ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
মানসিক চাপে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা

অভাবের তাড়নায় স্বামী-স্ত্রীর আত্মহত্যা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৬ জুলাই ২০২৩, ১১:২৯ পিএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০৬ এএম

অর্থনৈতিক সংকট, পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনার চাপসহ নানামুখী কারণে বিষণœœতায় আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। অভাবের তাড়নায় রাজধানীর পূর্ব রামপুরার তিতাস রোডের একটি বাসায় স্বামী-স্ত্রীর আত্মহত্যা করেছেন। তারা হলেন-দিনমজুর জুয়েল মিয়া (২৮) ও তার স্ত্রী গৃহপরিচারিকা নাসরিন আক্তার (২২)। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে পূর্ব রামপুরা তিতাস রোডের একটি টিনশেড ঘর থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এনামুল হক বলেন, সর্বত্র আজ নীতি নৈতিকতার অবক্ষয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। যার কারণে বিপথগামী হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু থেকে মধ্য বয়েসীরা। অবাধ ইন্টারনেট, হাতের মুঠোয় পর্নো, ভারতীয় আকাশ সাংস্কৃতির চরম আগ্রাসন গোটা সমাজকে গ্রাস করেছে। পারিবারিক বন্ধন আলগা হয়ে যাচ্ছে। অবাধ মেলামেশা, মাদকাসক্তি আর হতাশা বিষণœতায় ভরে যাচ্ছে চারিদিক। আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এসব কারনে আত্মহত্যা বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন, আত্মহত্যার প্রবনতা উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে। তা কমিয়ে আনতে সমাজের মানুষদের ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ. প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এর বাইরে ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেলের সিরিয়াল মারাত্মকভাবে প্ররোচনা যোগাচ্ছে আত্মহত্যার দিকে। আকাশ সাংস্কৃতির আগ্রাসনের লাগাম টেনে ধরা জরুরি হয়ে পড়েছে।

কী কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ইনকিলাবকে বলেন, দাম্পত্য জীবনে কলহ, পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা, হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার প্রবণতা, দারিদ্র্য বা অর্থ সংকট, বিষন্নতা ও হতাশাই আত্মহত্যার চিন্তায় ফেলে প্রভাবিত করে। আত্মহত্যা যারা করছে, তাদের একটি বড় অংশ মাদকাসক্ত। করোনার কারণে বিষণœতা ও হতাশাগ্রস্ত মানসিক রোগী বেশি আসছে। তবে এমনটা বলা যাবে না যে, এ কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।
গতকাল বুধবার রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রামের বাসিন্দা জুয়েল মাটি কাটার কাজ করতেন এবং কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা নাসরিন গৃহকর্মীর কাজ করতেন।

ওসি বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এরপর থেকে রামপুরা একটি টিনসেড ঘর ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন তারা। গত মঙ্গলবার রাতে ফ্যানের একটি হুকের সঙ্গে ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করেন তারা।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা রাত ৩টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ফ্যানের হুকের সাথে দুজন গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। পরে আমরা সিআইডির ফরেনসিক টিমকে খবর দেই। তারা এসে আলামত সংগ্রহ করে। এরপর আমরা লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত শেষে লাশ আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ঘটনা পাইনি।

মৃত নাসরিনের বড় ভাই টিটু মিয়া জানান, গত ৮-৯ মাস ধরে পূর্ব রামপুরার তিতাস রোডে একিট বাড়িতে ভাড়া থাকতেন জুয়েল ও নাসরিন। পাশাপাশি ঘরে ভাড়া থাকেন টিটু মিয়া। গত এক সপ্তাহ ধরে নাসরিন জ্বরাক্রান্ত ছিলেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে তিনি কাজ থেকে বাসায় ফেরেন। তখন তার স্ত্রী ও মেয়ের কাছে জানতে পারেন, দুপুরের পর থেকে নাসরিন এবং জুয়েলকে তাদের রুমের দরজা খুলতে দেখেননি তারা। রান্না করতেও দেখেননি। তখন টিটু মিয়া তাদেরকে ডাকাডাকি করেন। তবে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বাড়িওয়ালার মাধ্যমে রুমের দরজা খুলেন। এরপর ভেতরে ঢুকে দেখেন একটি ফ্যানের সাথে দুইটি ওড়না বেঁধে জুয়েল ও নাসরিন গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন।সঙ্গে সঙ্গে তারা থানায় খবর দেন।

নাসরিনের ভাই জানান, তার বোনের জ্বর হওয়ার পর ওষুধ কিনার টাকা তাদের কাছে ছিল না। দিনমজুর জুয়েল তেমন কাজও পাচ্ছিলেন না। তাই তাদের সংসারে অভাব তীব্র আকার ধারণ করে। তার ধারণা টাকার অভাবে তার বোন ও তার স্বামী একসঙ্গে আত্মহত্যা করতে পারে।

৯৯৯-এর পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বলেন, আমরা গত কয়েক মাসে দেড় হাজার আত্মহত্যা ঠেকিয়েছি। ৯৯৯ হচ্ছে জরুরি সেবা। আমাদের কাছে অনেক সময়ই আত্মহত্যা চেষ্টার তথ্য জানিয়ে কল এসে থাকে। অনেক সময় ভিকটিম নিজেই কল দিয়ে আমাদের কাছে জানান যে, তিনি পারিবারিক কিংবা কোনো খারাপ লাগার কারণে এই কাজ করছেন। এক্ষেত্রে আমরা কৌশলে তার অবস্থান জেনে নিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা করে থাকি। এছাড়া অনেক সময় প্রতিবেশী কিংবা ভিকটিমের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কল দিয়ে আমাদের জানান। এক্ষেত্রে আমরা ভিকটিমের অবস্থান জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা