গুরু অপরাধের লঘু দণ্ড
১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম
গুরু অপরাধে দায়ের হচ্ছে লঘু ধারার মামলা। প্রকৃত অপরাধ আড়াল করতেই নেয়া হচ্ছে এ কৌশল। এতে অধরা থেকে যাচ্ছে বড় দুর্নীতিগ্রস্তরা। একই সঙ্গে কম দুর্নীতি করেও অনেকে টানছেন জেলের ঘানি। দুর্নীতি বিরোধী রাষ্ট্রীয় সংস্থা ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ (দুদক)-এ অহরহই ঘটছে এমনটি। তবে ‘ঝামেলা’ এড়ানো, সস্তায় বাহবা কুড়ানো, মামলার পরিসংখ্যান বৃদ্ধি এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে গোপন সমঝোতায়ও এমনটি ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার ভেতর যে দুর্নীতি রয়েছে সেটির ওপর আগে অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন।
নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। ‘অনিক ট্রেডার্স’ এবং ‘আহমেদ এন্টারপ্রাইজ’ নামক দু’টি প্রতিষ্ঠান খুলে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে সাজ্জাদ। মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং আসবাবপত্র সরবরাহ দেখিয়ে তিনি হাতিয়ে নেন শত শত কোটি টাকা। সর্বশেষ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পর্দা কেলেংকারির সঙ্গে মুন্সি সাজ্জাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ব্যবসার আড়ালে দুর্নীতিলব্ধ অর্থে নামে-বেনামে অর্জন করেন বিপুল সম্পদ। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের অনুসন্ধান করে দুদক। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় দেখা যায়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (দন্ত বিভাগ) গণপতি বিশ্বাস শুভ, হাসপাতালের সাবেক জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) মিনাক্ষী চাকমা, হাসপাতালের সাবেক প্যাথোলজিস্ট এএইচএম নূরুল ইসলাম, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডার্সের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন, মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মুন্সি ফররুখ আহমেদ ও জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন।
এ ঘটনায় পরবর্তীতে মামলা দায়ের করা হয়। অন্যদিকে মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন এবং তার স্ত্রী ফারজানা হোসেইনের সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ দেয় দুদক। তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে দুদকের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মো: ফেরদৌস রহমান বাদী হয়ে পৃথক ২টি নব-সাবমিশন মামলা দায়ের করেন। কিন্তু অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে বলে শোনা যায় নি।
দুদক আইন-২০০৪-এর ২৬ (২) ধারা অনুযায়ী সম্পদ বিবরণী দাখিল না করলে সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। পক্ষান্তরে, ২৭(১) ধারা অনুযায়ী অবৈধ সম্পদ অর্জন করলে সর্বনিম্ন ৩ বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার কথাও বলা আছে। বাজেয়াপ্ত হতে পারে সম্পদ। মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন দম্পতির বিরুদ্ধে ২৬(২) ধারা প্রয়োগ হলেও অব্যহৃত রয়ে যায় ২৭ (১) ধারা। অর্থাৎ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত-এর ধারা প্রয়োগ না করে তার বিরুদ্ধে মাত্র ৩ বছর কারাদণ্ডের ধারাটি ব্যবহৃত হয়েছে। এভাবে তাকে লঘু দণ্ডের ধারা প্রয়োগ করে বাঁচিয়ে দেয়া হয় গুরুদণ্ড প্রাপ্তি থেকে। এ রকম বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ননীগোপাল নাথের বিরুদ্ধেও ‘নন-সাবমিশন’ মামলা করে দুদক। দেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি হলো-মার্ক গ্রুপের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে নন-সাবমিশন মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো: মুজিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। ২০১২ সালে ননীগোপাল নাথের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুদক। নন-সাবমিশন মামলা দায়েরের মাধ্যমে তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানটি তখন ধামাচাপা দেয়া হয়।
এর আগেও দুদকের একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় দুদক নন-সাবমিশন মামলা করে পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক হামিদুল হকের বিরুদ্ধে। এ মামলাটির চার্জটিশ দাখিলের পর বিচার হয়। বিচারে আদালত ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট হামিদুল হককে ২ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সেই সঙ্গে অর্থদণ্ড করেন ৫০ হাজার টাকা। অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড। এই মামলার মধ্যদিয়ে হামিদুল হক এবং তার স্ত্রী রেহানা বেগমের নামে যে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিলো- সেই অনুসন্ধানটি ধামাচাপা দেয়া হয়।
লঘু দণ্ডের ধারা প্রয়োগ করে গুরুদণ্ডের অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার এই প্রবণতা সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো: মঈদুল ইসলাম বলেন, ২৬(২) ধারায় মামলা হলে এ মামলার ধারাবাহিকতায় ২৭(১) ধারার মামলাটিও হতে হবে। একটি ধারা প্রয়োগ করে অন্যটি প্রয়োগ না করার কোনো সুযোগ আইনে রাখা হয়নি। এমনটি ঘটে থাকলে কি কারণে ঘটেছে সেটিরও অনুসন্ধান হওয়া উচিৎ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস