বিএনপিকে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম : ওবায়দুল কাদেরের
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
বিএনপিকে সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও পরিহার করতে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর উত্তরায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশ্যে এমন আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন, যদি এই ৩৬ দিনের মধ্যে বিএনপি সঠিক পথে না আসে তাহলে দেশ ও জনগণকে নিয়ে আমরা বিএনপির অপরাজনীতির কালো হাত ভেঙে দেব। এ সময় মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণ কোন ভিসা নীতি পরোয়ার করি না। তিনি এও বলেছেন, আমার গণতন্ত্রে আমি নির্বাচন করবো, কারো খবরদারিতে বাংলাদেশের জনগণ চলবে না। গতকাল সোমবার বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী হরতাল, নৈরাজ্য, ও অবরোধ’ প্রতিরোধে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ওই শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের আয়োজন করে। বিকেল ৩টায় উত্তরার আমির কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকায় এই সমাবেশ শুরু হয়।
গতকাল দুপুরে রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আওয়ামী লীগকে ৩৬ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তার জবাবে বিএনপিকে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপির উদ্দেশ্যে এ সময় তিনি বলেন, ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দিলাম। ৩৬ ঘন্টা নয় ৩৬ দিনের মধ্যে অপরাজনীতি ছাড়তে হবে। ৩৬ আগুন সন্ত্রাস ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। যদি এই ৩৬ দিনের মধ্যে বিএনপি সঠিক পথে না আসে তাহলে দেশ ও জনগণকে নিয়ে আমরা আমরা বিএনপির অপরাজনীতির কালো হাত ভেঙ্গে দেব।
ওবায়দুল কাদের এ সময় তার চিরচারিত সেøাগান ‘খেলা হবে’ উল্লেখ করে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আসল খেলা, ফাইনাল খেলা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে, আপনারা প্রস্তুত আছেন? তিনি বলেন, বিএনপি যদি অস্ত্র নিয়ে আসে, ওই হাত ভেঙে দেওয়া হবে। যদি আগুন নিয়ে আসে, ওই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। ঠিক আছে? যেমন কুকুর, তেমন মুগুর।
সমাবেশে মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কারো ভিসানীতির তোয়াক্কা আমরা করি না। কারও নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা আমরা করি না। বাংলাদেশ আমরা স্বাধীন করেছি কারো নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করার জন্য নয়। এদেশ স্বাধীন হয়েছে, রক্ত দিয়ে যারা স্বাধীন করেছে কারো নিষেধাজ্ঞা মানার জন্য নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে এসম ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার গণতন্ত্র, আমার নির্বাচন আমি করবো। তুমি কে? সাত সমুদ্র তের নদীর পার থেকে, আটলান্টিকের ওপার থেকে, নিষেধাজ্ঞা দেবে, এই দেশ গ্যাবনের আলী বঙ্গের দেশ নয়। এই দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন করা দেশ।
ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকে যারা স্যাংশনের কথা বলে, তাদের নিজের দেশেই গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয়। তাদের নিজেদের দেশে মানবাধিকার পদদলিত হচ্ছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পতাকা ভূলষ্ঠিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণ কোন ভিসা নীতি পরোয়ার করি না। বাংলাদেশের জনগণ চায় কোন ভিসানীতি যাতে আমরা না মানি। আমার নিয়মে আমি নির্বাচন করবো। আমার সংবিধান, আমাকে কিভাবে নির্বাচন করতে হবে বলে দিয়েছে। আমার গণতন্ত্রে আমি নির্বাচন করবো, কারও খবরদারিতে বাংলাদেশের জনগণ চলবে না।
বিএনপির সমালোচনা করে এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি ৩৬ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে কিন্তু ৩৬ মিনিটো তো তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে পারে নি। ৩৬ দিনের আল্টিমেটার দিলাম, ঠিক হয়ে যান। কোমর তো ভেঙ্গে গেছে, হাটুও ভেঙ্গে গেছে। গোলাপগঞ্জের গরুর হাটে কোমর ভেঙ্গে গেছে, বিএনপি নেতারা এখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তিনি আরো বলেন, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ওপর এখন ভর করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এসবে (ভিসা নীতি) পরোয়া করি না। আমরা এদেশে জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা নিজেদের শক্তিতে বলিয়ান। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে এ সময় তিনি বলেন, হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। সাময়িক কষ্ট সরে যাবে, সুদিন আবারও আসবে।
তিনি বলেন, রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে। বিএনপি রাজপথে এসে অবস্থান নেবে, সেই খেলা আর খেলতে দেওয়া হবে না। মানুষের যাওয়া- আসা বন্ধ করবে, অবরোধ করবে...। স্বপ্ন দেখছে নাশকতার ফখরুল সাহেব ওই দিন আর আসবে না। ওই সুযোগ আর পাবেন না। সুযোগ একটাই আছে নির্বাচনে আসার। এটা হেলায় হারালে খেলায় হেরে যাবেন।
ওবায়দুল কাদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রশ্ন রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে বলেন, আপনাদের যে নেতা তারেক রহমান, এখন যে ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা বলছে। আপনি কি ভুলে গেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি তারেক রহমানকেও এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞার কী হলো, ফখরুল সাহেব ? আপনাদের নেতাই তো নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পরে আছে, আগে এর সমাধান করেন। তারপর আওয়ামী লীগেরটা দেখবেন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকেই ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলে-দলে মিছিল নিয়ে জড়ো হয়। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। শান্তি সমাবেশে বিশেষ বক্তার বক্তব্য দেন ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব হাবিব হাসান। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
এ দিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজনে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে আরেকটি শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাহজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ সদস্য নুরুল আমিন রুহুল। এর আগে সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে গত রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি বর্ধিত সভা করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বিএনপি কর্মসূচি আড়ালে ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেন । তিনি বলেন, বাংলাদেশে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র হিসেবে বিএনপি নানা ধরণের কর্মসূচি দিচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে আগামী নির্বাচনকে ভন্ডুল করার উদ্দেশ্যে বিএনপি দেশে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করে যাচ্ছে। আমরা সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব রয়েছে, দেশে যাতে কেউ শান্তি শৃঙ্খলা জনজীবনে নিরাপত্তা যাতে কেউ বিনষ্ট করতে না পারে।
তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচি দেওয়ার পেছনে কারণ আছে, কারণটা হচ্ছে বিএনপি এখন পুরনো গাড়ির রুপ ধারণ করেছে। পুরনো গাড়ি যেমন স্টাট দিলে ব্যাটারি ওঠে না বিএনপি এখন পুরনো গাড়ি। সে জন্য মাঝে মধ্যে স্টাট নিতে হয়। সে জন্য হাঁটা কর্মসূচি, বসা কর্মসূচি, দৌড় কর্মসূচি ক’দিন পরে বলবে হামাগুড়ি কর্মসূচি। সে জন্য বিএনপি তাদের দল যেমন পুরনো গাড়ির মতো বসে গেছে সে জন্য ব্যাটারি যাতে ডাউন না হয় সে কারণে নানা কর্মসূচি দিয়েছে। কিন্তু পুরনো গাড়ি যেমন যতোই স্টাট দেন ব্যাটারি যতোই চার্জ দেন চলতে গিয়ে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বিএনপিও ক’দিন পরে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবে, পুরনো গাড়ির মতো। আন্দোলনকে তারা সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারবে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
স্ত্রী-সন্তানসহ শাহরিয়ার আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের ৩শ' ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুর
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ