ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
বাইডেন ও নেতানিয়াহুর কল্পরাজ্যে উপেক্ষিত ফিলিস্তিন

মধ্যপ্রাচ্যে কবে ঘটবে সংঘাত ও দখলদারিত্বের অবসান?

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন সউদী আরবের সাথে একটি কূটনৈতিক চুক্তি, ভারতকে ইউরোপের সাথে যুক্ত করার একটি বাণিজ্য পথ এবং ইরান ও এর উদ্বেগজনক পারমাণবিক কর্মসূচি মতো বিস্তৃত বিষয়গুলিতে ইসরায়েলের সাথে কাজ করছে। কিন্তু শনিবার মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শৃঙ্খলা নড়বড়ে হয়ে যায় যখন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে।

পশ্চিম তীর এবং গাজার মতো ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলিতে ইসরায়েলের সামরিক দখল, প্রযুক্তি-চালিত নজরদারি, দেয়াল এবং চেকপয়েন্টগুলি ইসরায়েল এবং তার শীর্ষ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে উপেক্ষা করতে এবং অন্যান্য ইস্যুতে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। মানবাধিকার আইনজীবী এবং কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর সদস্য জাহা হাসান বলেন, ‹এটি শুধু একটি বিবেচনা বহির্ভূত স্থানই নয়। যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র আরব-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের এই ধারণার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেন এটি কল্পকথার রাজ্য, ফিলিস্তিন ইস্যুটির অস্তিত্বই নেই। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, ইসরায়েল এবং আরব দেশগুলির মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যক্রম ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যকার শান্তির বিকল্প নয়, কিন্তু, ওয়াশিংটন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কোনও চেষ্টাই করেনি। বরং, বাইডেন প্রশাসন, যেটি ইসরায়েলকে বার্ষিক ৩শ’ ৮০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করে, মার্কিন নীতিকে অস্বীকার করে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং দেশটির অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি বিস্তারের জন্য নেতানিয়াহু সরকারের জবাবদিহিতা আদায় করতে নারাজ।

গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করেন যে, ফিলিস্তিনিদের সাথে শান্তি তার আরব প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার শর্ত হওয়া উচিত। তিনি ফিলিস্তিনি অঞ্চল এবং সিরিয়ার গোলান হাইটসকে ইসরায়েলের অংশ হিসাবে দেখানো অঞ্চলের একটি মানচিত্রও প্রদর্মন করেন, যা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভয়ের জন্ম দিয়েছে যে, তাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলা হবে। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে নতুন শান্তি চুক্তির বিষয়ে আমরা অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের ভেটো দিতে দেবো না।’

হামাস কর্মকর্তারা ইসরায়েলের ওপর হামলার কারণ হিসেবে আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান সহ ইসরায়েলি সহিংসতার উল্লেখ করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিখ্যাত অধিকার গোষ্ঠীগুলিও অভিযোগ করেছে যে, ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত ঘৃণা চাপিয়ে দিচ্ছে ইসরাইল। কিন্তু মঙ্গলবার, বাইডেন ফিলিস্তিনি সংগ্রামের কোনো উল্লেখ না করেই হামাসের আক্রমণকে ‹সন্ত্রাসী› আক্রমণ হিসাবে চিত্রিত করেছেন। তিনি হামাসকে আইএসআইএল (আইএসআইএস)-এর সঙ্গেও তুলনা করেছেন। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বাইডেন।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েকটি আরব রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ২০২০ সালে বেশ কয়েকটি চুক্তি সুরক্ষিত করতে ইসরায়েলকে সাহায্য করে, যা আব্রাহাম অ্যাকর্ড নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে ইসরায়েল সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মরক্কোর মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। ট্রাম্পের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সুদানও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সম্মত হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আঞ্চলিক একীকরণের জেষ্ঠ্য উপদেষ্টা ড্যান শাপিরো গত সপ্তাহে আল জাজিরাকে বলেছেন যে, বাইডেন প্রশাসন আফ্রিকা এবং পূর্ব এশিয়ার উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরের দেশগুলির সাথেও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ নিয়ে আলোচনা করছে। তবে, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘকে বলেছেন, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের কোনো স্থাপত্যই এই সংঘাতের জ্বলন্ত ছাইয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না।’

বুদ্ধিজীবি সংস্থা আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির নির্বাহী পরিচালক খলিল জাহশান বলেছেন যে, পরিস্থিতি বলছে যে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং অন্যরা, বিশেষ করে আরব স্বাভাবিকীকরণবাদীদের দীর্ঘ সারি ফিলিস্তিন ছাড়া একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র তৈরি করছে, যা বেশিরভাগই নিজস্ব অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে। বাইডেন ইসরায়েলের জন্য আরও সমর্থন এবং অস্ত্রের আহ্বানের প্রেক্ষিতে জাহশান প্রশ্ন তুলেছেন, ‹আপনারা কখন থামবেন? কবে আপনারা এই সংঘাতের অবসান, দখলদারিত্বের অবসান, ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের নিজেদের ভবিষ্যত নির্ধারণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, সূর্যের নীচে স্থান দেওয়াকে গুরুত্ব সহকারে দেখবেন? সূত্র : আল জাজিরা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা