অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে যেন এক মুঠো রোদ্দুর আমার দুচোখ ভরে তুমি এলে....। ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বেঁচে থাকলে এখন হয়তো তার গানের কথাগুলো এভাবে লিখতে পারতেন না। এখন হয়তো তিনি লিখতেন, অনেক রোদ্র-তাপের পরে তুমি এলে যেন কফোটা বৃষ্টি আমার ঠোটের পরশে তুমি এলে...। প্রকৃতিতে আবহাওয়ার যে বৈরী আচরণ তাতে এখন বর্ষাকালেও বৃষ্টির প্রার্থনা করতে হচ্ছে। অনেক বৃষ্টির পর সামান্য রোদ নয়, এখন অনেক রোদে পোড়ার পর একটু বৃষ্টির প্রত্যাশা সবার।

প্রকৃতিতে চলছে তাপদাহ এবং খরা। ভরা বর্ষায় নেই বর্ষণ, মাঠ ফেটে চৌচির। এর বড় প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে বছরে খরায় ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমি। টাকার অঙ্কে তা ২ হাজার ৭৩৪ কোটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অত্যধিক তাপমাত্রা, নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়া, বন উজাড় এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আগামী দিনগুলোতে আরও বড় খরা অপেক্ষা করছে বলেও সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় খরার প্রভাব আগামী ৫০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ ও মধ্য-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা তাদের।

শ্রাবণ মাস চলছে। এই ভরা বর্ষাতেও দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা নেই। আপাতত টানা ও ভারী বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। প্রচন্ড গরম থেকে বাঁচতে কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিল ঢাকাবাসী। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি হল, তবে তা খুব সামান্য।

গতকাল বেলা পৌনে ১ টার দিকে হঠাৎ করে ঢাকার মালিবাগে বাতাসসহ বৃষ্টি শুরু হয়্ মিনিট পাঁচেক পরেই তা মিলিয়ে যায়। একই সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়ও বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এই মাসের বাকি কদিন দেশের কিছু কিছু জায়গায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামার মত পরিস্থিতি হবে না।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, বর্ষাকালে এত অল্প পরিমাণ বৃষ্টি আসলে প্রত্যাশিত না। তবে এটা প্রকৃতির ধরণ। কোথাও একেক বছর বেশি বৃষ্টি হয়, কোথাও কম হয়। যেমন আমাদের এই অঞ্চলে এ বছর বৃষ্টি নাই। কিন্তু ভারতের উত্তরাখ-সহ কিছু এলাকায় কিন্তু অনেক বৃষ্টি, বন্যা পর্যন্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টির প্রভাবে ঢাকাসহ সারাদেশের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। উপকূলের দিকে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হবে। কারণ সাগরে সুস্পষ্ট একটা লঘুচাপ আছে। যার জন্য কিন্তু বাতাসও বেশি। সাগরের লঘুচাপটি শুক্রবারের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও মৌলভীবাজারের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় তাপ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘন্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, ময়মনসিংহ, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। গতকাল রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।