বাংলাদেশের মানুষ যেন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে তাগিদ দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে তাগিদ দেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হয়।

বৈঠকের বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অণুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলমের সঙ্গে দেখা করে আমরা আনন্দিত। আমরা আমাদের শক্তিশালী বহুমুখী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও এর অনেক দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। মার্কিন প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আমাদের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, মধ্যপ্রাচ্য, মার্কিন নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদলের সাম্প্রতিক সফর, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইত্যাদি ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার সোমবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন।

ঢাকা সফরকালে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন। আফরিন আখতার তার এবারের সফরে ঢাকায় বিভিন্ন বৈঠক ছাড়াও রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন। আজ মঙ্গলবার তিনি কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে আফরিন আক্তার উল্লেখ করেন, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ভোট প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রচেষ্টা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তাদের সামনে তুলেছিলাম। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের যে প্রচেষ্টা সেটি অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্টে আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব নিষেধাজ্ঞাগুলো, বিশেষ করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক যে নিষেধাজ্ঞা আছে সেগুলো আগে তুলে নেওয়া। কারণ বড় আকারে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক যে নিষেধাজ্ঞা সেগুলো সময় লাগবে। এখন কেস বাই কেস তুলে নিলে আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনীর সক্ষমতা আরো বাড়বে। সংঘাতমুক্ত যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে সেখানেও হয়তো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে আইনশৃংখলা বাহিনী।

নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা বা বিনিয়োগকেন্দ্রিক কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়েও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সম্প্রতি এনডিআই ও আইআরআই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল। তারা পরামর্শ দিয়েছিল সে ব্যাপারে মার্কিন অবস্থানও একই রকম বলে তিনি জানিয়েছেন। তারা চাচ্ছে যে আগামী নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হোক। সেটা যাতে সংঘাতমুক্ত হয় এ ব্যাপারে তাদের যে অবস্থান আছে সেটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আমরা বলেছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরে এনডিআই ও আইআরআই প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছেন। সেখানে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী সরকারের অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সরকারের যে কমিটমেন্ট আছে নির্বাচন করার সেটাও বলেছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে ইতিহাসের পটভূমি আছে বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সেখানে প্রধানমন্ত্রী সরকারের অবস্থান তাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। এ ব্যাপারে আমাদের নতুন কিছু বলার ছিল না। আমরা বলেছি, এনডিআই ও আইআরআই যদি তাদের পর্যবেক্ষক পাঠায় তাহলে নির্বাচন কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের যতটুকু করা দরকার সেটা করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের আপডেট জানিয়েছি। রোহিঙ্গা সংকট সমস্যা সমাধানে মূল বিষয় হচ্ছে তাদের নিজেদের দেশে ফেরানো। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে এ ব্যাপারে তাদের কিছু কনসার্ন আছে। আগেও তারা বলেছে, এটা সেভ অ্যান্ড সিকিউট হতে হবে, একটি স্থায়ী হতে হবে, নইলে বারে বারে এটি হয়। এক্ষেত্রে তারা অতীতের উদাহরণও দিয়েছেন। রাখাইনে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেটিও ধারণার মধ্যে রাখতে হবে। আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি যে আমরা আমাদের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরাও এমন কোনো পদক্ষেপ নেবো না যাতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হয় বা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কোনো কিছু আমরা করবো না। মিয়ানমার এবং চাইনিজদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যক্ত রাখবো আগামী দিনগুলোতে। যাতে আমরা শিগগির এটা শুরু করতে পারি। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আমরা স্পষ্ট করেছি তাদের কাছে।

ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোতে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক দেখভাল করেন। এ ছাড়া তিনি নিরাপত্তা ও আন্তঃদেশীয়বিষয়ক দপ্তরেরও ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে গত মে মাসে তিনি ঢাকা সফর করেছিলেন।