পদের বিপরীতে কর্মকর্তা তিনগুণ!
১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দেশে সরকারি চাকরির পদের সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। বর্তমানে ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬২ জন চাকরিজীবী কর্মরত রয়েছেন। শূন্য পদ ৩ লাখের বেশি। সরকারি চাকরির পদ শূন্য থাকলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে বর্তমানে প্রশাসনে সচিবের ৬৯টি পদ। অথচ এই পদে রয়েছেন ৮৩ জন। অতিরিক্ত সচিবের ১৪০টি পদের বিপরীতে ৩৮৭, যুগ্ম সচিবের পদ ৩৩২টি পদের বিপরতে কর্মরত আছেন ৯৩৯ জন। এ ছাড়া, ৪৩০টি সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের পদ ১৪২৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১৪৭৭ জন। পদের চেয়ে কর্মকর্তা অধিক হওয়ায় সরকারকে বছরে বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। অথচ লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার চাকরির জন্য ঘুরে বেড়ালেও ৩ লাখের বেশি পদ শূন্য রয়েছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এক বছরে ১৫০০ এর উপর প্রকল্পের কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণে পাঠাতে হয়। সেটার যৌক্তিক কারণে বেশি করে পদোন্নতি দেয়া হয়। সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশনে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ২৫ শতাংশের বেশি। তারপরও অতিরিক্ত পদোন্নতির ফলে বাড়ছে সরকারি ব্যয়।
প্রশাসনে ৮০ শতাংশ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেলেও তাদেরকে আগের অধস্তন পদের কাজই করতে হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তার সচিবালয়ে বসারও জায়গা নেই। এক রুমে ভাগাভাগি করে বসতে হয় অনেক কর্মকতাকে। উপসচিব থেকে সচিব। প্রশাসনের শীর্ষ চার পদের বিপরীতে বাড়তি কর্মকর্তা দুই থেকে তিনগুণ। এতে প্রশাসনিক জটিলতা বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেইসঙ্গে বেতন-ভাতায় সরকারকে গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগে দায়িত্বপালন করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আব্দুস সবুর ম-ল। সচিব হিসেবে পদোন্নতির পর তাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেয়া হয় ৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার আগের পদেই সংযুক্ত করা হয় তাকে। পদের চেয়ে বেশি পদোন্নতির ফলেই এই পরিস্থিতি। সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশনে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটের ২৫ শতাংশের বেশি। তারপরও অতিরিক্ত পদোন্নতির ফলে বাড়ছে সরকারি ব্যয়। এদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, ট্যাক্স, রেলওয়ে, আনসার, কাস্টমস, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ প্রায় ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উপসচিবের তদূর্ধ্ব যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিবের পদোন্নতির সময় কোটার ফাঁদে ফেলে বঞ্চিত করা হয়। আবার ২০০২ সালের পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডার থেকে উপসচিব পুলে অন্তর্ভুক্ত ২৫ শতাংশ কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়ার কথা থাকলেও, সেটিও মানা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে পদোন্নতি বঞ্চিনার প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেছেন। এছাড়া তারা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। প্রশাসন ক্যাডারে সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডার যুক্তকরার কারণে মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালনে অনেক কর্মকর্তাকে হোচোট খেতে হচ্ছে। অনেক উপজেলায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে প্রায় দ্বন্দ লেগে যাচ্ছে। এতে করে অনেক উপজেলায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ফেরত যাচ্ছে। আবার বছরের পর বছর উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনে আন্ত:ক্যাডার বৈষম্যৈ বঞ্চনার শিকার গণকর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। গণকর্মচারী আইন প্রণীত হলেও সেই আইনের অধীনে এই বৈষম্য নিরসনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একচেটিয়া স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে দিনকে দিন পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্রে আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য আরও বাড়ছে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশও এ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হচ্ছে। যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতারও মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বেহিসাবি পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় কনিষ্ঠরাই অনেক ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠদের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হয়ে হয়ে বসে আছেন। ক্যারিয়ার পরিকল্পনা না থাকায় এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে, যোগ্যতা অর্জন করায় দাবিদার কর্মকর্তাদের পদোন্নতিও দিতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় প্রশাসনের কাঠামোসহ পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্রে আমূল সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস ২০২১ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। তাদের মধ্যে নারী ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ জন, যা মোট চাকরিজীবীর প্রায় ২৬ শতাংশ। দেশে সরকারি চাকরিজীবী ১২ লাখ, শূন্য পদ ৩ লাখের বেশি। ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬২ জন সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন।
স্বাধীনতাপরবর্তী সময় থেকেই প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে তৎকালীন অন্যান্য ২৬ (বর্তমানে ২৫) ক্যাডারের বৈষম্য চলে আসছে। এই বৈষম্য নিরসনে একাধিক কমিটি ও কমিশনের সুপারিশ হিমাগারে পড়ে আছে। অথচ প্রশাসনসহ সব ক্যাডারের কর্মচারী সরকারি কর্মকমিশনের একই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ক্যাডারে ভিন্নতা থাকলেও চাকরির ১০ বছর পূর্ণ হলে যে কোনো ক্যাডারের কর্মচারী উপসচিব পুলভুক্ত হতে পারেন। আর এই পুলভুক্ত হলে তাদের প্রাথমিক যোগদানকৃত ক্যাডার পরিচিতি থাকে না। সবাই একই ক্যাডারভুক্ত গণকর্মচারী হিসাবে বিবেচিত হন।
কিন্তু পদোন্নতির সময়ে কথিত কোটার দোহাই দিয়ে চলে বঞ্চনার খেলা। এতে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে নিয়োগপ্রাপ্তরাই ক্ষতিগ্রস্থ হন বেশি। যদিও সুপ্রিমকোর্ট কোটা পদ্ধতি অনুসরণের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। এ সংক্রান্তে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০০৩ সালে দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, যখন কোনো কর্মকর্তা উপসচিব হবেন তখন তার পূর্ববর্তী ক্যাডার বিলুপ্ত হবে। তখন তিনি অন্যান্য উপসচিবের সঙ্গে একীভূত হবেন। উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশকালীন ক্যাডার বিবেচিত হবে না। এসব পদে সবাই সমঅধিকার নিয়ে পদোন্নতির যোগ্য হবেন। কিন্তু এই রায় না মেনে কথিত কোটা পদ্ধতি বহাল রাখা হলেও তাও মানা হচ্ছে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে প্রশাসনে সচিবের ৬৯টি পদে কর্মরত রয়েছেন ৮৩ জন। অতিরিক্ত সচিবের ১৪০টি পদের বিপরীতে ৩৮৭, যুগ্ম সচিবের পদ ৩৩২টি, আছেন ৯৩৯ জন। এ ছাড়া, ৪৩০টি সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের পদ এক হাজার ৪২৮টি, কিন্তু কর্মরত আছেন এক হাজার ৪৭৭ জন। এর মাঝে, পদ না থাকলেও ফের শুরু হয়েছে দুই স্তরে পদোন্নতির প্রক্রিয়া।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের পদটি সব সময়ই প্রশাসন ক্যাডার দ্বারা পূরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর বাইরে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ডিডি এলজি, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ইত্যাদি পদও প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত পদ। অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা শুধু মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রণালয়ের অধীনের কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থায় সমমানের পদে নিয়োগ লাভ করতে পারেন। পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত ১০ বছরে ২৫৫ জন কর্মকর্তা সিনিয়র সচিব বা সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এরমধ্যে ২৩২ জনই প্রশাসন ক্যাডারের। বাকি ২৩ জন অন্যান্য ক্যাডার থেকে। শতাংশ হারে এটি ৯ শতাংশ। গ্রেড-১ ভুক্ত কর্মকর্তা বিগত পাঁচ বছরে হয়েছেন ৭৬ জন। এর মধ্যে একজন মাত্র অন্য ক্যাডারের। গত ১২ মে অতিরিক্ত সচিব পদে সর্বশেষ পদোন্নতি দেয়া হয় ১১৫ জনকে। এর মধ্যে ১০৩ জনই প্রশাসন ক্যাডারের । অন্যান্য ক্যাডারের ১২ জন। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে সর্বশেষ পদোন্নতি দেয়া হয় সেখানে ২২১ জনের মধ্যে ১৯৭ জনই প্রশাসন ক্যাডারের বাকি ২৫ জন অন্যান্য ক্যাডারে। ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডার থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন। ২৫ শতাংশ হলেও ৫৫ জনের বেশি পদোন্নতি পাওয়ার কথা। এ ছাড়া গত দশ দফা পদোন্নতির ক্ষেত্রে উপসচিব পদে ২ হাজার ৭৯৮ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ১৫২ জন ছিলেন প্রশাসন ক্যাডারে আর অন্যান্য ক্যাডার থেকে পুলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার (উপসচিব) আবেদন করলেও নেওয়া হয়েছে ৬৪৬ জনকে। যা মোট পদোন্নতির ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। এরই মধ্যে বঞ্চিত অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পরবর্তী করণীয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করছেন।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ইনকিলাককে বলেন, অধিকাংশ ক্যাডারেই পদোন্নতি এতই সীমিত যে অনেক ক্যাডার মধ্য পর্যায়েই যেতে পারে না। যদি আমরা দুই একটা ক্যাডারে পদ না থাকা সত্বেও পদোন্নতি দেই তাহলে তাহলে অন্যান্য ক্যাডারে পদোন্নতি দিতে বাধা কোথায়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা