ব্যাপক ধরপাড়কের মধ্যেও সরকার পতনে এক দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে মাঠে রয়েছে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীরা। আজ রোববার ভোর থেকে ৪র্থ দফায় টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের সমর্থনে গতকাল শনিবার মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ ও মিছিল করে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গ্রেফতার এড়াতে সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও মাঠ ছাড়ছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে তারা রাজপথে মিছিল, পিকেটিং অব্যাহত রেখেছেন। দলের নেতারা বলছেন, ধরপাকড় আর গণগ্রেফতার করে চলমান আন্দোলন থেকে নেতাকর্মীদের দূরে রাখা যাবে না। গণ আন্দোলনের মাধ্যমে জগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সহিংসতার পর থেকে চট্টগ্রামে পুলিশের গায়েবি মামলা আর গণগ্রেফতার অব্যাহত আছে। মহানগর জেলায় গতকাল পর্যন্ত অর্ধশত মামলায় ৭০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব মামলায় মহানগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
নগর বিএনপির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার মহাসমাবেশ, হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন থানায় শুক্রবার ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ইকবাল চৌধুরীসহ এ পর্যন্ত ৩৪০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সদরঘাট থানায় দায়ের করা মামলায় একই পরিবারের চার ভাইকে আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নগর বিএনপির আরো ২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিভিন্ন থানার মামলায় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে খোদা তোতন, মো. শাহ আলম, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল হাশেম, মনজুর আলম চৌধুরী মঞ্জু ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দীপ্তিসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া উত্তর রজলায় শুক্রবার রাতে হাটহাজারী থানায় দায়ের করা একটি মামলাসহ মোট মামলা হয়েছে ১৯টি। আর এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ২১০ জনেরও অধিক নেতাকর্মী। দক্ষিণ জেলায় ১৩টি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১৮০ জন নেতাকর্মী।
এদিকে শান্তিপূর্ণ অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের গণগ্রেফতার, মামলা ও গণবিরোধী আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। নেতৃবৃন্দ আজ ভোর থেকে শুরু হওয়া বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধ কর্মসূচি পুলিশের গণ গ্রেফতার উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম গতকাল এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপির নেতাকর্মীরা সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল সমাবেশের মধ্য দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
বন্দুমাত্র বল প্রয়োগ না করেই ধৈর্য্যরে সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচি সফল করছেন। জনগণ বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে দেখে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা আগের কায়দায় পেটোয়া বাহিনী পুলিশকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। ভূয়া, গায়েবি অভিযোগ তুলে পুলিশের সদস্যরা এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিরাতে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে, পরিবারের সদস্যদের অকথ্য নির্যাতন করছে। পুলিশের কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন ঘরে থাকতে পারছে না। পেলেই গ্রেফতার করে বিভিন্ন গায়েবি মামলার আসামি করে দিচ্ছে। সক্রিয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির সমর্থকরা পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, নিজেরাই যানবাহনে আগুন দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করছে পুলিশ। পুলিশের বাড়াবাড়ি নির্যাতন অতীতের যে কোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। পুরো চট্টগ্রামকে যেন একটি অবরুদ্ধ কারাগার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা পুলিশ বাহিনীর এ ধরনের আচরণের নিন্দা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে সরকারের অগণতান্ত্রিক নির্দেশে আপনারা যা করছেন, তা জাতি দেখছে। বাড়াবাড়ির পরিণাম অবশ্যই শুভ হতে পারে না। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আওয়ামী লীগের কর্মচারী নন। আপনারা আওয়ামী লীগের কর্মীর ভূমিকার অবতীর্ণ হবেন না। গায়েবি মামলা হামলা, গণগ্রেফতার নির্যাতন বন্ধ করুন। অন্যথায় জনতার আদালতে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।
বিএনপি নেতারা চট্টগ্রামবাসীকে ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনতাই বিএনপির আন্দোলনের শক্তি। বিএনপি নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের এ আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। আসুন, এই একদলীয় ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে আমরা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এই জুলুমের হাত থেকে চট্টগ্রামবাসীসহ দেশবাসীকে মুক্ত করতে আপনারা তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করুন। আমরা এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবোই।