ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি কারাগারগুলোতে
১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২০ এএম
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা সমাবেশ ঘিরে সহিংসতা, নাশকতা, পুলিশকে মারধর, পুলিশ সদস্য হত্যা ও চলমান অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নানা ঘটনায় ১৩১ মামলা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত ১৪ দিনে এসব মামলা দায়ের হয়েছে। গত ১৪ দিনে রাজধানীজুড়ে ১৮১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি। সর্বশেষ গত শুক্রবার ৩৯ জনকে ও এর আগের দিন ৯ নভেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অন্যদিকে বন্দী দিয়ে ঠাসা কারাগারগুলোতে সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার বন্দীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৩ হাজার হলেও ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে বন্দী আছেন প্রায় ৮৮ হাজার জন। এ বছরের সেপ্টেম্বরেও বন্দী ছিলেন ৭৭ হাজার। বিভিন্ন মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের মধ্যে গত দুই মাসে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে ১০ হাজার ৬০৯। ফলে কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত বন্দী রাখতে হচ্ছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের ডিসি মো. ফারুক হোসেন জানান, ২৮ অক্টোবর ৬৯৬ জন, ২৯ অক্টোবর ২৫৬ জন, ৩০ অক্টোবর ১৫৮ জন, ৩১ অক্টোবর ১৪১, ১ নভেম্বর ৯৬ জন, ২ নভেম্বর ৬০ জন, ৩ নভেম্বর ৫৮ জন, ৪ নভেম্বর ৩৭ জন, ৫ নভেম্বর ৫২, ৬ নভেম্বর ৮২, ৭ নভেম্বর ৬০, ৮ নভেম্বর ৪১, ৯ নভেম্বর ৩৭ ও ১০ নভেম্বর ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ১৩ হাজার ৪২১ হলেও বন্দীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৮১১, অর্থাৎ একজন বন্দী রাখার মতো জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৩ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৯৫০ জনের ধারণক্ষমতার বিপরীতে বন্দীর সংখ্যা ১৭ হাজার ২৩৫। সেখানে একজন বন্দীর জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৪৭ জনকে। রাজশাহীর কারাগারগুলোতে রাখা হয়েছে ১ জনের জায়গায় ৩ জনের বেশি বন্দী। দেশের ৬৮টি কারাগারে চিকিৎসকদের জন্য ১৪১টি অনুমোদিত পদ থাকলেও বাস্তবে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৬ জন। ফলে যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভারসহ নানা জটিল রোগ তো বটেই, এমনকি জ্বর, কাশি, চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা বন্দীরা বেশির ভাগ সময়ই পান না। নারীদের চিকিৎসার জন্য কারাগারে গাইনি চিকিৎসক নেই, ফলে নারী বন্দীদের শরীরে নানা রোগ নিয়েই কারাগারে থাকতে হয়। কারাবন্দীদের খাবার নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই খাবারটুকুও জোটে না কারাবন্দীদের। কারাগারের বন্দীদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য পণ্য লোপাটের কারণে বন্দীদের তিন বেলা যে খাবার দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত নিম্নমানের, পরিমাণেও থাকে কম। অবশ্য টাকা দিলে কিছুটা ভালো খাবার, ঘুমানোর জায়গা ও অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার শৌচাগার পাওয়া যায়।
রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলখানায় ৪ হাজার বিপরীতে বন্ধি সাড়ে ১৩ হাজার
এদিকে রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিভাগের কারাগারগুলোতে ঠাই নেই অবস্থা। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ কারাবন্দি হচ্ছে। এ বিভাগের আট জেলার কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার তিনগুনেরও বেশি বন্দি রয়েছে। এরমধ্যে মধ্যে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছে ধারণক্ষমতার চারগুন। এখানে দেড় হাজার বন্দি থাকার কথা থাকলেও রয়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। অনেক বন্দি থাকায় কারা কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে।
জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় বন্দি ধারণক্ষমতা চার হাজার ১৪৪ জন। কিন্তু বন্দির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। বেড়েছে নারী বন্দির সংখ্যাও। বন্দির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভাগের আট জেলার মধ্যে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। এক হাজার ৪৬০ জন। এ কারাগারে বর্তমান বন্দির সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। কিছু দিন আগে এই কারাগারে বন্দির সংখ্যা ছিল তিন হাজারের নিচে। এছাড়াও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪১ জনের বিপরীতে বন্দি নারীর সংখ্যা ১৮৫, যা ধারণক্ষমতার প্রায় সাড়ে চারগুণ। নাটোর জেলা কারাগারে ২০০ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে বন্দি রয়েছে এক হাজার ৮০ জন। নওগাঁ জেলা কারাগারের ধারণক্ষমতা ৫৫০ জন। কিন্তু এখানে বন্দি রয়েছে এক হাজার ৬০০ জনের বেশি। জয়পুরহাট জেলা কারাগারে ১২৭ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে বন্দি সংখ্যা ৭১৯ জন।
অপরদিকে, বগুড়া জেলা কারাগারের ধারণক্ষমতা ৭৮৫ জন হলেও বন্দির সংখ্যা দুই হাজার ২৬৭ জন। পাবনা কারাগারের ধারণক্ষমতা ৫৭১ জন। বন্দির সংখ্যা এক হাজার ৪০৯ জন। সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারের ধারণক্ষমতা ৬০০ জন হলেও বন্দি আছেন দেড় হাজারের বেশি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে ৫৮৬ জনের ধারণক্ষমতা। কিন্তু বন্দির সংখ্যা এক হাজারের বেশি।
কারাগারের কর্মকর্তারা জানান, আবাসন সমস্যা প্রকট। ফলে বন্দিদের রাখতে হচ্ছে ঠাসাঠাসি ও গাদাগাদি করে। বন্দিদের আবাসন, খাওয়া-দাওয়ার পরিবেশ দেওয়া যাচ্ছে না। গোসলের ব্যবস্থা ও শৌচাগারের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। রাজশাহী বিভাগের কারা উপ মহাপরিদর্শক কামাল হোসেন বলেন, আগে থেকেই কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার তুলনায় বন্দি বেশি। সাম্প্রতি বন্দির সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে এটি আমরা অস্বাভাবিক মনে করছি না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, কয়েদিদের বিরুদ্ধে কোনো রকম নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা বা তাদের কষ্টে রাখা যাবে না। এটা মানবিক বিষয়। জনসংখ্যা বেড়েছে আমাদের, সে তুলনায় কিন্তু কারাগার বাড়েনি। অপরাধ করলে যেমন আটক রাখা রাষ্ট্রের কাজ, তেমনি বন্দিদের জন্য মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। রাজশাহীর বেশ কয়েকজন আইনজীবী দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা বলেন, গণগ্রেফতার বেড়ে যাওয়ায় বন্দির সংখ্যাও বাড়ছে। আবার এমন সবব ধারা দেয়া হচ্ছে যাতে সহজেই জামিন মিলছেনা। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস