এডিসি হারুন-সানজিদা কা-ের তদন্ত লাল ফিতায় বন্দি!
১১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
ডিএমপির সাবেক এডিসি হারুন-সানজিদা আফরিন কা-ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এক মাসেও জমা পড়েনি। বহুল আলোচিত ওই অপকা-ের তদন্ত প্রতিবেদন চার দফায় পিছিয়ে সর্বশেষ ১ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সেই তারিখেও জমা দেয়া হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, হারুন-সানজিদা কা- কি লাল ফিতায় বন্দি হয়ে গেল? তা না হলে বারবার তারিখ পেছানোর পরেও কেন প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি? কেন এত কালক্ষেপণ? এমন প্রশ্ন এখন ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। মারধরের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত এডিসি হারুন অর রশীদ ও প্রেসিডেন্টের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হককে নিয়ে কথা বলেন নতুন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে হাবিবুর রহমান বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা যতটুকু অপরাধ করবে, ঠিক ততটুকু শাস্তি দেয়া হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কেন দেরি হচ্ছে এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। তারা বলছেন, নতুন কমিশনার দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি তাকে ব্রিফিং করা হয়নি। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করেছে; তাদের প্রতিবেদনের দিকে তাকিয়ে আছেন পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের প্রধান ডিসি মো. ফারুক হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এডিসি হারুন অর রশীদ ও ছাত্রলীগ তিন নেতার মধ্যে মারধরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও জমা দেয়া হয়নি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে বেদম প্রহার করেন রমনা জোনের তৎকালীন এডিসি (সাময়িক বরখাস্ত) হারুন অর রশীদ ও থানা পুলিশের কতিপয় সদস্য। তাদের উপর্যুপরি নির্যাতনে ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম গুরুতর আহত হন। এতে নাঈমের পাঁচটি দাঁত উপড়ে যায়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সম্প্রতি তিনি হাসপাতালে ছেড়েছেন। তবে তার কানে অপারেশন করতে হবে।
ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখনও এগুলো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন কমিশনার দায়িত্ব নিয়েছেন, তাকে ব্রিফিং করতে হবে। তিনি তো সবকিছু ওয়াকিবহাল নন। এসব নিয়ে কেউ এখন ভাবছেও না। আর এ মুহূর্তে দেয়ার মতো কোনো তথ্যও নেই।
সূত্র জানায়, শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটি চার দফায়ও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। ওই মারধরের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুন অর রশীদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সর্বশেষ দিনক্ষণ থাকলেও আরও তিনদিন সময় চায় কমিটি। পরে আরও তিন কার্যদিবস সময় বাড়ানো হয়, যা ১ অক্টোবর শেষ হয়ে গেছে। আলোচিত এ ঘটনায় আরেক তদন্ত কমিটি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের প্রতিবেদনের দিকে তাকিয়ে আছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। তবে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা না দেয়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটির কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
ছাত্রলীগের তিন নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রথমে এডিসি হারুনকে পিএমও উত্তর বিভাগে বদলি করা হয়। এরপর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তরে, পরবর্তীতে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফাকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তদন্ত কমিটির কাছে এডিসি হারুন, এডিসি সানজিদা আফরিন, তার স্বামী প্রেসিডেন্টের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। জড়িত ছাত্রলীগের নেতাদেরও বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি। তাদের বক্তব্যে সেদিন কী ঘটেছিল, তা জানা গেছে। এ ঘটনায় সব পক্ষের দায় পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত শেষ হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এডিসি হারুন অর রশিদ প্রেসিডেন্টের এপিএস আজিজুল হক এবং তার স্ত্রী সানজিদা আফরিনের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে শাহবাগ থানায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে শাহবাগ থানায় ধরে এনে মারধর করেন। এ ঘটনায় তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দুই দিনের ভেতরে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়ে পাঁচ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করে তদন্ত কমিটি। পরে কমিশনার তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের প্রতিবেদন দাখিলের শেষ দিন ছিল। কিন্তু কমিটি প্রতিবেদন দাখিল না করে আবার সাত দিন সময় বৃদ্ধির আবেদন করে। কমিশনার তিন দিন সময় বাড়িয়ে দেন। এ হিসাবে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের শেষ সময় ছিল। কিন্তু প্রতিবেদন না দিয়ে নতুন করে তিন দিনের সময় চায় কমিটি। সেই হিসাবে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। এরপরেও আরও তিন কার্যদিবস তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আবেদন করা হয়, যা গত ১ অক্টোবর শেষ তারিখ ছিল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা
রাজশাহীতে ট্রেনের ধাক্কায় পিকআপ দুমড়ে মুচড়ে আহত-৫
কুষ্টিয়া র্যাবের অভিযানে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার
মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল গাজা, ইউক্রেন ও সুদান যুদ্ধ প্রভাবিত করবে?
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট
নাজমা মোবারেক ইতিহাসে প্রথম নারী সচিব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে
ফুলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আ'লীগ নেতা শশধর সেন গ্রেফতার
আখাউড়ায় সংঘর্ষে আহত নয়জন, পাল্টাপাল্টি মামলা
ভারতে হলে কিভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাতেন ট্রাম্প-কমলা
রংপুরে হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যু দন্ড, ১ জনের যাবজ্জীবন
ইবিতে ছাত্র আন্দোলন দমাতে আওয়ামীপন্থীদের যত তৎপরতা
পঞ্চগড়ে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষক আটক
লাইসেন্স ফি কমানোর দাবিতে ফরিদপুরে অটো চালকদের বিক্ষোভ-মানববন্ধন
আটঘরিয়ার হস্তালিত তাঁতের তৈরি চাচকিয়ার লুঙ্গি এখন একটি ব্রান্ড
রংপুর মেডিকেল নতুন অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতি
পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেল দেশের আরেকটি প্রতিষ্ঠান
শ্যামপুরে গ্যাস লিকেজে বিস্ফোরণ : দগ্ধ একজনের মৃত্যু
টিউবওয়েলের পানিতে চেতনানাশক মিশিয়ে চুরি
রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী, অক্টোবরে প্রবাসী আয় ২.৩০ বিলিয়ন ডলার
নিরাপদ প্রজননের পরে ইলিশ আহরনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল