ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

ওমরায় থেকেও টঙ্গীতে গাড়ি ভাঙচুর মামলার আসামি

Daily Inqilab টঙ্গী সংবাদদাতা

০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

টঙ্গী মুদাফা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন গত ২৩ অক্টোবর ওমরাহ কাফেলা নিয়ে সউদী আরব রওনা দেন। যিনি হজ্ব মওসুম ছাড়াও প্রায় প্রতি মাসেই কাফেলা নিয়ে ওমরাহ করতে যান সউদী আরব। অথচ ওমরাহ পালনরত অবস্থায় টঙ্গীর কলেজ গেইট এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে তার পরিবার জানান।
টেলিফোনে যোগাযোগ করলে মামলায় আসামির তালিকায় ১৪ নম্বরে থাকা মকবুল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, সব আল্লাহ দেখছেন। ওমরায় এসে শুনালাম আমি নাকি গাড়ি ভাঙচুর করেছি। এটা শুনার পর কাবা ঘরের গিলাফ ধরে বলেছি, আল্লাহ যেন এর সঠিক বিচার করেন।
এই মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়। যাদের সবাইকে জামায়াত ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উল্লেখ করা বেশিরভাগ আসামিই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
মামলায় ১৯ নম্বর আসামি নাসির মোল্লা বলেন, বাড়ির জমি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মাহাম্মদের সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। এ কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে। এমনকি একসঙ্গে চলাফেরা করায় তার তিন বন্ধুকেও আসামি করা হয়েছে এই মামলায়। তারা কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থেকেও আসামি হওয়ায় ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
নাসির বলেন, ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে এভাবে গায়েবি রাজনৈতিক মামলা দিয়ে হয়রানির ফল ভালো হবে না। যাচাই-বাছাই ছাড়া এভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়বে না বরং হিতে বিপরীত হবে। তার মতো সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা হওয়ায় পুরো এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।
মামলায় ২০ নম্বরে নাম থাকা হাবিব উল্লাহ বলেন, তিনি মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিকাজ করেন। তিনি জীবনে কখনো কোনো মিছিলে অংশ নেননি। অথচ মামলায় আসামি করে বলা হচ্ছে রাতে গাড়ি ভাঙচুর করতে গেছেন। যা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তিনি সাধারণ মানুষকে হয়রানি থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ করেন। এছাড়া মামলায় ১৭ নম্বরে আসামি হিসেবে নাম রয়েছে মনির হোসেন নামে একজনের। যিনি এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে টঙ্গীর গুটিয়া-শুলিয়ায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ মানুষকে গায়েবি মামলায় আসামি করায় এলাকার লোকজন চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে। এমনকি অনেক আওয়ামী লীগ কর্মীরাও বিষয়টি ভালভাবে নিচ্ছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, গ্রামে সবাই সবার আত্মীয়। দুএকজনের কথায় এভাবে হয়রানীমূলক মামলা দেয়া ঠিক হয়নি। এসব মামলার কারণে তারা এলাকায় চাপের মুখে পড়েছেন।
গত ২ নভেম্বর করা মামলার বাদী টঙ্গী পশ্চিম থানার এসআই আবাদুল আওয়াল। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ১ নভেম্বর রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে সংবাদ পান, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা লাঠি-সোটা, ইট-পাটকেল নিয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন কলেজ গেট হতে হোসেন মার্কেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পরে আউচপাড়াস্থ সফিউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাত প্রায় ৯টার দিকে পৌঁছে দেখতে পান যে, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা রাস্তায় চলাচলরত গাড়ী ভাঙচুর করে।
এজাহারে বলা হয়, নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের দিকে এলোপাথারি ইট-পাটকেল ছোড়ে এলোমেলোভাবে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় ১১ জনকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা পালিয়ে যায়। পরে একটি মোটর সাইকেল, চারটি এসএস পাইপ, ১০টি বাঁশের লাঠি, ১৫টি ভাঙ্গা ইটের টুকরা, ১২টি ভাঙ্গা কাচের টুকরা এবং দুই লিটার পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ৫২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই মামলার আসামি মকবুল হোসেন ওমরাহ করতে গিয়েছেন তা আমি জানি। এছাড়া অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আমরা জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতি করার কারণে এলাকার সবাইকে চিনি। তাই এসব ক্ষেত্রে আমাদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। নইলে দলের বিষয়ে লোকজনের ক্ষোভ তৈরি হয় এবং আমাদের ওপর চাপ আসে।
জনমনে আতংক ও ত্রাস সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষে দাহ্য পদার্থ দখলে ও নিয়ন্ত্রণে রেখে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম করে ক্ষতি করার অপরাধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) ২৫ঘ ধারায় ওই মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে টঙ্গী পশ্চিম থানার এসআই শরীফ হোসেনকে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালার তদন্ত চলমান আছে। ঘটনার সময় কেউ দেশের বাইরে থাকলে তিনি আসামি হবেন না। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আমি বলতে পারছি না কে ওমরা ছিলেন বা ছিলেন না। মামলাটি গায়েবি মামলা বলে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্তের আগে আমি কিছুই বলতে পারছি না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা