নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ

জ্বালানি নিয়ে উদ্বেগ বিপিসির

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজনীতিতে ততই সংঘাত এবং অনিশ্চয়তা বাড়ছে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে তেলবাহী গাড়ির চলাচলের নিরাপত্তা চেয়ে বিপিসির চিঠি এবং উদ্বেগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সহিংসতার ঘটনায় জ্বালানি তেল পরিবহনে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
গতকাল রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ শেষে আগামী ১২ নভেম্বর থেকে তারা বিরতিহীন কিংবা অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা আসতে বলে জানা গেছে। বিএনপির ডাকা অবরোধে রেল, সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ নির্বিঘ্ন রাখতে ‘অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াত’ শুরু করছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। এ লক্ষ্যে সারা দেশে সর্বমোট ৬৫ হাজার আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত দুদিন রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে তারা মোতায়েন থেকে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া রেললাইন রক্ষায় সারাদেশে ১ হাজার ৪৭৬টি পয়েন্টে ১০ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা মাঠে রয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) চিঠিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন ডিপো থেকে প্রতিনিয়ত ট্যাংকলরির মাধ্যমে জ্বালানি তেল বিভিন্ন পয়েন্টে তেলের জোগান নিশ্চিত করা হয়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের ডিপোগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তেল পাঠানো হয়। তাই হরতাল-অবরোধে তেলবাহী গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বিপিসি এক চিঠিতে শনিবারও ডিপোগুলো খোলা রাখতে অফিস আদেশ জারি করেছে। এতে বলা হয়, টানা অবরোধের কারণে নিবন্ধিত ডিলাররা ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন করতে পারেনি। এজন্য জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে শনিবার করে তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর প্রধান স্থাপনাসহ ডিপো খোলা রাখাসহ তেল বিপণনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য মতে, গত ১২ বছরে পিডিবি লোকসান গুনেছে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। বিপরীতে চলমান ও আগামী এই ২ অর্থবছরেই পিডিবি লোকসান গুনবে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিগত ১২ বছরে বিদ্যুৎখাতে সরকার মোট যা লোকসান করেছে, শুধুমাত্র আগামী ২ বছরেরই তারচেয়ে বেশি লোকসান করবে। আগে পিডিবি বছরে যে পরিমাণ লোকসান গুনত, এখন ২ মাসেই তার কাছাকাছি পরিমাণ লোকসান হচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জ ও জ্বালানি আমদানি মূল্য মূলত ডলার পেমেন্ট বলে ক্যাপাসিটি চার্জের বর্তমান মডেল কোনোভাবেই টেকসই নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে সরকারের উদ্যোগ হচ্ছে, রিজার্ভ বাঁচাতে আমদানি নির্ভর প্রাথমিক জ্বালানি কম কিনে, বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে পরিকল্পিত লোডশেডিং করা এবং নাগরিকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানানো।
বিপিসির পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া ইনকিলাবকে বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে জ্বালানি তেল পরিবহনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তেল পরিবহন ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবারও প্রয়োজনে ডিপোগুলো খোলা রেখে তেল সরবরাহ করা হবে। শনিবারও সারাদেশের ডিপোগুলো খোলা ছিল। বিপিসির উদ্বেগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের ডিপোগুলো থেকে বিমানের জ্বালানি তেল জেট-১ বিমানবন্দরে পরিবহন করা হয়। কোনো কারণে বিমানের জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে বড় সংকট তৈরি হবে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পদ্মা ডিপো থেকে বিমানের জ্বালানি তেল পরিবহনে পুলিশের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোদনাইল ডিপোর এক কর্মকর্তা বলেন, বিপিসি থেকে ইতোমধ্যে জ্বালানি বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমরাও স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি; যাতে স্থানীয় তেলের ডিপো, তেল পরিবহনকারী গাড়িগুলোর নিরাপত্তা দেওয়া হয়। অবরোধ-হরতালে প্রতিনিয়ত স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে জ্বালানি বিভাগের একজন যুগ্মসচিব বলেন, জ্বালানি বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিটি থানা এলাকায় জ্বালানি তেলের ডিপো, তেল পরিবহনকারী গাড়ি ও জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসপিদের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৪ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা ‹ডলারে› গচ্ছা গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে। ভর্তুকির চক্র থেকে বিদ্যুৎখাতকে বের করার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে বিনিয়োগ আসবে না বিদ্যুৎখাতে, এমন মিথ্যা থামাতে হবে। বেসরকারি উৎপাদনকারীরা স্থানভেদে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বর্ধিত দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবেন, সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে নূন্যতম এক-চতুর্থাংশ বা অর্ধেক (এমপিপি কাঠামো) বিদ্যুৎ কেনার নিশ্চয়তা দেবে এই ২ শর্তই যথেষ্ট। সঙ্গে সহজ ব্যাংক ঋণের বিষয়টি থাকবে। ক্যাপাসিটি চার্জ লুটেরা মডেল। স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে ওভারহোলিং চার্জ। অর্থাৎ যতটুকু সময় বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উৎপাদনে থাকতে পারবে না (সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ), সেসময়ের জন্যও একটা চার্জ দেওয়া, যাতে বিনিয়োগ সুরক্ষিত হয়। কিন্তু মাসের পর মাস উৎপাদনে অক্ষম, অথচ ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া বাজেট ড্রেনিং অপচুক্তি। ডলারে পেমেন্ট করা আইপিপি চুক্তি বিদ্যুৎখাতের প্রধানতম সংকটের জায়গা। সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি› ব্যাংক ঋণের কোলেটার‌্যাল বলে, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ডলার নয় বরং টাকায় পেমেন্ট দিতে হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশীয়, তাদেরকে ফরেন কারেন্সি পেমেন্ট দেওয়া অযৌক্তিক। ইউনিট প্রতি উচ্চমূল্য, ক্যাপাসিটি ও ওভারহোলিং চার্জ, স্বল্পমূল্যে জ্বালানি ও জমি, সহজ ব্যাংক ঋণ, শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা ইত্যাদি ‹বাজেট ড্রেনিং› গ্যারান্টি বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ফান্ড সংকটের সমাধান নেই।
দেশের রাজনীতি সংঘাতে ঢুকে পড়েছে। নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার, রিমান্ডের মুখে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। সরকার আরোও কঠোর হচ্ছে। দুই পক্ষ এখন সংলাপ ও সমঝোতার বা কোনো ছাড় দেওয়ার মানসিকতায় নেই। রাজনীতিতে সংঘাত, অনিশ্চয়তা বাড়ছে। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিরোধ থেকে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছিল। এই উত্তেজনার পর গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঘটেছে সহিংসতা, প্রাণহানি। এমন পরিস্থিতির জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক

মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক

দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম

দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম

জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে

জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে

সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট

সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট

মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে

মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে

চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল

চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল

সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক

সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক

মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’

মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’

সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ

সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে

মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে

মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার

ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্

ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্

মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫

মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫

ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান

ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান

মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু

গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন