পি কে হালদারের কুমির খামার বিক্রি
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
বাংলাদেশের বহুল আলোচিত আর্থিকখাতের শীর্ষ জালিয়াত প্রশান্ত কুমার হালদারের মালিকানাধীন একটি কুমিরের খামার বিক্রি করেছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রায় ১৩ দশমিক ৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত কুমিরের খামারটি সম্প্রতি এক নিলামে প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় কিনেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘উদ্দীপন’। কোম্পানির মতে, খামারটিতে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কুমির রয়েছে। ২০০৩ সালে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে দেশে প্রথমবারের মতো কুমির খামার প্রতিষ্ঠা করেন উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, কুমিরের চামড়া রফতানি করা। ২০১৩ সালে পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা মুশতাকের কাছ থেকে খামারটি কিনে নেন। ২০১৪ সালে খামারটি কুমিরের চামড়া রফতানি শুরু করে। একজন লেখক হিসেবে পরিচিত মুশতাক আহমেদ ফেসবুকে সরকার-বিরোধী লেখা পোস্ট করার অভিযোগে’ ২০২০ সালের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেপ্তার হন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় অভিযুক্তদের একজন পিকে হালদার। জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে, তিনি পলাতক। এ মামলায় আরও ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, আমাদের ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রেপটাইলস ফার্মের নিলাম করা হয়েছিল। খামারটি অধিগ্রহণের জন্য নিলামের সময় উদ্দীপন সর্বোচ্চ দরের প্রস্তাব দেয়।
তিনি বলেন, বকেয়া ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হলেও খামারটি প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বেশ আশানুরূপ একটি দাম।
উদ্দীপনের একজন কর্মকর্তা খামারটি অধিগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা বর্তমানে নিলামের অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। নিয়ম অনুযায়ী মালিকানা হস্তান্তর করা হবে। ইউনাইটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভস ফর প্রোগ্রামড অ্যাকশন, উদ্দীপন ১৯৮৪ সালে বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগের মাধ্যমে দুর্বল মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে উদ্দীপন পল্লী অ্যাম্বুলেন্স, কৃষি পাঠশালা, পাখি পল্লী, বীজ বল রোপণ, পারিবারিক চাষ, নারী-বান্ধব মডেল ফার্মেসি ইত্যাদির মতো নানা উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
৪ কোটি টাকার সম্পদ বন্ধক রেখে ৫৭ কোটি টাকা ঋণ
২০১৩ সালে কুমিরের খামারটি অধিগ্রহণের পর পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা কুমির উৎপাদন সম্প্রসারণের জন্য একটি উদ্যোগ শুরু করেন। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৫৭ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এক্ষেত্রে রেপটাইল ফার্মের ১৩ দশমিক ৪০ একর জমি জামানত হিসেবে ব্যবহার করে তারা। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে খামারের নামে এই ঋণ বাড়ানো হয়।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সূত্রে জানা গেছে, ঋণের জামানত হিসেবে ব্যবহৃত বন্ধকী জমির বিক্রয়মূল্য ছিল ৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বর্তমানে বকেয়া ঋণ প্রায় ১০৮ কোটি টাকা; এটি এখন খেলাপি অবস্থায় রয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ফার্মের ব্যবস্থাপনায় থাকা ব্যক্তিদের অনুপস্থিতির কারণে বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধার করতে পারছিল না ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। তাছাড়া সময়ের সাথে সাথে খামারে কুমিরের সংখ্যা কমেছে, যা মূলত অব্যবস্থাপনার কারণে কুমিরের খাদ্য ঘাটতি এবং ফার্মের আর্থিক সঙ্কটের সাথে জড়িত।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ছয় সদস্যের একটি পরিচালনা পরিষদ গঠন করেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মশিউর রহমান বলেন, নতুন বোর্ড কাজ শুরুর পর থেকে খাদ্য নিরাপত্তা, নিবিড় পরিচর্যা এবং কুমিরের আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নও করেছে। এছাড়া উন্নত প্রযুক্তিগত পদ্ধতি গ্রহণের ফলে কুমিরের প্রজনন ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। নতুন বোর্ড আসার আগে খামারটিতে ১ হাজার ৭৩০টি কুমির ছিল; এখন আছে ২ হাজার ৪৫৮টি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রেপটাইলস ফার্ম
২০০৪ সালে মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত ৭৫টি কুমির নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড। ফার্মের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুসারে, কুমিরের প্রজনন মৌসুমে প্রতি বছর কৃত্রিম উপায়ে প্রায় ১০০টি কুমিরের বাচ্চা উৎপাদন করে। বিভিন্ন জিনিস যেমন ব্যাগ, বেল্ট, জুতা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কুমিরের চামড়া। এছাড়া এর হাড় সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, দাঁত ব্যবহৃত হয় গয়না এবং অন্যান্য বিলাসবহুল পণ্য তৈরিতে। এ প্রাণীর পেটের দিকের চামড়া প্রতি সেন্টিমিটার বিক্রি হয় ১৫ ডলারে। এমনকি কুমিরের গোশত প্রতি কেজি ৪০ ডলার থেকে ৫০ ডলার পর্যন্ত দামে বিদেশে রফতানি ও বিক্রি করা হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে
ভারতে ৫ বছর সাজাভোগ করে দেশে ফিরলেন স্বামী-স্ত্রী
চার দিনের সফরে সোমবার সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা