রুটিরুজি বন্ধ তারপরও হকাররা চান ভোটের অধিকার
০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
স্যার, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা ফেরি ফ্লাইওভারের দাঁড়িয়েছি। অতপর সেখান থেকে চলে এসে যাত্রাবাড়ি সিগন্যালে দাঁড়িয়েছি। ঝাল আমড়া ও পেয়ারা বিক্রি করেছি একশ টাকা। দিনের বাকি সময় বড়োজোর আরো একশ টাকা বিক্রি করতে পারবো। সারাদিন কাজ করে টিককে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আমাদের দিনটা কঠিন ভাবে চলছে। গত সপ্তাহের তিন দিনের অবরোধে ছিল একই অবস্থা। আজ অবরোধের প্রথম দিন। সড়কে গাড়ি কম, যাত্রী তেমন নেই সিগ্যনালে গাড়িও থামে না, ক্রেতাও নাই। ঘরে দুই ভাইবোন আর মা। মা ফুল অসুস্থ, সেও বেকার। অবরোধের প্রথম দিন গতকাল কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ি মোড়ের থানার পাশের সিগন্যালে দাঁড়ানো হকার আজিজুল। সে বাসে পেয়ারা, আমরা, শশা, ঝালমুড়ি বিক্রেতা। তার সঙ্গে যখন কথা হয়, পাশেই ছিল আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা জানান, অবরোধে যানবাহন কম। আজিজুল বললো, বিএনপির অবরোধে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু যদি তারা সফল হয় তাহলে তো ভোট দিতে পারবো।
যাত্রাবাড়ি সিগন্যালে এ সময় আরো কয়েকজন হকার এসে জড়ো হন। হাতে বিক্রির জিনিস। একজন খেলনা, মিনি লুডু, ক্যারাম বোর্ড বিক্রেতা, একজনের গলাফ পা-সিগারেটের ডালা, আরেকজনের হাতে ছোট ছোট গাড়ির কাগজ রাখা ব্যাগ ও মলম-ফিতা। একজন হকার বলেন, স্বাভাবিক দিনে বিক্রি শেষে তার আয় হয় ৭০০ টাকার মতো। এরজন্য তাকে প্রায় ২ হাজার বিক্রি করতে হয়। সারা দিনে গত সপ্তাহের অবরোধে বিক্রি হয়েছে যা, তাতে হাতে কিছু ছিল না। রোববার ৫ নভেম্বর সকাল থেকে বিক্রি করেছেন মাত্র ১৫০ টাকা। তিনি বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার কিছু গাড়ি সিগন্যালে ছিল, কিন্তু অফিসের যাত্রীরা কেনেনি। সাধারণত বেলা ১১টার পর দীর্ঘসময় গাড়ি দাঁড়ালে তখন কেনাবেচা হয়। এই অবরোধ মানুষজন কম, বিক্রিও কম। তবে অবরোধে সাময়িক কষ্ট হলেও যদি দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে মানুষ ভোট দিতে পারে তাহলে এই কষ্ট মেনে নিতে রাজী। কিন্তু সরকারতো পুলিশ-র্যাব-বিজিবি দিয়ে ভোট করেছে আগের মতোই।
রাজধানীজুড়ে কেবল সিগন্যালে অসংখ্য হকার পণ্য বিক্রি করে জীবন যাপন করেন। এর বাইরে বিভিন্ন ফুটপাতে এবং ফেরি করে হাজার হাজার হকার পণ্য বিক্রি করে সংসার চালান। একদিনের হরতাল বা অবরোধে তাদের জীবন স্থবির হয়ে পড়ে, খাওয়া দাওয়ায় কষ্ট হয়। সেখানে দিনের পর দিন যদি কাজ না থাকে, এই বাজারে চলবে কী করে, এমন প্রশ্ন করেছেন তারা। তবে কেউ কেউ বলছেন, অবরোধের মাধ্যমে যদি জনগণের ভোটের অধিকার আদায় হয় তাহলে আমরা খুশি। শহিদুল ইসলাম নামের এক খিলিপান ব্যবসায়ী বললেন, হকার হতে পারি; কিন্তু বিএনপিকে সমর্থক করি। কারণ এ সরকার ১৫ বছর জুলুম নির্যাতন করেছে; বিদেশে টাকা পাচার করেছে। পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। আমরা কি পদ্মা সেতু খাব? গণতান্ত্রিক দেশে জন্মের পর থেকে ভোটি দিতে পারিনি। যদি ভোট দিতে না পারি তাহলে কিসের গণতন্ত্র? পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একজন রিক্সাওয়ালা আইন শৃংখলা বাহিনীর সামনেই শ্লোগান দিতে দিতে গেল ‘এক দফা এক দাবি/ শেখ হাসিনা কবে যাবি’।
বিএনপি-জামায়াতের দ্বিতীয় দফায় ডাকা অবরোধের প্রথম দিন ছিল গতকাল রবিবার। গত তিন দিনের অবরোধ ও একদিনের হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে অবরোধ বিরোধী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বাসে অগ্নি সংযোগ নিয়ে এতে অপরকে দায়ী করছে। তবে ঢাকা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ অবরোধে বাস নামানোর ঘোষণা দিলেও যাত্রী না থাকায় মালিকরা বাস নামায়নি। তবে স্বল্প সংখ্যক বাস চলাচল করেছে। অবরোধের আগের রাত থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। এ সময়ে অন্তত ৯টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর।
বিএনপির অবরোধের ডাক দিলেও রাজপথে কম সংখ্যক নেতাকার্মী নেমেছে। একদিকে সিনিয়র নেতাসহ গ্রেফতার চলছে। এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশের পর সহিংসতার ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৮ দিনে রাজধানীতে আইনশৃংখলার অবনতি ও সহিংসতায় ৮৯টি মামলা হয়েছে। এতে বিএনপির ২ হাজার ১৭২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফলে বিএনপির পিকেটিং খুবই কম। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা লাঠি-লগি-বৈঠা হাতে মোড়ে মোড়ে পাহারা দিচ্ছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের চারপাশে পাশে সারি সারি নানা রঙের দোকান, ফুটপাতে সানগ্লাস বিক্রেতা, শীতের পোশাক, মোজার ঝুড়ি নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা, ক্রেতা নেই। সানগ্লাস বিক্রেতা মকবুল হোসেন বলেন, দোকানে বিক্রি নাই। আমার দোকানে সাধারণত রাস্তার খেটে খাওয়া মানুষ, এখানকার হকার ও বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষারতরা খাওয়া দাওয়া করে। হকারের বিক্রি নাই। শফিকুল নামের এক চা বিক্রেতা বলেন, রাস্তায় মানুষ নেই আমার থেকে চা পাউরুটি খাবে কী করে? রাস্তায় বাস নেই, কেউ বাসের অপেক্ষায় নেই, কে চা খাবে। এভাবে চললে আর পেটে ভাত জুটবে না। তবে আমরা ভোটের অধিকার আদায়ের অবরোধকে সমর্থন করি। যদি কষ্ট করেও আগামীতে ভোট দিতে পারি তাহলে আজকের কষ্ট স্বার্থক হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও কাঁচপুরের তিনটি বাসস্ট্যান্ডে দূরপাল্লার বাসগুলোর বেশিরভাগ কাউন্টারগুলো ছিল বন্ধ। কয়েকটি কাউন্টার খোলা দেখা গেলেও পরিবহন-সংশ্লিষ্ট কর্মীরা বলছেন, যাত্রী সংকটে গাড়ি ছাড়া হয়নি। বাসস্ট্যান্ডে শুয়ে-বসে, কার্ড খেলে সময় কাটছে শ্রমিকদের। হাসানুল নামে এক হেলপার বলেন, ঘরে বসে অবরোধ বললেই বাসে আগুন দেয়, আমরা বসে থাকি। অবরোধ- হরতালে পিকেটার নাই, তারপরেও ভয়ে গাড়ি বের করে না ওস্তাদ। গাড়ি পুড়ে গেলে যাত্রীদের দায়িত্ব কে নেবে? তা ছাড়া অনেকেই অবরোধ সমর্থন করে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আমাদের বাস দু’দিন বন্ধ থেকে যদি মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পায় তাহলে আজকের কষ্ট স্বার্থক হবে।
রাজধানী ঢাকার আরো কয়েকজন হকার, পরিবহণ শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললে তারা সকলেই অবরোধে খাবার কষ্টের কথা বলেছেন। তবে তারা অবরোধকে সমর্থন করছেন এবং বলছেন, ভোটের অধিকার আদায়ের কর্মসূচিতে আমরা না গেলেও দূর থেকে সমর্থক করছি। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের ১৮ বছর আজ
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু