তফসিল নাটক বন্ধ করে পদত্যাগ করুন : রিজভী
১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
জনগণের দাবী উপেক্ষা করে এক তরফা নির্বাচন করার জন্য সরকার উন্মত্ত-উ™£ান্ত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে অবৈধভাবে তফসিল দেওয়ার পায়তারা শুরু করেছে। আমরা কঠোর ভাষায় হুশিয়ার করে দিতে চাই-এই তফসিল নাটক বন্ধ করুন। আগে পদত্যাগ করুন। কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে ক্ষমতা দিন। এই দলদাস আওয়ামী নির্বাচন কমিশন বাতিল করুন। তারপর তফসিল। দাবী না মানলে পরিণতি হবে ভয়ংকর। এই তফসিলে বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হবে না। কেয়ার টেকার সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না। জনগণ ৫৭ সেকেন্ডে নৌকা মার্কায় ৪৩টি সিল মারার কোন প্রহসনের পাতানো নির্বাচন বাংলাদেশের মাটিতে হতে দিবে না। গতকাল মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই ‘সোস্যাল হারমোনী ও ডেমোক্রোসীতে’ বিশ^াসী নয়। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘৃণার প্রচার ও প্রসারের সংস্কৃতি তৈরী করে। এজন্যই কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ, কূ-বাক্য ব্যবহার, টিপ্পনী কাটাসহ নানামাত্রার জুলুম ও নিষ্ঠুরতা নামিয়ে আনা হয় বিরোধী দলের উপর। কিন্তু এই জবরদস্তিমূলক দুঃশাসন যেকোন মূহুর্তে উলটে যেতে পারে সেটি আওয়ামী লীগ কখনো চিন্তা করেনা।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মিলিত বিবেকবোধের চাপ বোধ করেন না বলেই জ্যান্ত মানুষ ধরে আগুনে নিক্ষেপ করতে সন্ত্রাসী ভাষায় হুকুম দিচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার এই সহিংস হুংকারে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ চরম আতংকে পতিত হয়েছে। ইতিহাস এই স্বাক্ষ্য দেয় যে, আগুন সন্ত্রাস, ধ্বংসযজ্ঞ, গুম-খুন-ভাংচুর, সহিংসতার আতুরঘর আওয়ামী লীগ। আওয়ামী দুঃশাসনে পিষ্ট প্রতিবাদী মানুষকে নিশ্চিহ্ন এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করতে বরাবরই দলীয় ও রাষ্ট্রশক্তিকে দিয়ে সন্ত্রাস নাশকতার চালিয়ে আসছে। অপরাধ করে তারা, আর চাপিয়ে দেয় বিএনপির লোকজনের ওপর।
রিজভী বলেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, এখন গোটা পৃথিবীবাসী জানেন যে, আগুন দিয়ে গাড়ী পোড়ানো, সহিংসতা, গান পাউডার দিয়ে, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আওয়ামী লীগ। এবারো একদফার সংগ্রাম বানচাল করতে পুলিশের প্রটেকশনে আগুন সন্ত্রাসে আওয়ামী ক্যাডারদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান। যেমনটা তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে করেছে, বিভিন্ন সময় যেমন করেছে। এসময় তিনি বিগত দিনে যানবাহনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আগুন দেয়ার বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ১৯৭২ সালের পর থেকে যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভিন্নমত অবলম্বন করছে, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তাদেরও এভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছে। তখনও আগুন লাগানো হয়েছে ঘরে, বসতবাড়ীতে, কল-কারখানায়। একের পর এক পাটকল আগুনে ভস্মিভূত হয়েছে। তখনও বিরোধী দলকে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছে। শেষে একচ্ছত্র ক্ষমতা হাতে নিতে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সে ঘটনাগুলো জনগণ ভুলে যান নি। এই আওয়ামীলীগ ১৯৯১-১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। এছাড়া ২০০১-২০০৬ সাল সময়ে ১৩০ দিন হরতাল করে। বিএনপিকে এই মাফিয়া সরকার আগুন সন্ত্রাসী বলে অথচ ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে -বাংলাদেশে প্রথম বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারার সংস্কৃতি চালু করে জঙ্গি দল আওয়ামী লীগ। ২০০৪ সালের শুক্রবার ৪ জুন হোটেল শেরাটনের সামনে বিআরটিসির যাত্রীবাহী দ্বিতল বাসে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয় ১২ জন যাত্রীকে। পরদিন আওয়ামী লীগের হরতাল ছিলো। শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিম নিজের মুখে স্বীকার করেছিলেন যে, উপরের সরাসরি নির্দেশে তৎকালীন যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুবলীগের সেক্রেটারি মির্জা আজমের পরিকল্পনায় বিটিআরসির যাত্রীবাহী দ্বিতল বাসে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে ১২ জন নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিলো যুবলীগ। ওই ঘটনার পরপরই রমনা থানা পুলিশ একটি মামলা করে। শফিকুল ইসলাম কালু নামে যুবলীগ অফিসের এক পিওনকে গ্রেপ্তার করে সেও গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নানক, আজম ও সাঈদ খোকনসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার নাম বলেন যারা এর পরিকল্পনা করেছিলো। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সময় আন্দোলন নস্যাৎ করতে আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের লোক ও গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে বাসে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়েছে। ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, শেখ হাসিনা বলেন ‘খালেদা জিয়া মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। মূলতঃ হাসিনাই তার লোক দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে।’ আগুন সন্ত্রাসের সমস্ত ঘটনায় যে সরকারের লোকেরাই জড়িত সেটির অতীতে অনেক নজীর রয়েছে, তাদের লোকেরা সেটি স্বীকার করেছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘সেনা ছাউনিতে বসে বন্দুকের নল চেপে পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের ভোট কেড়ে নেবে আমরা তা মেনে নেবোনা। আমরা তা হতে দেবোনা। পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীকে বলতে চাই -আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। জনগণের বিরুদ্ধে বন্দুক তুলে ধরবেন না। বাংলার জনগণ তাহলে আপনাদের রেহাই দেবে না। সঙ্গে সঙ্গে বলতে চাই, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের পরিবার পরিজন পাকিস্তানে রেখে এসেছিল। কিন্তু আজকের পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীর আত্মীয়স্বজনরা বাংলার গ্রামে-গঞ্জে বাস করে। এদের আত্মীয়স্বজনদের ঠিকানা খুঁজে বের করুন, সতর্ক করে দিন। হুশিয়ার করে দিন। আর যদি এদেশের মানুষের বুকের উপর গুলি চালানো হয়, আর যদি এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান প্রতিশোধ নেবেন। লাশের পরিবর্তে লাশ চাই। আমি এই নির্দেশ দিচ্ছি’।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী, বিডিআর আর পুলিশকে হত্যার জন্য দলের নেতাকর্মীদের লাশের বদলে লাশ ফেলার নির্দেশ দিয়েছেলেন বর্তমানে তার চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজমান। তবুও বিএনপি কখনোই শেখ হাসিনার মতো প্রতিহিংসা এবং জিঘাংসার রাজনীতি কিংবা আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দেয়নি। অথচ, আওয়ামী লীগ নিজেদের এবং নিজেদের নেত্রীর সন্ত্রাসী চরিত্র ভুলে গিয়ে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত হয়েছে। কারন তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আরেকটি ভূয়া ভোট করে ক্ষমতা দীর্ঘাস্থায়ী করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত
‘একদল খাইছে আরেকদল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে’ কথাটি ছিল ভেরি জেনারেল: আজহারী
নোয়াখালীর মাইজদী হর্কাস মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে দিল জাবি ছাত্রদল
গরু চুরি করে বিএনপি নেতা ও তার স্ত্রীর ভূরিভোজ, অতঃপর...
মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ভাই আটক
থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সেই যুবদল নেতা গ্রেফতার
এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের