সংবিধানই নিম্ন আদালত সম্পূর্ণ ও উচ্চ আদালতের ৯৯ ভাগ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে রাখার ব্যবস্থা করেছে
১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম
দেশ বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দেশের নিম্ন আদালত সম্পূর্ণ ও উচ্চ আদালতের প্রায় ৯৯ ভাগই সরকার প্রধানের (প্রধানমন্ত্রী) অধিনে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে আমাদের সংবিধান। এমন বাস্তবতায় আইন সবার জন্য সমান হতে পারে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীতে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত বেশ কয়েকজন আইনজীবীর জাতীয় পার্টিতে যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট দুটি কাজ ছাড়া সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে হবে।
জিমে কাদের বলেন, আমরা উন্নয়নের নামে মানুষকে অত্যাচার করছি, উন্নয়নের নামে লুটপাট করছি, উন্নয়ন করছি না। দেশে গণতন্ত্রের নামে চরম স্বৈরতন্ত্র, অত্যাচারী স্বৈরতন্ত্র চালছে বলেও মত দেন এই রাজনীতিক।
জিএম কাদের বলেন, কোনো কারণে যদি এই সরকার প্রধান পরিবর্তন হয়, কোনো কারণে...ন্যাচরাল ওয়েতেও যদি হয়, তখন চিন্তা করতে হয় সামনে দেশ কোথায় যাবে। তিনি আরো বলেন, আজকে আপনারা বাংলাদেশের কথাই চিন্তা করেন, ন্যাচরাল...মানুষ তো আমরা সবাই। বয়স হয়েছে, আজকে আছি-কালকে থাকব না। অসুস্থ হতে পারি, কাজে অকর্মন্য হতে পারি, মারাও যেতে পারি। তখন দেশ কোথায় যাবে? তাহলে এটা কীসের স্থিতিশীল? যদি কালকে হঠাৎ করে খবর হয়, তার পরে যদি দেশের মধ্যে আগুন লেগে যায়, চারপাশে মারামারি-কাটাকাটি শুরু হয় এটা কি স্থিতিশীল হলো?
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চাই এমন সরকার, যে সরকার পরিবর্তন হলেও দেশে স্থিতিশীলতা থাকবে। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, তাহলেই বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। তাহলেই মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারবে। বিদেশিরা আসবে, বিনিয়োগ করবে, তারা ব্যবসা করতে পারবে। এটাতে স্থিতিশীল অর্থনীতি তৈরি হবে। তিনি বলেন, আমরা অস্থিতিশীলতার বীজ বপন করে যাচ্ছি। আমরা উন্নয়নের নামে মানুষকে অত্যাচার করছি, উন্নয়নের নামে লুটপাট করছি, উন্নয়ন করছি না। আমরা গণতন্ত্রের নামে চরম স্বৈরতন্ত্র, অত্যাচারী স্বৈরতন্ত্র দেশে চালু করেছি। দেশকে এখান থেকে বাঁচাতে হবে। আমরা সে জন্য সামনের দিনে কাজ করতে চাই।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানবলেন, গণতন্ত্রের নামে দেশে অত্যাচারি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে দেশে নির্বাচনের নামে সিলেকশন চলছে। দেশের মানুষ ইলেকশনের নামে সিলেকশন চায় না। সংবিধান অনুযায়ী আইনকানুন ঠিক আছে কিন্তু ইলেকশনের নামে সিলেকশন হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতায় কেউ চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জার্মান ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র থেকে বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসিত দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান পদ্ধতিকে এগিয়ে নেয়াকে গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়া বলা যায় না।
জিএম কাদের আরো বলেন, উন্নয়নের নামে মানুষের ওপর অত্যাচার ও দেশে লুটপাট চলছে। অবকাঠামো উন্নয়ণ মানুষের উন্নয়ন নয়। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ণ। মানুষের ভোটাধিকারসহ সকল অধিকার নিশ্চিত হয় গণতন্ত্রে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। বৈষম্যের মাধ্যমে সরকার একটি শ্রেণী সৃষ্টি করেছে। অর্থ-সম্পদ দিয়ে তাদের ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে, তারা আইনের উর্ধে। মেগা প্রকল্পের নামে তারা দেশে লুটপাট চালিয়েছে। এদের কারেণই সাধারণ মানুষ খেয়ে পড়ে থাকতে পারছে না। তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে, তাদের বিভিন্ন অপবাদ দেয়া হচ্ছে। ৮ হাজার টাকা দিয়ে কিভাবে একটি পরিবার চলে? বিশ^বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারলে শ্রমিকদের রেশন দেয়া হোক, দ্রব্যমূল্যে কমিয়ে দেয়া হোক। যেনো দাশপ্রথা চলছে, ওরা মরে গেলে যাক, ওদের দিয়ে আমাদের ব্যবসা করতে হবে।
জিএম কাদের আরো বলেন, একটি দেশের বিচার বিভাগ সভ্যতা ও গণতন্ত্রের প্রতিক। সংবিধানে আইনের সমতার কথা বলা আছে। রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র কখনোই আইনের শাসন দিতে পারে না। এতে একটি গোষ্ঠি বা ব্যক্তি আইনের উর্ধে থাকে। নিউইয়ার্ক টাইমস কয়েকদিন আগে নিবন্ধ লিখেছে, বাংলাদেশে বিচারিক হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের দেশে হয়রানী করা হচ্ছে তা বিভিন্ন দেশে আলোচিত হচ্ছে। সংবিধানের ১০৯ ধারায় বলা আছে হাই কোর্টের অধিনে থাকবে অধিনস্থ আদালত বা ট্রাইবুন্যাল। আবার ১০৬ ধারায় বলা আছে তাদের প্রমোশন থেকে সব কিছু দেখবে দেশের প্রেসিডেন্ট। আবার, ৪৮ ধারা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট দুটি কাজ ছাড়া সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে হবে। তাই নিম্ন আদালত শতভাগ সরকার বা মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ, তাদের কোন স্বাধীনতা নেই। ৯৫ ধারা অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে। তাই, নিম্ন আদালত সম্পূর্ণ ও উচ্চ আদালতের প্রায় ৯৯ ভাগই সরকার প্রধানের (প্রধানমন্ত্রী) অধিনে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে আমাদের সংবিধান। এমন বাস্তবতায় আইন সবার জন্য সমান হতে পারে না।
জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি শেখ মুহাম্মহদ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভয় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু, কো চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম আব্দুল মান্নান, উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, এডভোকেট লিয়াকত আলী খান, এডভোকেট লাকী বেগম, আনিসুল ইসলাম মন্ডল, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, এডভোকেট জহিরুল হক জহির, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, মোঃ খলিলু রহমান খলিল প্রমূখ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস