ফিলিস্তিনে বর্বর ইসরাইলিরা নির্বিচারে মুসলমান শিশু নর-নারী হত্যা করছে। ফিলিস্তিনির গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠাতে দিচ্ছে না ইসরাইল। ইসরাইলিরা ইসলাম ও বিশ্ব মানবতার দুশমন। পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ধার করতে হবে। আমরা মহান আল্লাহর গোলাম। বেশি গোলামি করতে পারলে আল্লাহ মান-সম্মান বাড়িয়ে দেবেন। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব এসব কথা বলেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন বলেন, বর্বর ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে মুসলিম শিশু নর-নারী হত্যা করছে। ফিলিস্তিনে মানবিক সাহায্য পাঠাতে দিচ্ছে না ইসরাইল। হিউম্যান রাইটস আজ কোথায়? এরা ইসলাম ও বিশ্ব মানবতার দুশমন। আল্লাহ বর্বর ইসরাইলকে ধ্বংস করে দিন। খতিব পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ধারে মুসলিম উম্মাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। খতিব বলেন, আমরা মহান আল্লাহর গোলাম। বেশি বেশি গোলামি করতে পারলে আল্লাহ সম্মান বাড়িয়ে দেবেন।

মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব মাওলানা রূহুল আমীন খান বলেন, ইয়াহুদি ও নাসারাদের কখনো বন্ধুরূপে গ্রহণ করবেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন- ‘হে মুমিনগণ! ইয়াহুদি ও নাসারাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে হবে তাদেরই একজন। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালনা করেন না।’ (সূরা মায়িদা : ৫১) “অবশ্য মুমিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহুদি ও মুশরিকদেরকে তুমি সর্বাধিক উগ্র দেখবে।” (সূরা মায়িদা : ৮২)।

আল্লাহর প্রিয় হাবীব (সা.)-এর জমানা হতে আজ পর্যন্ত বিশ্বাস ঘাতক, ষড়যন্ত্রকারী ইয়াহুদিদের ইতিহাসের প্রতি যদি দৃষ্টিপাত করি তবে আল্লাহপাকের হুমিয়ারীর সত্যতার অসংখ্য প্রমাণ দেখতে পাব। প্রিয়নবী (সা.) তথা মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া সত্যেও তারা বার বার চুক্তিভঙ্গ করেছে। এমনকি প্রিয়নবী (সা.)-কে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়েছে বার বার। একটু সুযোগ পেলেই মুসলমানদের নির্মূল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিভিন্ন সময়ে। কখনো দালানের ছাদ থেকে ভারি পাথর তাঁর মাথায় নিক্ষেপ করে, কখনো বিষপ্রয়োগ করে খায়বার অভিযানকালীন সময়ে, কখনো কাফির কোরেশদের সাথে আঁতাত করে। গাদ্দারী ওদের চলে আসছে একের পর এক। এখনো ফিলিস্তিনে চালিয়ে যাচ্ছে মুসলমান হত্যার মহোৎসব। বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে আশ্রয় শিবিরে, হাসপাতালে, বেসামরিক জনপদে। আর ওদের এ পৈশাচিক কর্মকা-ে অর্থ দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, সার্বিক মদত দিয়ে নির্লজ্জভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে আমেরিকা ও তার মিত্ররা। ওরা আমাদের বাংলাদেশে একের পর এক টিম পাঠাচ্ছে, প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে মানবাধিকার, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা বিধানের প্রেসক্রিপশন নিয়ে। ওরা ইরাক ধ্বংস করছে, আফগানিস্তানে বছরের পর বছর যুদ্ধ চালিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে অস্ত্র বিক্রির জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। গত ২৬ অক্টোবর দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “গাজা ও পশ্চিম তীরে ইয়াহুদিবাদী ইসরাইলের নির্মম বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫০৪ জন। আহত হয়েছে ১৯ হাজারেরও অধিক। নিহতদের ৭০ শতাংশ মহিলা, শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৫০০ জন। আজকের এই সময় পর্যন্ত এই সংখ্যা অবশ্যই আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাসী জারজরাষ্ট্র ইসরাইলি নরপিশাচদের এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার বাস্তব কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। আরব ও অনারব মুসলমান ভাইরা ইসরাইলের এই পৈশাচিক হত্যাকা-ের মোকাবেলায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে? আল্লাহপাক তো বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’। আমাদের পেয়ারা নবী (সা.) তো বলেছেন, (কেবল এক জাতি, এক উম্মত পরস্পরের ভাই ভাইই নয়) দুনিয়ার সব মুসলমান মিলে যেন একটি মানব দেহ। এই দেহের একটি চক্ষু (বা একটি অঙ্গ) যদি যন্ত্রণা প্রাপ্ত হয়, তবে তার সর্বশরীর যন্ত্রণা প্রাপ্ত হয়, এরূপ যদি তার মাথা আক্রান্ত হয় তবে তার সর্বশরীর যন্ত্রণায় অধির হয় (সহীহ মুসলিম)। রাসূল (সা.) বলেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই, তারা একে অন্যের প্রতি অত্যাচার করবে না, একে অপরকে শক্রর নিকট সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার (মুসলিম) ভাইয়ের অভাব মোচন করতে থাকে আল্লাহপাক তার অভাব দূর করতে থাকেন। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহপাক কিয়ামতের দিনের বিপদসমূহের মধ্য থেকে একটি বিপদ দূর করে দিবেন (বুখারী ও মসলিম)। ইসলামি ইতিহাসে এই অনুযায়ী আমল করার অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। আমাদেরও আজ ফিলিস্তিনি মুসলিমদের জালিম ইয়াহুদিদের হাত থেকে রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলিম উম্মাহকে যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।