স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যে
১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
আবারও অস্থির হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের বাজার। বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করলেও ক্রেতা পর্যায়ে নাগালে আসছে না দাম। ডিম, মুরগি, সবজিসহ বাজারে সব পণ্যের দাম মানুষের নাগালের বাইরে। নিত্যপণ্যের জন্য সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বাজারে মিলছে না কোনো পণ্যই। সরবরাহ কম থাকার সেই পুরোনো অজুহাত দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এই অবস্থায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন বাজার করতে আসা মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখনও পর্যাপ্ত সবজি আসেনি, যে কারণে দামও তুলনামূলক কিছুটা বেশি। তবে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এই দাম কমে আসবে। এদিকে গত কয়েক সপ্তাহ স্থির থাকার পর আবারও চড়ছে ডিমের বাজার। এলাকাভেদে প্রতি ডজন ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। মুরগির বাজারেও একই অবস্থা। আর বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দামও বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকার বেশি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় কেজি। আর প্রতিকেজি কাঁচামরিচের দাম ২০০ টাকা।
সরকারি হিসাবে প্রতি বছরই বাড়ছে ডিমের উৎপাদন। এখন জনপ্রতি বাৎসরিক প্রাপ্যতা ১৩৫টি। তবে বাজারে গেলে এই তথ্যের সত্যতা মেলা ভার। গত সপ্তাহেই প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪৫ টাকায়। গতকাল শুক্রবার সেই ডিম বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে। এ অবস্থার জন্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে দুষছেন খুচরা বিক্রেতারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আব্দুর রহমান নামে এক ডিম ব্যবসায়ী বলেন, যদি মেইন গোডাউনে হাত দেন তাহলে এটার দাম কমে যেতে পারে। ওরা (উৎপাদক) তো ইচ্ছা করে দাম কমাচ্ছে না। আমাদের খামাখা হয়রানি করছেন, জরিমানা করছেন। কেন? কারণটা কি?
মুরগির দামও গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা আর সোনালী মুরগির কেজি এখন ৩৫০ টাকা।
বৃষ্টির অজুহাতে কেজিতে গড়ে ৪০ টাকা বেড়েছে সবজির দাম। ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজেরও। সরকারি দাম তো দূরের কথা, আরও এক দফা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায় আর আমদানি করা পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে কেজিতে ৮০ টাকার বেশি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা, বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি, টমেটো ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা, পটল ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৫০ (কেজি), পেঁপে ২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি। এ ছাড়াও শসা ৮০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, আলু ৫৫ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪০ টাকা (ছোট), বাঁধাকপি ৩০ টাকা (ছোট) দরে বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, শীতকালে বাজারে সাধারণত লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, দেশি পিঁয়াজ, ভারতীয় পিঁয়াজ, বেগুন, মুলা, লালশাক, পালংশাক, পটোল, ঢেঁড়স, বরবটি, ঝিঙা, পেঁপে, আলু, করলা, কচু, শসাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিতে ভরপুর থাকে। তবে এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে সবজি উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। যে কারণে বাজারে সবজি তুলনামূলক কম। তাই, সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই থাকছে শীতের সবজি।
সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, সবকিছুর দামই এখন বেশি। শুধু ডিম বললে তো হবে না। আলুর দাম বেড়ে গেছে, পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। সরকার তো দেখতে পারে যে বাজার কি আসলেই নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা।
ভোক্তা অধিকারের অভিযান চললেও এর পরোয়া কেউ করছেন না। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সোহেল চাকমা বলেন, আমাদের অভিযান কিন্তু এখনও অব্যাহত আছে। নিত্যপণ্যের বিষয়ে অব্যাহত তো আছেই পাশাপাশি আমাদের ডিজির যে নির্দেশনা সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। বাজার তদারকির এ অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাজার করতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী জহির উদ্দিন বলেন, শুক্রবার এলেই সবজি, মাছ-গোশতের দাম বেড়ে যায়। পরশু বাজার করে নিয়ে গেছি, ঢেঁড়স ছিল ৫০ টাকা, আজকে নাকি ৮০ টাকা। দুইদিনেই দেশে কী এমন হয়ে গেলো যে ৩০ টাকা দাম বেড়ে গেল? তার মানে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দাম বাড়ায়। আর ব্যবসায়ীদের এই অনিয়ম যেন দেখার কেউ নেই।
তিনি বলেন, হয়তো এই দাম কিছু মানুষের জন্য কিছুই না, আমাদের মতো মধ্য-নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য অনেক কিছু। ৫০০ টাকা বাজারে নিয়ে গেলে ব্যাগ অর্ধেকও ভরে না, অথচ গত বছরখানেক আগেও এমন ছিল না।
তানিয়া আক্তার নামে একজন বলেন, আজকের বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি মনে হচ্ছে। মুলার কেজি ৮০ টাকা, যা সাধারণত ৩০/৪০ টাকার মধ্যেই থাকে। বাজারে সিম এসেছে অন্তত আরও ১৫-২০ আগে, অথচ দাম এখনো ২০০ টাকা কেজি। দাম জিজ্ঞেস করে চলে আসা ছাড়া আর কিছু করার আছে?
তিনি বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের এতো দাম, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কেনার অবস্থা নেই। যে সবজিরই দাম জিজ্ঞেস করি, ৭০/৮০ টাকার নিচে কিছুই নেই। বাজারে এলেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। মাছ-গোশত কেনার অবস্থা নেই। ভর্তা-ভাত, সবজি খেয়ে থাকবো সেটাও অবস্থা নেই। আমরা গরীব মানুষ কতোটা বিপদে আছি বলে বোঝানোর ভাষা নেই।
সবজির দাম প্রসঙ্গে পাঁচতলা বাজারের সবজি বিক্রেতা সাব্বির হোসেন বলেন, শীতের সবজি বাজারে এলেও চাহিদা অনেক বেশি। দাম বেশি, তারপরও মানুষ এতো পরিমাণ নিচ্ছে যা দেখে আমরাও অবাক। তার মানে চাহিদা অনুপাতে সবজির পরিমাণ কম। যে কারণে বাধ্য হয়েই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
দাম বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, বাজারে সার কীটনাশকের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া মজুরির দামও বেড়েছে। সবমিলিয়ে কৃষক পর্যায়েই এখন দামটা কিছুটা বেশি। সেটা যখন বিভিন্ন হাত ঘুরে আমাদের কাছে আসে, স্বাভাবিকভাবেই দামটা বেশি হওয়ার কথা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা