খনন হচ্ছে ধরলা নদী
২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি পুরাতন নদী ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর সারা বছর পানি ধরে রাখতে নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে ড্রেজিং কাজ করেছে সরকার। প্রায় ৬০ কি.মি. ধরলা নদীর খননের জন্য ৭টি ঠিকাদারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ধরলা নদীর খননের কাজ শুরু হচ্ছে। এদিকে তুলাই নদীতে রাবার ড্যাম এবং পুনর্ভবা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে দিনাজপুরে বিআইডবিøউটিএ’র অফিস ভবন, তুলাই নদীতে রাবার ড্যাম, পুনর্ভবা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজের আগামী শনিবার ভিত্তিপ্রস্থর উদ্ধোধন করবেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ৪টি পুরাতন গুরুত্বপূণ নদী ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর সারা বছর পানি ধরে রাখতে নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে কাজ হচ্ছে। ধরলা নদীর খননের জন্য ৭টি ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ধরলা খনন কাজ শুরু করা হবে। তুলাই নদীতে রাবার ড্যাম এবং পুনর্ভবা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শনিবার শুরু হচ্ছে।
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। নৌপরিবহন ব্যবস্থা একটি সাশ্রয়ী, আরামদায়ক ও পরিবেশ বান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম এ দেশের পরিবহন সেক্টরে। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে ধীরে ধীরে আমাদের এই অমূল্য ঐতিহ্যবাহী নৌপথ হারিয়ে যাচ্ছে। নৌ পথের নাব্যতা ফিরিয়ে এনে দেশের আবহমান ঐতিহ্য পুনঃরুদ্ধারসহ সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটতে পাবে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নৌ-পথের নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে নদীর ড্রেজিং করা অপরিহার্য হয়ে দেখা দিয়েছে। বন্যার নদীর পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টির ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় একদিকে মাছের উৎপাদন ও সেচ কার্যক্রম ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান সরকার দশ হাজার কি.মি. নৌপথ ড্রেজিং এর মাধ্যমে নাব্যতা পুনরুদ্ধারের মহাপরিকল্পনায় “পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার” শীর্ষক প্রকল্প ২০১৮ একনেক সভায় অনুমোদন হয়। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারের বিভিন্ন প্রকল্পের চারটি লটে মোট খরচ হবে ৩৩৬ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ টাকা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) এসব প্রকল্প তদারকি করছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-৩ এর লট-১ এর পূর্ত কাজ ৬১ কোটি ৯২ লাখ ৬৪ হাজার ২০৩ টাকায় এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনকে দেওয়া হয়েছে। ৯৮ কোটি ৬৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৯২৮ টাকার প্যাকেজ-৪ এর লট-২ এর পূর্ত কাজ পেয়েছে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স ও ক্যাসেল কনস্ট্রাকশনের জয়েন্ট ভেঞ্চার। প্যাকেজ-৪ এর লট-৩ এর পূর্ত কাজে খরচ হবে ৮৭ কোটি ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩৫ টাকা, সেই কাজ ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্সকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্যাকেজ-৪ এর লট-৪ এর পূর্ত কাজ ৮৭ কোটি ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৫ টাকায় সোনালী ও এনডিই এর জয়েন্ট ভেঞ্চারকে দেওয়া হয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয়ের চারটি ক্রয় প্রস্তাব ছাড়াও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি প্রস্তাবে অর্থের পরিমাণ ৪৪৬ কোটি ৯৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ টাকা। সম্পূর্ণ অর্থই সরকারি কোষাগার থেকে খরচ করা হবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ কাজগুলো বাস্তবায়ন করবে। গত ২০১৮ থেকে শুরু হয়ে আগামী বছরের ৩০ জুন শেষ হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলা হয়,বৎসরব্যাপী পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযানসমূহ নির্বিঘœ ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা। নির্দিষ্ট নদীগুলোতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধিসহ কৃষি ও মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করা। অব্যাহত পলি অবক্ষেপণ হওয়ার কারণে নদীর গভীরতা কমার সাথে সাথে নদী প্রশস্ততা হারাচ্ছে। যে কারণে বন্যার সময় নদী তীরবর্তী ফসলি জমি ও স্থাপনা ভাঙ্গন কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদী হতে বিদ্যমান চর ও পলি পরিকল্পিতভাবে অপসারণ করা হলে নদীতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। নদীতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে নদী হতে পূর্বের ন্যায় পরিবেশগত ও প্রকৃতিগত সুবিধা লাভে সহায়ক হবে এবং বন্যাকালীন সময়ে নদী তীরবর্তী ফসলী জমি ও স্থাপনা ভাঙ্গন কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। নদী খননের ফলে মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সেচ সুবিধাদি বৃদ্ধি পাবে। ফলে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং প্রকল্পটি নারী ও শিশুদের জন্য ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বৃহত্তর এলাকা জুড়ে নৌ-যোগাযোগ সহজতর হবে যা এ অঞ্চলের আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণে সহায়ক হবে।
ধরলা নদী খনন: নদীটির বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কি.মি. ধরলা নদীর খননের জন্য ৭ টি লটের ঠিকাদারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। নদীটির মোট খননের পরিমাণ ১৩৫ লক্ষ ঘনমিটার। শীঘ্রই খনন কাজ শুরু করা হবে।
তুলাই নদী খনন: তুলাই নদীর ৬৮.০০ কি.মি. দৈর্ঘ্যের নাব্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য পাঁচটি লটের মাধ্যমে গত ২০২০ সালে খনন কাজ শুরু করা হয়। যা ইতোমধ্যে ৯৫% ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ২৬.২৫ লক্ষ ঘনমিটার খনন করা হয়েছে এবং ব্যয় ৪২.৬১ কোটি টাকা। নদীটি সর্বনি¤œ ২০ মিটার হতে সর্বোচ্চ ৩০ মিটার প্রস্থে এবং ২.০৫ হতে ৩.০০ মিটার গভীরতায় খনন করা হয়েছে। তুলাই নদীর খননকৃত অংশে পানি ধরে রাখতে দুটি রাবার ড্যাম ও একটি ওয়্যার নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদ খনন: ব্রহ্মপুত্র নদের বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কি.মি. এবং প্রস্থ ২০০ মি.। ব্রহ্মপুত্র নদে ১৬৯৪ লাখ ঘনমিটার খননের মাধ্যমে ২২০ কিলোমিটার নাব্য করার জন্য খনন কাজ শুরু করা হয়েছে যার প্রাক্কলিত ব্যয় ২৮৯৭.৪০ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে গাজীপুরের কাপাসিয়া টোক থেকে জামালপুর পর্যন্ত ১৯১ কিঃ মিঃ ২০টি লটের খনন কাজ চলমান রয়েছে।
পুনর্ভবা নদী খনন: পুনর্ভবা নদীর ৭৮.০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নাব্যতা পুনরুদ্ধারে ১৪৫.৫৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সাতটি প্যাকেজের মাধ্যমে ৮৯.১৯ লাখ ঘনমিটার খননের লক্ষ্যে গত ২০২২ থেকে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৯.৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২.২৯ লক্ষ ঘনমিটার খননের মাধ্যমে পুনর্ভবা নদীর ৪৭.১৩ কিলোমিটার অংশ নাব্যতা ফিরে আনার কাজ করা হয়েছে। নদীটি সর্বনি¤œ ৮ মিটার হতে সর্বোচ্চ ৯০ মিটার প্রস্থে এবং ১.০৫ হতে ৩.০০ মিটার গভীরতায় খনন করা হচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসে এ খনন কাজ শেষ করা হবে। পুনর্ভবা নদীর খননকৃত অংশে পানি ধরে রাখতে একটি রাবার ড্যাম-ওয়্যার এবং কাঞ্চনসেতু এলাকায় নদীর দুপাশে জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার” শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিআইডবিøউটিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার দশ হাজার কি.মি. নৌপথ ড্রেজিং এর মাধ্যমে নাব্যতা পুনরুদ্ধারের মহাপরিকল্পনায় “পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার” শীর্ষক প্রকল্প ২০১৮ একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। তখন থেকে অনেক কাজ শুরু করা হয়। পর্যাক্রমে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার কাজ আগামী বছর জুনমাসে শেষ করা হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস
শুল্ক-কর বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহার দাবি নাগরিক কমিটির
আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত দাবিতে টঙ্গীতে বিক্ষোভ মিছিল
বন্দরে সাবেক কাউন্সিলর আ. লীগ নেতা সিরাজকে সমাজচ্যুত ঘোষণা
ফ্যাসিবাদের দরজা বন্ধ ছাড়া কোনো নির্বাচন নয় -ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
‘নির্দোষ প্রমাণে ব্যর্থ হলে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে নেবো’
ড. ইউনূসের পাঁচ মামলা বাতিলে কোনো আইনি দুর্বলতা নেই