নিষ্ঠুরতায় নিঃশেষ মানবতা
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩৫ এএম
প্রথমে দুই হাত এক সঙ্গে বাঁধা হয় শক্ত রশি দিয়ে। এভাবেই দুই পা। এরপর বাঁধা হাত এবং পায়ের মধ্যে ঢুকানো হয় লম্বা বাশ। সেই বাঁশ আবার ঝুলিয়ে রাখা হয় উঁচুতে। এর পর রড দিয়ে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। রাত ১২ টা থেকে ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এহেন নিষ্টুর নির্যাতন চলে কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী আকাশের ওপর। মাত্র ১৪ বছর বয়সি ৭ম শ্রেণীর এ শিক্ষার্থী বাঁচার জন্য কতই না আকুতি করেছিলো। কখনো কান্না আবার কখনো চিৎকার করেছিলেন সজোরে। তার এ চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা। কিন্তু তারা বিষয়টি আঁচ করতে পারেননি। কিন্তু যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তাদের পাষান হৃদয় গলেনি আকাশের আর্তনাদ। ঝুলন্ত অবস্থায় একের পর এক নিষ্ঠুর আঘাতে আকাশ যখন মৃত্যু পথযাত্রী ঠিক সে মুহুর্তে পাশে চেয়ার পেতে আয়েশে সিগারেট ফুঁকছিলেন নির্দেশদাতাদের একজন। নিষ্ঠুরতার এমনই নির্মম চিত্র ফুটে ওঠে তদন্তকারিদের তদন্তে।
গত বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়া বরাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনে এভাবেই চলে স্কুল শিক্ষার্থী আকাশের হত্যাকা-। ঘাতকদের একের পর এক রডের আঘাত নিতে না পারায় কিশোরটি যখন একেবারেই অচেতন ঠিক সে সময়ে ঘাতকদের একজন ফোন করেন কিশোরে স্বজনকে। তিনি এসে আকাশকে বাসায় নেয়ার পরই চিরদিনের জন্য হারিয়ে যান পরপারে। মুত্যর আগে শুধু ফুফুর হাতে এক গ্লাস পানি খেতে পেরেছিলেন আকাশ।
মাহারা সন্তান আকাশের হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ও র্যাবের পৃথক অভিযানে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে ঘটনার সাথে আরো কয়েকজনের জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা মিলেছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
গত শুক্রবার সিরাজগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বাবু ও মো. আব্দুল বারেক বাবুকে (২৩) গ্রেফতার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। অন্যদিকে একই দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন প্রান্ত, ফিরোজ ও অপর এক আসামিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
পুলিশের হাতে গ্রেফতার ২ বাবুকে গতকাল রিমান্ড চেয়ে আদালাতে পাঠায় পুলিশ।
র্যাব জানায়, রড চুরির অভিযোগ দিয়ে কিশোর আকাশকে মারধরের মূলহোতা ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন প্রান্ত। তিনি টিক্কাপাড়া বরাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। মূলত তার নির্দেশনায় ওই ভবনের শ্রমিক ও সিকিউরিটি গার্ডরা মিলে শিক্ষার্থী আকাশে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছিলেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনির উদ্ধার করা নির্যাতনের স্থিরচিত্রে দেখা যায়, ভবনের নিচে একটি ঝুলন্ত বাঁশের সঙ্গে কিশোর আকাশের দুই হাত ও দুই পা মধ্যযুগীয় কায়দায় দড়ি দিয়ে বেঁধে তার শরীর ঝুলিয়ে রাখা। এবং ঝুলন্ত অবস্থায় লোহার রড, লাঠি ও ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বেধরক মারধর ও নির্যাতন করা হয় আকাশের ওপর। লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আকাশের শরীরে জখম করেন ঘাতক আব্দুল বারেক বাবু। আর পাশেই একটি চেয়ারে বসা ছিলেন জহিরুল ইসলাম বাবু। তার হাতেও ছিল লোহার রড। নির্যাতনের ফলে কিশোর আকাশের শরীরে অসংখ্য গুরুতর জখমের সৃষ্টি হয়। পরে ফোন পেয়ে আকাশের ফুফু ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। পরে ভোরের দিকে আকাশের মৃত্যু হয়।
র্যাব জানায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে মোহাম্মদপুরের স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করে শিক্ষার্থী আকাশ ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধু। সেখানকার শ্রমিকরা তাদের ধাওয়া করে। এ সময় অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও আকাশ ধরা পড়ে। নির্মাণ শ্রমিকরা আকাশকে আটক করে তাদের থাকার জায়গায় নিয়ে যায়। পরে নির্মাণাধীন ভবনটির ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেমের নির্দেশে লোহার রড চুরির অভিযোগে আকাশকে রাতভর লাঠি, লোহার রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় পেটায় শ্রমিকরা। গ্রেফতারকৃত মোয়াজে¥ হোসেন শান্তর নির্দেশে আকাশকে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়। আর পুরো ঘটনা ভিডিও করে রাখেন তারা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, ঘটনার দিন রাত ১০টার আকাশ তার বাসা থেকে বের হন। রাতে আর বাসায় ফেরেনি। পরে ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৬ টা ১০ মিনিটে ভুক্তভোগীর ফুফুর মোবাইলফোনে অভিযুক্ত জহিরুল ফোন করে আকাশকে বরাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণাধীন ভবন থেকে নিয়ে যেতে বলেন। ফুফু সেখানে থেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নসহ আকাশকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। ঘটনার কিছুক্ষণ পর কিশোর আকাশের সমস্ত শরীর ঠা-া, নিথর ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এর পরই আকাশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আকাশের ফুফু মালতী আক্তার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিশোর হত্যার বিষয়টি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদসহ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করে এরপর তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জহিরুল ও বারেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত আকাশ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার গুজাইদ্দা গ্রামের রহমত আলীর ছেলে। আকাশের মায়ের নাম মৃত আম্বিয়া বেগম। সে বর্তমানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টিক্কা পাড়ার পানির পাম্পের গলির ১৫/১৫ সি, ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে বসবাস করত।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা