ঢাকার সকল আবাসন প্রকল্পের তথ্য চাইলেন সুপ্রিম কোর্ট
০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০৭ এএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০৭ এএম
ঢাকার আশপাশে বেসরকারি আবাসন প্রকল্পগুলো কবে এবং কীভাবে, কোন্ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন পেয়েছেন তার বিশদ তথ্য চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
গতকাল প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো: আবু জাফর সিদ্দিকী।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীত দিকে হজ ক্যাম্পসংলগ্ন দক্ষিণখান থানার আশকোনা ও কাওলা এলাকায় অবস্থিত আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্প নিয়ে আপিল মামলার শুনানিকালে এ তথ্য চাওয়া হয়।
এ তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো: মোরসেদ। আদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন চ‚ড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হচ্ছে রাজউক। আর আবাসন প্রকল্প করতে হলে উদ্যোক্তাদের শতভাগ ভ‚মির মালিক হতে হবে। প্রকল্প এলাকা নারায়ণগঞ্জ থেকে গাজীপুরের মধ্যে। এটা রাজউকের অধীনে।
শুনানির একপর্যায়ে সরকারপক্ষীয় এ আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, বেসরকারি সব আবাসন প্রকল্পেই কি রাজউকের অনুমোদন আছে? যদি সেই অনুমোদন না থাকে তাহলে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন বলুন? একটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবেন, আরেকটির বেলায় নেবেন না এমন বৈষম্য করার সুযোগ আইনে নেই।
এ সময় শেখ মো: মোরসেদের উদ্দেশে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, কোন্ কোন্ বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে রাজউকের চ‚ড়ান্ত অনুমোদন রয়েছে সেটির নথি নিয়ে আসুন। আমরা এগুলো দেখতে চাই। কোন প্রক্রিয়ায় অনুমোদন হয়েছে সেগুলোও দেখতে চাই। শেখ মো. মোরশেদ জবাবে বলেন, এই মুহূর্তে এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারছি না। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি সরকার পক্ষ। আপনার দায়িত্ব অনেক বেশি।
আশিয়ান সিটির পক্ষে এ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী ও আহসানুল করিম শুনানি করেন।
শুনানিতে আহসানুল করিম বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসকসহ সব কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এ প্রকল্প করা হয়েছে। এই প্রকল্পে সিএস, আরএস, এসএ রেকর্ড ও মহানগর জরিপ, ড্যাপ-২০১০ ও ২০২৩ অনুযায়ী এ প্রকল্পের কোনো এলাকায় জলাভ‚মি নাই। কিন্তু আপিল বিভাগের আদেশে হাইকোর্টের রায় স্থগিত হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আশিয়ান সিটি ও এর প্লট ক্রেতারা।
এ এলাকায় বড় বড় হাউজিং প্রকল্পগুলোর যথাযথ অনুমোদন না থাকা সত্তে¡ও তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি।
আশিয়ানের পক্ষে এ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ঢাকা সিটির পূর্ব পাশ ভরাট হয়ে গেছে। যারা হাউজিং প্রকল্প করেছে তারা তাদের প্লট বিক্রি করে ফেলেছে। কিন্তু আমি (আশিয়ান সিটি) যে তিমিরে আছি সেই তিমিরেই রয়ে গেছি। তিনি বলেন, মামলার রেকর্ডে যা আছে কোর্টকে সেটাই বিশ্বাস করতে হবে। নইলে এভিডেন্স দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, সবাইকে পথ দেখাতে গিয়ে আপনি নিজেই বিপদে পড়ে গেছেন।
এর আগে আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে দেয়া রাজউকের অনুমোদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের দেয়া আশিয়ান সিটির অবস্থানগত ছাড়পত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বøাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ, নিজেরা করি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন নামের মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী ৮টি সংগঠন ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর রিট করে। পিটিশনে বলা হয়, আশিয়ান সিটি ৪৩.১১ একর জমির জন্য অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু কাজ করছে ২৩০.৪৬ একর জমিতে। তারা যে জমি ভরাট করেছে সেটা নিম্ন জলাভ‚মি। জলাভ‚মি ভরাটের জন্য তাদের জরিমানাও করা হয়। কিন্তু এই প্রকল্পটি জলাশয় ভরাট করে করা হয়নি বলে জানান এ্যাডভোকেট আহসানুল করিম।
শুনানির একপর্যায়ে রিটকারী সংগঠনগুলোর কৌঁসুলি ফিদা এম কামাল, প্রবীর নিয়োগী ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ের ওপর আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এই স্থগিতাদেশ থাকার পরেও তারা প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে কি কোনো আদালত অবমাননার আবেদন নিয়ে এসেছিলেন?
জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা কোনো পদক্ষেপ নিইনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, বেলা একটা সম্মানি প্রতিষ্ঠান। আপনাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ট মতের ভিত্তিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীত দিকে হজ ক্যাম্পসংলগ্ন দক্ষিণখান থানার আশকোনা ও কাওলা এলাকায় অবস্থিত আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্পকে অবৈধ বলে রায় দেন। বিচারপতি এ বি মাহমুদুল হক, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের গঠিত বেঞ্চের দু’জন বিচারপতি আসিয়ানের প্রকল্পটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
আর একজন বিচারপতি রিট খারিজ করে প্রকল্পটি বৈধ বলে আদেশ দেন। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশের পর আশিয়ান সিটি আবাসিক প্রকল্প কর্তৃপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন করে। এরই মধ্যে বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেন হাইকোর্টে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ায় তিনি এখন আর বিচারপতি হিসেবে নেই। এ অবস্থায় ওই রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি পৃথক একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন।
বিচারপতি এবি মাহমুদুল হক, বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে এই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। এই বেঞ্চে শুনানি শেষে গত ১৬ আগস্ট আদালত রিভিউ আবেদনটি মঞ্জুর করেন। নতুন এ রায়ে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি দেয়া রায় বাতিল করা হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গ্রেফতার কারা আসামী যুবদল নেতাকে গারদ ভেঙ্গে নিয়ে গেলো শ্রীনগর বিএনপি
লক্ষ্মীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের, আহত ৯
দেশের হয়ে আর খেলবেন না তামিম
গোপালগঞ্জে বিএনপি-আওয়ামীলীগ সংঘর্ষ
হেরেই চলেছে ঢাকা, পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙল সিলেট
মুকসুদপুরে ক্যালেন্ডার বিতরনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ আহত ২০ জন
১০ জেলায় শৈত্যপ্রবাহসহ সারাদেশে তীব্র শীত
আ.লীগ ক্রীড়াঙ্গনেও ব্যাপক দলীয়করণ করেছিল : মির্জা ফখরুল
নালিতাবাড়ীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযানে ড্রেজার মেশিন ও পাম্প জব্দ
ছাগলনাইয়ায় এসএসসি ব্যাচ-২০০০’র বন্ধুদের মেজবান ও মিলনমেলা
রাতের আধারে দুস্থ রোগীদের শীতবস্ত্র দিলেন ইউএনও
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল : চিকিৎসক
ঝগড়ার সময় স্ত্রীকে বাপের বাড়ী চলে যেতে বা মন ইচ্ছামতো চলতে বলা প্রসঙ্গে।
ফারুক হাসানের উপর হামলা ও আসামিদের জামিন পাওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় : খসরু
মানিকগঞ্জে ওয়ারেন্টের ৫ আসামী গ্রেফতার
আশুলিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পিঠা উৎসব
সন্ধান মিললো ফ্যাসিস্ট গণহত্যার শিকার আরও ৬ শহীদের লাশ!
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু হত্যার বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ
ছাগলনাইয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
কেরানীগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হাতে নিহত ১