অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে দিনাজপুরের কৃষকরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। খাদ্যে উদ্বৃত্ত দিনাজপুর জেলায় ধান-গম-ভুট্টা-আম-লিচুর পাশাপাশি আগাম জাতের সবজি আবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক ফসল উঠতে না উঠতেই আরেকটি ফসলের বীজ রোপণ করছে কৃষক। এছাড়া বেড়েছে মাল্টা, কমলা, পেয়ারা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ভিনদেশী জাতের আমদানীযোগ্য ফসলের আবাদ। বাগান ভিক্তিক এসব ফসলের ফাঁকে ফাঁকে চলছে আগাম জাতের আলু, মাসকালাইসহ মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ। কৃষকদের এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দিনাজপুরের জমি তিন থেকে চার, অনেক এলাকায় ৫ ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। জেলার বেশিরভাগ জমি এখন আবাদ করা হচ্ছে সারা বছর। বিভিন্ন জাতের ফসল আবাদ করে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি উচ্চমূল্যের বাজারে ভোক্তারা কিছুটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, দিনাজপুর আম-লিচুর জন্য বিখ্যাত হলেও এই জেলায় ধানের উৎপাদন সর্বাধিক। উৎপাদিত ধান-চাল জেলার খাদ্য চাহিদা পূরন করে অন্যান্য এলাকায় পাঠানো হয়। গত দেড় যুগে দিনাজপুরে ধানের পাশাপাশি লিচুর আবাদ বেড়েছে অনেক বেশি। বর্তমানে দিনাজপুরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আম-লিচুর আবাদ হচ্ছে। লিচুর পর স্থান করে নিয়েছে মাল্টা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ভিনদেশীয় সুস্বাদু জাতের ফল। তিনি আরো জানান, সেতাবগঞ্জ সুগার মিলের অধিন্যাস্ত কান্তা ফার্মে পতিত প্রায় ১৭ একর জমির ড্রাগন ফল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।
এছাড়া, গত ৩ থেকে ৪ বছরে দিনাজপুরে ব্যাপকহারে আগাম সবজির আবাদ শুরু হয়েছে। অর্থাৎ মৌসুমের দেড় দুমাস আগেই ফুলকপি, বাধাকপি, সিম, লাউ, চিচিঙ্গা, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চলতি বছর শুধুমাত্র দিনাজপুর জেলাতেই আবাদ হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর জমি। কৃষকের চাহিদার প্রতি লক্ষ করে এবার ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মৌসুমের শেষ প্রান্তে সবজির দাম বেড়ে যায়। কিন্ত আগাম আবাদের কারণে দাম নিয়ন্ত্রিত থাকে। একই সাথে ভোক্তারা বছরের পুরো সময়ে কোন না কোন সবজি জাতীয় ফসলের স্বাদ পেয়ে থাকেন।
কৃষি বিভাগের মতে দিনাজপুরে মোট আবাদি জমির পরিমান ২ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে রয়েছে দুই ও তিন ফসলি জমি। আগাম ফসল আবাদের কারণে দুই ফসলিগুলো তিন ফসলি আর তিন ফসলি জমিগুলো চার ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। আগাম জাতের আমন ধান কেটে সেখানে আগাম জাতের আলু লাগানোর কারণে একটি জমি ১০ দিনও অনাবাদি হিসাবে পড়ে থাকে না।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়নের শিকারপুরের কৃষক পারভেজ জানান, কয়েকদিন আগেই এই জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছি। এখন লাগাচ্ছি কপি। পাশেই তার একটি চিচিঙ্গার ক্ষেত দেখিয়ে বললো জাঙ্গিতে ঝুলছে চিচিঙ্গা আর সাথে লাগিয়েছি মাষকালাই ডালের বীজ। কয়েকদিনের মধ্যে চিচিঙ্গা গাছ তুলে ফেললেই মাসকালাইয়ের ফলন দেখতে পাব। এর কিছু দূরেই দেখা গেল মাল্টা গাছের বাগানে হাইব্রিড আলু বীজ রোপণের দৃশ্য। এ ব্যাপারে কৃষক বলেন, মাল্টা গাছগুলো লাগানো হয়েছে তিন বছর আগে। ফল আসতে শুরু করেছে। এরই মাঝে লাগানো হচ্ছে হাইব্রিড জাতের আলু। এভাবেই চলছে কৃষিতে নিরব বিল্পব!