বাস নামানোর অনর্থক ঘোষণা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম

বার বার ঘোষণা দিয়েও সড়কে বাস নামাচ্ছে না মালিকরা। হরতাল-অবরোধের আগের দিন বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয় তারা বাস চলাচল অব্যাহত রাখবেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের দিন ঠিকই দেখা যায় রাস্তা ফাঁকা কোনো যানবাহন নেই। বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর দূরপাল্লার বাস তো একেবারেই বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কে বাস নামানো হলেও যাত্রী সঙ্কটে খরচের টাকাও উঠেনা। তাই হরতাল-অবরোধের সময় বাস নামানো হয় না।
আজ রোববার থেকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা চতুর্থ দফার অবরোধেও ঢাকাসহ সারাদেশে বাস-মিনিবাস চলবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান তিনি।
এনায়েত উল্যাহ বলেন, রোববার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে। মালিক সমিতি সব রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য সমিতি ও কোম্পানির মালিকদের অনুরোধ করছে। তিনি বলেন, জনবিরোধী এ হরতাল-অবরোধে মালিক-শ্রমিকরা কখনো সাড়া দেবে না বরং প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবরোধে গাড়ি চলাচলে যেন কোনো ধরনের বাধা দেওয়া না হয় সেজন্য রাজধানী ঢাকাসহ জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বিএনপির টানা অবরোধ কর্মসূচিতে দেশের দূরপাল্লার গণপরিবহনগুলো যাত্রী শূন্য হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব যায়গাতেই উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বিএনপির প্রতিটি অবরোধ কর্মসূচির দিনই বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় যাত্রীদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রয়োজন থাকলেও অনেক যাত্রীই নিরাপত্তা ঝুঁকি মনে করে দূরপাল্লার পরিবহনে যাত্রা থেকে বিরত থাকছেন।
সব সময়ই রাজধানীর সায়দাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা যায়। তবে বেশ কিছুদিন যাবত এই বাস টার্মিনালগুলোতে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। অনেক পরিবহন শ্রমিকই যাত্রী সঙ্কটে কর্মহীন হয়ে পড়ছে। সরেজমিনে সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, পরিবহন শ্রমিকরা দূরপাল্লার বিভিন্ন গণপরিবহন ধোয়া-মোছার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সায়দাবাদ টার্মিনালে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, এই মাসের শুরু থেকেই যাত্রী নেই। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা ট্রিপ মারলেও যাত্রী কম। গাড়ি লইয়া বাইর হইলেই মহাজনরে খরচ দিতে হয়। রাস্তার খরচ, তেল খরচ, ড্রাইভার খরচসহ প্রায় ২০-৩০ হাজার টাহা খরচ পইরা যায়। তাতে গাড়ির (বাস) খরচই ওঠে না, আমাগো পেট চালামু কেমনে। এমনে চলতে থাকলে আমাগো না খাইয়া মরা লাগবো। যাত্রী কম থাকায় আপাতত গাড়ি বন্ধ রাখতে বলছে মহাজন (বাস মালিক)।
মহাখালী বাস টার্মিনালের চিত্রটিরও একই অবস্থা। টার্মিনালভর্তি বাস থাকলেও নেই যাত্রী। দুয়েকজন যাত্রী এলেও বাস না ছাড়ায় তারাও ফেরত যাচ্ছেন। তবে মাঝে মধ্যে কয়েকটি রুটের বাস স্বল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। উত্তরবঙ্গগামী পরিবহন সেক্টরে সব চেয়ে বেশি যাত্রীদের চাপ থাকে গাবতলী বাস টার্মিনালে। তবে বেশ কিছুদিন যাবত সেখানকার চিত্রটি অনেকটাই ভিন্ন। যাত্রীদের পাশাপাশি কাউন্টারের সংখ্যাও অনেক কম। অনেক টিকিট কাউন্টারই বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। তবে অন্যান্য বাস টার্মিনালের চেয়ে গাবতলীতে যাত্রীর সংখ্যা একটু বেশি রয়েছে।
একটি পরিবহনের ফকিরাপুল বাস কাউন্টারের ব্যবস্থাপক বলেন, যাত্রী কম থাকায় আমাদের কম সংখ্যক গাড়ি ছাড়ে। সেই ক্ষেত্রে যাত্রীদের শিডিউল মিস হয় মাঝে মাঝে। তবে যাত্রীদের ফোন করে বলে দেওয়া হয়। চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই ঢাকার বাইরের যাত্রী খুবই কম। যাত্রী অনুযায়ী রাতে দুয়েকটা গাড়ি ছাড়া হয়। হরতাল অবরোধের মধ্যে রাস্তায় বাস নামানো অনেক ঝুঁকি থাকে। যাত্রী না হলে আমরা বাস ছাড়ি না। প্রতি ট্রিপে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। যাত্রী না পেলেই এই খরচ বহন করা সম্ভব হয় না।
টার্মিনালে আসা যাত্রীরা জানান, মহাসড়কে বাসের সংখ্যা কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। কিছু সংখ্যক বাস এই টার্মিনাল থেকে ছাড়লেও আগের চেয়ে অধিক ভাড়া দিতে হচ্ছে। এদিকে ঢাকার পার্শবর্তী জেলাগুলোর পরিবহন ভাড়া বেশি চাওয়ায় অনেকেই আবার বাধ্য হয়ে সিএনজিসহ বিভিন্নভাবে প্রয়োজনের তাগিদে ঢাকা ছাড়ছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহনব্যবস্থার নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণপরিবহন ও যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। সরকার ও বিরোধী দলগুলোর বোঝা উচিত আগে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। ###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস

শুল্ক-কর বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহার দাবি নাগরিক কমিটির

শুল্ক-কর বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহার দাবি নাগরিক কমিটির