবেলা করার জন্য অনেক কম সংস্থান রয়েছে। স্থলভাগে সাম্প্রতিক চরমআবহাওয়ার তীব্রতা বিশ্বের মহাসাগরগুলির উত্তাপের সাথে যুক্ত হয়েছে। বৈশ্বিক গড় সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই বসন্তে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং এই অংশের গ্রীষ্মে গড় তাপমাত্রার তুলনায় এটি প্রায় এক ডিগ্রি সেলসিয়াস (১.৮ ফারেনহাইট) বেশি।
আটলান্টিক মহাসাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরের তাপমাত্রা সম্ভবত এই বছরের হারিকেনের মরসুমে আরও শক্তি যোগাবে, ঝড়কে আর্দ্র এবং আরও তীব্র করে তুলবে। এবং দক্ষিণ মেরুর কাছে উত্তপ্ত মহাসাগরগুলি সাধারণত অ্যান্টার্কটিকাকে ঘিরে থাকা ঠান্ডা পানির স্রোতকে ব্যাহত করছে বলে মনে হয়। এই ফেব্রæয়ারিতে, টানা দ্বিতীয় বছরের জন্য মহাদেশটির চারপাশে সামুদ্রিক বরফের পরিমাণ অতান্ত কম। এখন, অ্যান্টার্কটিকা তার বরফ পুনরুদ্ধারের জন্য দুর্দশাজনকভাবে ধীর গতিতে কাজ করছে। এটি অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহগুলির জন্য খারাপ খবর, যেগুলিকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কা থেকে রক্ষা করার জন্য সামুদ্রিক বরফের প্রয়োজন। ৩০ বছরব্যাপি আলাস্কা তেল উন্নয়ন উইলো প্রকল্প, ২৩কোটি ৯ লাখ মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে তা অনুমোদন করতে দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন গবেষক বেজনার কের। তিনি বলেন, আমরা বসবাসের অযোগ্য গ্রহ তৈরি করছি, তা অবলোকন করতে মানুষের আর কী লাগবে?›
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব
কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই