লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিল দাবি
১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার জুড়ি রেঞ্জের লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনভূমিতে সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিল চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছে ৭টি সংগঠন।
গতকাল মঙ্গলবার এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, মৌলভীবাজার শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে জুড়ি উপজেলার জুড়ি রেঞ্জের অন্তর্গত ‘লাঠিটিলা’। প্রাকৃতিকভাবে ক্রান্তিয় মিশ্র চিরসবুজ বন এটি। ১৯২০ সালে সরকার এ বনের ৫৬৩১ একর এলাকাকে সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করে। লাঠিটিলা বনটি পাথারিয়া হিলি রিসার্ভ ফরেস্টের অংশ। এ বনে ২০৯ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং ৬০৩ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বিরল ও বিপন্নপ্রায় মায়া হরিণ, বুনো শূকর, উল্লুক, উল্টোলেজি বানর, ক্ষুদ্র নখযুক্ত উদবিড়াল এখনো এ বনে দেখা যায়। এটি দেশের ৬টি আন্ত:সীমান্ত সংরক্ষিত বনের একটি।
বন বিভাগ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের নামে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সংরক্ষিত এ বনভূমিতে সাফারি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সাফারি পার্ক সংক্রান্ত বনবিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্পে সংরক্ষিত এই বনভূমিতে গাছ ও পাহাড় কেটে বিভিন্ন শ্রেণীর সড়ক, ওয়াকওয়ে, আর.সি.সি বাঁধ, প্রাণী হাসপাতাল, গুদামঘর, গাড়ি ও বাস পার্কিং স্থান, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটরসহ সাবস্টেশন নির্মাণ, সাইনেজ ও সাউন্ড সিস্টেম স্থাপনসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে। যা পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটি বিগত ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সভার কার্যবিবরণীতে স্পষ্ট।
মৌলভীবাজারে বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, মাধবকু- ইকোপার্কসহ বেশকিছু পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, পর্যটকদের চাপে ও বন বিভাগের নানা বিতর্কিত প্রকল্পের ও কর্মকা-ের কারণে মৌলভীবাজারের প্রাকৃতিক বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে। বনগুলো হয় বৃক্ষশূন্য বা বাগানে পরিণত হচ্ছে, যার ফলে বন্যপ্রাণী তার আবাস হারাচ্ছে। লাঠিটিলার সংরক্ষিত বনকে সাফারি পার্কে পরিণত করলে তা যে এই বনকে আর এর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করবে তা দেশের প্রথিতযশা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সম্পাদিত ‘অ্যা প্রপোজড সাফারি পার্ক ইন অ্যা সাব-ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ইন নর্থইস্টার্ণ বাংলাদেশ উইল বি ডেট্রিমেন্টাল টু নেগেটিভ বায়োডাইভার্সিটি’ গবেষণাপত্রে স্পষ্ট হয়েছে।
দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনে গাছ কাটা, অনুমতি ছাড়া প্রবেশ যেখানে আইনত নিষিদ্ধ, সেখানে সংরক্ষিত বনকে ‘সাফারি পার্ক’ এ রূপান্তর করা এবং সেখানে ‘জনসাধারণের চিত্তবিনোদন’ এর আয়োজন করা অবশ্যই সাংঘর্ষিক, অসংবেদনশীল ও অবিবেচনাপ্রসূত। যেখানে ‘সংরক্ষিত বন’ ঘোষণার উদ্দেশ্য হলো বনকে অনুপ্রবেশ আর সাধারণের যাতায়াতের হাত থেকে রক্ষা করা, সেখানে ‘সাফারি পার্ক’ এর উদ্দেশ্য হলো ‘দেশি বিদেশি বন্যপ্রাণীসমূহ প্রাকৃতিক পরিবেশে রেখে বংশ বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া এবং উন্মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করতে দেয়া।’ অর্থাৎ সংরক্ষিত বন আর সাফারি পার্কের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণই ভিন্ন।
জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে, আইনি বিধি নিষেধের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শুধুমাত্র প্রকল্পের স্বার্থে বন বিভাগ তাদের এই সাফারি পার্ক প্রকল্পে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করেছে যা অত্যন্ত আপত্তিকর। যে বন বিভাগ সংরক্ষিত বন থাকা অবস্থায় অবৈধ দখলদার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সে বন বিভাগ সাফারি পার্ক পরিচালনার মাধ্যমে টিকেট বিক্রি করে আর বনে বিনোদনের মাধ্যম তৈরি করে কিভাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন আর বন্যপ্রাণী রক্ষা করবে তা পরিবেশবাদীগণের বোধগম্য নয়।
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দেশের বনভূমি রক্ষায় রয়েছে সরকারের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি। তা সত্ত্বেও বন সংরক্ষণে আইনতভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত বন বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত বনকে সাফারি পার্কে পরিণত করার এমন বিধ্বংসী কর্মকা- বাস্তবায়িত হলে তা ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি নজির সৃষ্টি করবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বন বিভাগের এমন অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে প্রশাসনের সাথে পরিবেশবাদী ও সাধারণ জনগণের দূরত্ব বেড়ে যাবে এবং পরিবেশ প্রশাসনে অনাস্থার সৃষ্টি হবে।
এ চিঠির মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলাধীন জুড়ি রেঞ্জের অন্তর্গত লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের প্রকল্প বাতিলসহ এ বনে বন-বিরুদ্ধ সকল কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের অনুরোধ এবং নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের যথাযথ সংরক্ষণের জোরালো দাবি জানানো হয়।
চিঠিতে ‘মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা সুলতানা কামাল, ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবীর, ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র নির্বাহী পরিচারক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ‘বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা)র সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির,‘বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও তরুপল্লব’র সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিকল্পনা কমিশন, কৃষি,পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য সচিব এবং প্রধান বন সংরক্ষককে এ চিঠি দেয়া হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা