মানব-সৃষ্ট আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝিতে বা সম্ভবত ২০২৫ এর পর থেকে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (এএমওসি)। এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। এএমওসি হল গ্রীষ্মমন্ডল থেকে উত্তর আটলান্টিকে উষ্ণ পানি বহন করে আনার জন্য সমুদ্রের স্রোতের একটি বৃহৎ প্রক্রিয়া। মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, এই ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং পৃৃথিবীর অন্যত্র অর্থাত বিশ^জুড়ে দ্রুত আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, যদি এটি ঘটে, তাহলে, এএমওসি ইউরোপে একটি বরফ যুগ এবং বোস্টন ও নিউ ইয়র্কের মতো শহরগুলিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে আরও শক্তিশালী ঝড় ও হারিকেন নিয়ে আসবে, এটি মধ্য ও পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বৃষ্টি এবং তুষারপাতে ব্যাপক হ্রাস ঘটাবে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এএমওসি বিপর্যয় বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি।
গত ১শ’৫০ বছরের সমুদ্রের তাপমাত্রার তথ্য এবং আধুনিক পরিসংখ্যান সরঞ্জাম ব্যবহার করে গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ২০২৫ এবং ২০৯৫ সালের মধ্যে এএমওসি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৫শতাংশ। এএমওসি হল সমুদ্রের পানি এবং বাতাসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবাহক চক্র, যা আবহাওয়া তৈরি করে। উষ্ণ ও নোনা পানির উপসাগরীয় স্রোত বরাবর গ্রীষ্মমন্ডল থেকে মার্কিন পূর্ব উপকূল হয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে চলে যায়, যেখানে এটি শীতল হয়, গভীরে ডুবে যায় এবং দক্ষিণে চলে যায়। এটি যত দ্রুত বাহিত হয়, তত বেশি পানি উষ্ণ থেকে অতি শীতলে পরিণত হয়। চক্রটি উত্তর ইউরোপকে অন্যান্য স্থানের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি বেশি উষ্ণ রাখে এবং উত্তর আমেরিকার উপকূলে ঠান্ডা পানি বয়ে আনে। প্রকাশিত গবেষণাটির মূল লেখক জার্মানির পট্সদাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের নিকলাস বোয়ার্স বলেছেন, 'আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন সত্যিই আমাদের গ্রহের মূল সঞ্চালন ব্যবস্থাগুলির মধ্যে একটি।’
গবেষণাটির সহ-লেখক পিটার এবং সুসান ডিতলিইসেন বলেছেন যে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ, যা গ্রীনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়ার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। উত্তর আটলান্টিকে প্রবেশ করা গ্রিনল্যান্ডের এই অতিরিক্ত গলিত মিঠাপানি যখন উত্তর আটলান্টিকে প্রবেশ করে, তখন তা চারপাশের লবণাক্ত সামুদ্রিক পানির চেয়ে হালকা থাকে। এই অতিরিক্ত মিঠাপানি নোনাপানির স্বাভাবিক ডুবে যাওয়াকে দুর্বল দেয়, এমনকি একসময় বন্ধও করে দিতে পারে, যা এএমওসিকে ব্যাহত করে দিয়ে সম্ভাব্যভাবে বড় আবহাওয়া বিপর্যয় ঘটাবে। তিনি বলেন, ‘যদি এএমওসি চক্র ভেঙে পড়ে, তাহলে এটি আবহাওয়ার ধরণ এবং সমুদ্রের স্রোতের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে, যা উল্লেখযোগ্য জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করবে।' পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল মান বলেন, ‘এএমওসি'র বিপর্যয়ের সময়টি নিয়ে এখনও বড় অনিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু নতুন গবেষণায় প্রমাণ যোগ হয়েছে যে, এটি কয়েক বছর আগে আমরা যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক কাছাকাছি।' সূত্র : ইউএসএ টুডে।